২৭ মার্চ, ২০২২ ০৮:০৬

পরনিন্দা শোনাও পাপ

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

পরনিন্দা শোনাও পাপ

আমরা সবাই জানি, গিবত বা পরনিন্দা মারাত্মক গুনাহের কাজ। তবু আমাদের কথার ভাঁজে সকাল-সাঁঝে পরনিন্দার রেশ থেকেই যায়। কেউ কেউ গিবত থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে সতর্ক থাকলেও গিবত শোনাও যে একটি বড় পাপ, সে সম্পর্কে আমরা উদাসীন। অথচ আরশে সমাসীন মহান আল্লাহ পরনিন্দাসহ সব ধরনের অনর্থক কথা শোনা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তারা যখন অনর্থক কথাবার্তা শোনে তখন তা থেকে বিমুখ হয় এবং বলে, ‘আমাদের আমল আমাদের জন্য, আর তোমাদের আমল তোমাদের জন্য। তোমাদের প্রতি ‘সালাম’। আমরা অজ্ঞদের সাহচর্য চাই না। ’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৫৫)
মহান আল্লাহ আমাদের যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো দিয়েছেন, সেগুলোর কিছু হক আছে, আর তা হলো সেগুলোকে আল্লাহর নাফরমানিতে ব্যবহার না করা। কিয়ামতের দিন এগুলোর ব্যবহারের ব্যাপারেও জিজ্ঞাসা করা হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে বিষয় তোমার জানা নেই তার অনুসরণ কোরো না। নিশ্চয় কান, চোখ ও অন্তঃকরণ—এদের প্রতিটির ব্যাপারে সে জিজ্ঞাসিত হবে। ’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৬)

তাই কেউ আমাদের সামনে এসে কোনো গুনাহের কথা কিংবা পরনিন্দা ইত্যাদি করলে আমাদের উচিত তাদের এড়িয়ে চলা। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যখন তুমি তাদেরকে দেখো, যারা আমার আয়াতসমূহের ব্যাপারে উপহাসমূলক সমালোচনায় রত আছে, তুমি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও, যতক্ষণ না তারা অন্য কথাবার্তায় লিপ্ত হয়। আর যদি শয়তান তোমাকে ভুলিয়ে দেয়, তবে স্মরণের পর জালিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে বোসো না। ’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৬৮)

আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.)-এর সামনে কেউ কারো ব্যাপারে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু বলতে চাইলে তিনি প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে দিতেন এবং ওই ভাইয়ের সম্মান বাঁচানোর চেষ্টা করতেন। ইতিবাচক কথা বলতেন। ইতবান ইবনে মালিক (রা.) বলেন, একবার রাসুল (সা.) সকালে আমার কাছে এলেন। তখন এক লোক বলল, মালিক ইবনে দুখশুন কোথায়? আমাদের এক ব্যক্তি বলল, সে তো মুনাফিক; সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে ভালোবাসে না। তা শুনে রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা কি এ কথা বলোনি যে, সে আল্লাহর সন্তুষ্টি চেয়ে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে। তারা বলল, হ্যাঁ। তিনি বলেন, যেকোনো বান্দা কিয়ামতের দিন ওই কথা নিয়ে উপস্থিত হবে, আল্লাহ তার ওপর জাহান্নাম হারাম করে দেবেন। (বুখারি, হাদিস : ৬৯৩৮)

তা ছাড়া পরনিন্দা করার মাধ্যমে নিন্দিত ব্যক্তির সম্মান হানি করা হয়, তাকে খাটো করার চেষ্টা করা হয়, যে ব্যক্তি পরনিন্দাকারীকে যেকোনোভাবে তা থেকে বিরত করবে, এবং যার নিন্দা করা হচ্ছিল তার সম্মান রক্ষার্থে ইতিবাচক কথা বলে তার সম্মান রক্ষার চেষ্টা করবে, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তাকে পুরস্কৃত করবেন। আবুদ দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, যে লোক তার কোনো ভাইয়ের মান-সম্মানের ওপর আঘাত প্রতিরোধ করে, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তাআলা তার মুখমণ্ডল হতে জাহান্নামের আগুন প্রতিরোধ করবেন। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৩১)

আমাদের সবার উচিত পরনিন্দা থেকে বিরত থাকা, কেউ অন্যের পরনিন্দা করলে তা শোনা থেকেও বিরত থাকা।


বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর