সিরাত বিষয়টি সাধারণভাবে ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত। তবে ওলামায়ে কেরামের কাছে সিরাত শাস্ত্র অধ্যয়ন ও রচনার নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি হচ্ছে বিশুদ্ধতা যাচাইয়ের শাস্ত্রীয় মূলনীতির আলোকে গবেষণা করা। বিশেষ করে সিরাতের ঘটনাবলি থেকে আহকাম বিধি-বিধান বের করা একটি স্বতন্ত্র বিষয়। এর নিজস্ব উসুল ও মূলনীতি রয়েছে। তাই এসব ক্ষেত্রে উসুল ও মূলনীতি অনুসরণ করা একান্ত জরুরি। সিরাতে রসুল (সা.) সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানার্জন, গবেষণা ও যথার্থ অনুসরণের জন্য কয়েকটি বিষয় খুব গুরুত্বের সঙ্গে দাবি রাখে, সিরাতের জ্ঞান সঠিক সূত্রের মাধ্যমে গ্রহণ করা। সঠিক বিষয়টি সঠিকভাবে বোঝা ও উপলব্ধি করা। রসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ জীবনে বাস্তবায়নের আগ্রহ নিয়ে সিরাত অধ্যয়ন করা। তিনি তাঁর পরিচয় যেভাবে পেশ করেছেন সেভাবে তাকে বোঝা এবং এভাবেই তাঁকে উপস্থাপন করা। এভাবে সিরাত অধ্যয়ন পাঠককে যাবতীয় পদস্খলন থেকে মুক্তি দেবে। সঠিক ইমান, আকিদার ওপর অটল থাকার পথে সহযোগিতা করবে। শরিয়তের বিধি-বিধান যথাযথভাবে পালনে অনুপ্রেরণা জোগাবে। মুসলিম উম্মাহর সার্বিক উত্তরণের জন্য হবে অন্যতম উপায়, সর্বোত্তম পথ ও পাথেয়। মহানবী (সা.) সম্পর্কে এবং ইহ ও পরকালের কল্যাণজনক বিষয়ে সাহাবায়ে কেরামের জানার কৌতূহল এবং আগ্রহের প্রমাণ হাদিস গ্রন্থে জ্বলন্ত সাক্ষী হয়ে আছে (সহিহ মুসলিম)। তাদের এই আগ্রহ ও কৌতূহলে আমাদের জন্য সিরাত অধ্যয়নের ক্ষেত্রে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কী হবে এর সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তাই সিরাত পড়ুন আর ভেবে দেখুন, নবীজি (সা.) আসলে কেমন ছিলেন? কোন আদর্শবলে তিনি তাঁর মিশনে সফল হয়েছিলেন। ভাবুন তো, মাত্র ২৩ বছরের ব্যবধানে তাঁর লক্ষাধিক অনুসারী। তদানীন্তন বিশ্ব পরাশক্তি ছিল তাঁর সামনে অবনত। হাজার বছরের যুদ্ধ, হানাহানি পরিহার করে সব মানুষ একই পতাকা তলে সমবেত হয়েছিল। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সমাজ ব্যবস্থায় অন্যায় নেই, নিপীড়ন নেই, নেই প্রতিশোধের জঘন্য প্রবণতা। কী ছিল রহস্য? কী ছিল সেখানে দিন বদলের ম্যাজিক? রসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনী উল্টাতে থাকলে প্রতিটি পর্ব অপেক্ষা করবে অলৌকিক চমক। যিনি বলে দিচ্ছেন পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন কেমন হবে। কেমন হবে ব্যক্তিগত চাল-চলন, রীতি-নীতি ও অভ্যাস-আচরণ। একটি মানুষ কীভাবে ঘুমাবে, কীভাবে ঘুম থেকে উঠবে, টয়লেটে কীভাবে যাবে, কীভাবে বের হবে, কীভাবে পানাহার ও আপ্যায়ন করবে, দাঁত কীভাবে মাজতে হবে, স্ত্রী-সন্তান, বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীর সঙ্গে কেমন আচরণ হবে। নবীজি (সা.) লোকদের উপদেশ করতেন। কখনো কখনো তাদের সঙ্গে রসিকতা করতেন। বাচ্চাদের তিনি অনেক আদর-সোহাগ করতেন। তাঁর মধ্যে ইহজগতের কোনো অস্থিরতা ছিল না। শুধু উম্মতের চিন্তায় তিনি অস্থির থাকতেন। নবীজি (সা.)-এর সিরাত পড়লে আপনি এসবই পাবেন। পড়ুন আর ভেবে দেখুন! একজন মানুষ সব সামলাচ্ছেন, সংসার, ঘর আত্মীয়স্বজন, সাহাবি, নবুওয়াতের দায়িত্ব ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তিনি যুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন। রাত জেগে ইবাদত করছেন। এসব হলো সিরাতে রসুল। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা পড়ে যারা তাঁর অনুসারী হওয়ার দাবি করছে, তাঁর জীবনের কোনো একটা অংশ আলোচনা করে নবী প্রেমিকের প্রমাণ দিচ্ছে, নবীজির সিরাত তাদের পূর্ণাঙ্গভাবে অধ্যয়নের প্রয়োজন। প্রয়োজন সিরাতে রসুল (সা.) নিয়ে ভাবা, গবেষণা করা এবং তা জীবনে বাস্তবায়ন করা।
লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ