আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের বিভিন্ন রূপ ধারণের শক্তি দিয়েছেন। ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহ ফেরেশতা ও জিন জাতিকে ভিন্ন ভিন্ন রূপধারণের শক্তি দিয়েছেন। যদিও সৃষ্টিগতভাবে তাদের নিজস্ব আকৃতি ও অবয়ব আছে, যে অবয়বে আল্লাহ তাদের সৃষ্টি করেছেন। ’ (আল-মুফহাম : ৬/১৭২)
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন, ‘ফেরেশতারা সূক্ষ্ম দেহের অধিকারী।
তাদের বিভিন্ন আকৃতি ধারণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ’ (ফাতহুল বারি : ৬/৩০৬)
মানুষের আকৃতিতে জিবরাইল : ঈসা (আ.)-এর মা মারিয়ামের কাছে জিবরাইল (আ.) মানবাকৃতিতে উপস্থিত হয়েছিলেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বর্ণনা কোরো এই কিতাবে উল্লিখিত মারিয়ামের কথা, যখন সে তার পরিবার থেকে পৃথক হয়ে নিরালায় পূর্ব দিকে এক স্থানে আশ্রয় নিল। অতঃপর তাদের থেকে সে পর্দা করল। আমি তার কাছে আমার রুহকে পাঠালাম। সে তাঁর কাছে পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করল। মারিয়াম বলল, আল্লাহকে ভয় কোরো, যদি তুমি আল্লাহভীরু হও। আমি তোমার ব্যাপারে দয়াময়ের আশ্রয় কামনা করছি। ’ (সুরা মারিয়াম, আয়াত : ১৬-১৮)
মানবাকৃতিতে অন্য ফেরেশতারা : শুধু জিবরাইল (আ.) নয়, বরং অন্য ফেরেশতারাও মানবাকৃতিতে নবীদের কাছে আগমন করেছেন। যেমন ইবরাহিম (আ.)-এর ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমার ফেরেশতারা সুসংবাদ নিয়ে ইবরাহিমের কাছে এলো। তারা বলল, সালাম। সেও বলল, সালাম। সে অবিলম্বে এক কাবাবকৃত গো-বৎস নিয়ে এলো। ’ (সুরা হুদ, আয়াত : ৬৯)
লুত (আ.)-এর ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতারা লুতের কাছে এলো, তখন তাদের আগমনে সে বিষণ্ন হলো এবং নিজকে তাদের রক্ষায় অসমর্থ মনে করল এবং বলল, এটা এক নিদারুণ দিন। ’ (সুরা হুদ, আয়াত : ৭৭)
কোরআনের ব্যাখ্যাকাররা বলেন, ফেরেশতারা লুত (আ.)-এর গোত্রকে পরীক্ষা করার জন্য সুদর্শন যুবকদের আকৃতিতে উপস্থিত হয়েছিল। কেননা তারা নারীর পরিবর্তে পুরুষের প্রতি যৌনাকাঙ্ক্ষা অনুভব করত, যা এক জঘন্য পাপ।
ফেরেশতারা মানবাকৃতিতে আসত কেন? : হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন, ‘ফেরেশতা মানবাকৃতিতে হাজির হতো। কেননা মানুষ মানবীয় দুর্বলতার কারণে ফেরেশতাদের স্বরূপে দেখতে সক্ষম নয়। তবে রাসুলুল্লাহ (সা.) জিবরাইল (আ.)-কে স্বরূপে দুবার দেখেছেন। (ফাতহুল বারি : ৬/৯)
সাধারণ মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ : ফেরেশতারা যখন ভিন্ন আকৃতিতে এসেছে, তখন তাদের নবী-রাসুলগণ ছাড়াও সাধারণ মানুষ দেখতে পেয়েছে। যেমন সহিহ মুসলিমে (হাদিসে জিবরাইল) এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে একবার অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির আবয়বে আগমন করেন এবং তাঁকে প্রশ্ন করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রশ্নের উত্তর দেন। অতঃপর বলেন, নিশ্চয়ই এই ব্যক্তি হলো জিবরাইল। তিনি তোমাদের দ্বিন শেখাতে আগমন করেছিলেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১)
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন