১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০৮:১১

দ্বিনি জ্ঞান অন্বেষীর জন্য প্রাণিজগতের দোয়া

জাওয়াদ তাহের

দ্বিনি জ্ঞান অন্বেষীর জন্য প্রাণিজগতের দোয়া

দ্বিনি জ্ঞান অন্বেষণকারীর অনেক মর্যাদা আছে। কোরআন ও হাদিসে তাদের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। একটি দীর্ঘ হাদিসে এসেছে। কাসির ইবনে কায়স (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি আবুদ দারদা (রা.)-এর সঙ্গে দামেশকের মসজিদে বসা ছিলাম। তখন তার কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আবুদ দারদা, আমি একটি হাদিসের জন্য সুদূর মদিনাতুর রাসুল (সা.) থেকে এসেছি। জানতে পারলাম, আপনি রাসুলুল্লাহর (সা.) সূত্রে হাদিস বর্ণনা করেন। এ ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে আমি আসিনি। আবুদ দারদা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের জন্য কোনো পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তার পরিবর্তে তাকে জান্নাতের পথসমূহের মধ্যে কোনো একটি পথে পৌঁছে দেন। ফেরেশতারা জ্ঞান অন্বেষণকারীর সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের ডানা বিছিয়ে দেন। জ্ঞানীর জন্য আসমান ও জমিনে যারা আছে তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও দোয়া প্রার্থনা করে, এমনকি পানির গভীরে বসবাসকারী মাছও। আবেদ (সাধারণ ইবাদতগুজার) ব্যক্তির ওপর আলেমের ফজিলত হলো যেমন সমস্ত তারকার ওপর পূর্ণিমার চাঁদের মর্যাদা। জ্ঞানীরা হলেন নবীদের উত্তরসূরি। নবীরা কোনো দিনার বা দিরহাম মিরাসরূপে রেখে যান না; তাঁরা উত্তরাধিকার সূত্রে রেখে যান শুধু ইলম। সুতরাং যে ইলম অর্জন করেছে সে পূর্ণ অংশ গ্রহণ করেছে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩৬৪১)

উল্লিখিত হাদিসে বলা হয়েছে যে প্রাণিজগৎ ইলম অন্বেষণকারীর জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে। প্রশ্ন হচ্ছে, ফেরেশতারা তাদের ডানা বিছিয়ে দেয় ইলমের মর্যাদা অনুভব করে। সে জন্য তালিবের ইলমের সম্মানার্থে তাদের ডানাকে বিছিয়ে দেয়। কিন্তু মাছ বা অন্যান্য পশু-পাখি, এগুলো কেন ক্ষমা প্রার্থনা করে? এর জবাব হচ্ছে, মাছের ভেতরেও আল্লাহ তাআলা এই অনুভূতি সঞ্চার করে দিয়েছেন যে তালিবুল ইলম তাদের জন্য কল্যাণকামী। কারণ ইলম অন্বেষণকারী এই ইলমের মাধ্যমে বৈধ-অবৈধ, ভালো-মন্দ চিহ্নিত করতে পারে। আর আল্লাহ তাআলা মানুষকে আদেশ করেছেন সব প্রাণীর প্রতি দয়াপরবশ হওয়ার জন্য। এমনকি জবাইকৃত প্রাণী ও মাছের প্রতিও যেন দয়া করা হয়।

শাদ্দাদ ইবনে আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাআলা সবার ওপর সদয় আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। তোমরা যখন হত্যা করবে, তখন উত্তমরূপে হত্যা করবে। আর যখন তোমরা জবাই করবে, তখন উত্তমরূপে জবাই করবে। তোমাদের ছুরি ধারাল করবে এবং জবেহকৃত জন্তুকে ঠাণ্ডা হতে দেবে। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৪৪১১)

যেহেতু আহলে ইলম ইলমের কারণে তাদের প্রতি এক ধরনের দয়া করে থাকে। বোঝা যায়, ইলমের উপকার ব্যাপক। এ জন্য তারাও ইলম অন্বেষণকারীর জন্য মাগফিরাতের দোয়া করে। আর যদি মানুষের মধ্যে ইলম না থাকত, মানুষ চতুষ্পদ প্রাণীর মতো হয়ে যেত। তখন তাদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন আরো বেড়ে যেত। যত দিন কোরআনের ঐশী আলো পৃথিবীতে বহাল থাকবে, তত দিন শান্তি, সাম্য বহাল থাকবে। তাই কুল-মাখলুক নিজের কল্যাণেই তাঁদের জন্য দোয়া করে থাকে। (মুখতাসারু মিনহাজিল কাসিদিন)

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

সর্বশেষ খবর