১৮ নভেম্বর, ২০২৩ ০৭:০৪

কুফরি ও শিরক কী?

মো. আমিনুল ইসলাম

কুফরি ও শিরক কী?

প্রতীকী ছবি

ইবনু ফারিস (রা.) থেকে বর্ণিত, ইমান বা বিশ্বাসের বিপরীত অবিশ্বাসকে কুফর বলা হয়। কারণ ‘অবিশ্বাস’ অর্থ সত্যকে আবৃত করা। মিথ্যারোপ করা হলো কুফরি। ইসলামী পরিভাষায় বিশ্বাসের অবিদ্যমানতাই হলো কুফর বা অবিশ্বাস। নবী-রসুলরা তাওহিদের চূড়ান্ত পর্যায়ে মানুষকে এক আল্লাহর ইবাদত করার জন্য দাওয়াত দিয়েছেন এবং তাঁর একত্ববাদের ওপর বিশ্বাস স্থাপনের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন কিন্তু অনেকেই এতে অবিশ্বাস স্থাপন করেছে। এটাই হলো কুফরি এবং যুগে যুগে অধিকাংশ কাফেরই এ প্রকারের কুফরে নিপতিত হয়েছে।

আল্লাহ ও তাঁর রসুলের ওপর এবং ইমানের রুকনগুলোতে বিশ্বাস না থাকাকেই ইসলামের পরিভাষায় কুফর বলে। আল্লাহ রব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করে অথবা তাঁর নিকট হতে আগত সত্যকে অস্বীকার করে, তার চেয়ে অধিক জালিম আর কে হতে পারে? জাহান্নামই কি কাফেরদের আবাসস্থল নয়?’ (সুরা আনকাবুত-৬৮)।

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন ছাড়া অন্য কাউকে কোনো বিষয়ে তাঁর সমতুল্য বা সমকক্ষ বা তুলনীয় বলে বিশ্বাস করার মাধ্যমে যে কুফরি হয় তাই শিরক। একটি শিরকি কাজ ইমান ও আমল নিষ্ফল করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী তোমার কাছে এবং সেসব নবীর কাছেও,- যারা তোমার আগে অতিবাহিত হয়ে গেছে। এ মর্মে ওহি পাঠানো হয়েছে, যদি তুমি আল্লাহতায়ালার সঙ্গে অন্যদের শরিক কর তাহলে অবশ্যই তোমার সব আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং তুমি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের দলে শামিল হবে’ (সুরা জুমার-৬৫)।

কুফর সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহকে অস্বীকার করেছে তাদের জন্য রয়েছে নিশ্চিত ধ্বংস, তিনি তাদের সব কর্ম বিনষ্ট করে দেবেন’ (সুরা মোহাম্মদ-৮)। সালাত, জাকাত, সিয়াম, ইত্যাদি ফরজ হওয়া অস্বীকার করা, ব্যভিচার, চুরি, হত্যা ইত্যাদির হারাম হওয়া অস্বীকার করা, সালাতের রাকাত, সময়, সিজদা, রুকু ইত্যাদির পদ্ধতির অস্বীকার বা ব্যতিক্রম করা সবই কুফর। তবে অজ্ঞাত কারণে করলে তা ওজর বলে গণ্য হবে। মনে রাখতে হবে ইসলামের প্রতি অসন্তুষ্ট থাকা, আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান অপছন্দ করা, বিরক্তি বা ঘৃণা প্রকাশ করা কুফরের অন্তর্গত। 

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তুমি যখন এমন সব লোককে দেখতে পাও যারা আমার আয়াতসমূহ নিয়ে হাসি-বিদ্রুপ করছে তখন তুমি তাদের কাছ থেকে সরে এসো যতক্ষণ না তারা অন্য কথায় মনোনিবেশ করে। যদি কখনো শয়তান তোমাকে ভুলিয়ে ওখানে বসিয়ে রাখে, তাহলে মনে পড়ার পর তুমি জালেম সম্প্রদায়ের সঙ্গে আর বসে থেক না’ (সুরা আল আনআম-৬৮)। বিশ্বাসগতভাবে আল্লাহর সঙ্গে ইবাদতের ক্ষেত্রে অন্য কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে আল্লাহর অংশীদার বা সমতুল্য বা সমান বানানোকে শিরক বলে। রব হিসেবে আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করাই হলো শিরক। আল্লাহ সব অন্যায় ক্ষমা করলেও তাঁর সঙ্গে কাউকে শিরক করাকে কখনোই ক্ষমা করবেন না।

শিরকের ভয়াবহতা সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা এ বিষয়টি কখনো ক্ষমা করবেন না যে, তাঁর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করা হবে, এ ছাড়া অন্য সব গুনাহ তিনি যাকে ইচ্ছা করেন তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার সঙ্গে কাউকে শরিক করল সে চরমভাবে গোমরাহ হয়ে গেল’ (সুরা নিসা-১১৬)। ‘হে বনী ইসরাইল, তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর, যিনি আমারও রব, তোমাদেরও রব, অবশ্যই যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শরিক করবে, আল্লাহতায়ালা তার ওপর জান্নাত হারাম করে দেবেন আর তার স্থায়ী ঠিকানা হবে জাহান্নাম, এই জালেমদের সেদিন কোনো সাহায্যকারীই থাকবে না’ (সুরা আল মায়েদা-৭২)। 

কোরআনের ভাষায় শিরক হলো কাউকে আল্লাহর সঙ্গে সমতুল্য করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতএব তোমরা জেনেশুনে কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ বানাবে না’ (সুরা বাকারা-২২)। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমি রসুল (সা.)-কে প্রশ্ন করলাম, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে কঠিন পাপ কী? তিনি বললেন, সবচেয়ে কঠিন পাপ হলো- তুমি আল্লাহকে কারও সমকক্ষ বানাবে অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন’ (বুখারি)। কুফর ও শিরক পরস্পর অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। কাউকে কোনোভাবে বা কোনো বিষয়ে মহান আল্লাহর সমকক্ষ বা তুলনীয় মনে করার অর্থই তাঁর একত্বে অবিশ্বাস বা কুফরি করা। লোক দেখানো ইবাদতকে রসুল (সা.) লুকায়িত শিরক বলে আখ্যায়িত করেছেন। 
আমাদের সমাজে আমরা যা এখন বেশি করি। মানুষকে দেখানোর জন্য মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায়, লোক দেখানোর জন্য দান সদাকা, প্রশংসা পাওয়ার জন্য ভালো কাজ করছি যা শিরকের সমতুল্য। কারণ এর ভিতর লুকিয়ে আছে রিয়া। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টির জন্য তোমাদের জন্য ভয় পাই তা হলো, ক্ষুদ্রতর শিরক বা শিরকে আসগার। সাহাবিগণ প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহর রসুল শিরকে আসগার কী? তিনি বললেন, রিয়া বা লোক দেখানো ইবাদাত। কিয়ামতের দিন যখন মানুষদের তাদের কর্মের প্রতিফল দেওয়া হবে তখন আল্লাহতায়ালা এদের বলবেন, তোমরা যাদের দেখানোর জন্য এসব করতে (ইবাদত, দান, সদাকা, জনকল্যাণমূলক কাজ ইত্যাদি) তাদের কাছে যাও। দেখ তাদের কাছে তোমাদের পুরস্কার পাও কি না (আহমদ, আল মুসনাদ)।

আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে কুফর ও শিরক বোঝার তৌফিক দান করুন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর