আমরা সবাই আল্লাহ তাআলার বান্দা। তিনি আমাদের রব। আমাদের সৃষ্টিকর্তা। রহমান আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়া মুমিনের অনন্য বৈশিষ্ট্য।
আল্লাহ তাআলার প্রকৃত বান্দা সে, যে তার বিশ্বাস, চিন্তাধারা, তার প্রতিটি ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষা পালনকর্তার আদেশের অনুগামী করে রাখে এবং যখন যে আদেশ হয়, তা পালনের জন্য সদা প্রস্তুত থাকে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘রহমানের প্রিয় বান্দা তারা, যারা জমিনে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং অজ্ঞলোক তাদের (অজ্ঞতাসুলভ) কথা বললে তারা সালাম তথা শান্তিপূর্ণ কথা বলে এড়িয়ে যায়। যারা রাত অতিবাহিত করে নিজ প্রতিপালকের সামনে (কখনো) সিজদাবনত হয়ে এবং (কখনো) দণ্ডায়মান অবস্থায়। যারা বলে, হে আমাদের রব, জাহান্নামের আজাব থেকে আমাদের দূরে রাখুন।
নিশ্চয়ই তাঁর আজাব সদা সংলগ্নি। নিশ্চয়ই তা আবাসস্থল ও বাসস্থান হিসেবে অতি নিকৃষ্ট। আর তারা যখন ব্যয় করে- অপব্যয় ও কার্পণ্য করে না, তাদের ব্যয় হয় ভারসাম্যমান। এবং যারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কারো ইবাদত করে না।আল্লাহ যে প্রাণকে মর্যাদাবান করেছেন, অন্যায়ভাবে তা হত্যা করে না এবং তারা ব্যভিচারেও লিপ্ত হয় না। যে ব্যক্তিই এরূপ করবে তাকে তার গুনাহের (শাস্তির) সম্মুখীন হতে হবে।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ৬৩-৬৮)
অন্য আয়াতে এসেছে, ‘আর (রহমানের বান্দা তারাও) যারা অন্যায় কাজে লিপ্ত হয় না এবং যখন কোনো বেহুদা কার্যকলাপের কাছে দিয়ে যায়, তখন আত্মসম্মান বাঁচিয়ে চলে যায়। যখন তাদের রবের আয়াত দ্বারা তাদের উপদেশ দেওয়া হয়, তখন তারা বধিরের মতো আচরণ করে না। যারা (এই) বলে (দোয়া করে) হে রব! আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের বানাও আমাদের নয়নপ্রীতিকর এবং আমাদের বানাও মুত্তাকিদের নেতা।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ৭২-৭৪)
রহমান আল্লাহর বিশেষ বান্দাদের পুরস্কারের কথাও বর্ণিত হয়েছে পবিত্র কোরআনে। ইরশাদ হয়েছে, ‘এরাই তারা, যাদের সবরের প্রতিদানস্বরূপ জান্নাতের সুউচ্চ প্রাসাদ দেওয়া হবে এবং সেখানে শুভেচ্ছা ও সালামের মাধ্যমে তাদের অভ্যর্থনা করা হবে। তারা স্থায়ী জীবন লাভ করবে। আবাসস্থল ও বাসস্থান হিসেবে তা কতই না উত্তম।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ৭৫-৭৬)
উল্লিখিত আয়াতগুলোতে আল্লাহ তাআলার প্রকৃত ও প্রিয় বান্দাদের ১৩টি গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এক. তারা আল্লাহর প্রকৃত (প্রিয়) বান্দা।
দুই. যারা জমিনে নম্রভাবে চলাফেরা করে। তারা অহংকারী ও দাম্ভিক নয়।
তিন. যারা মূর্খলোকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ‘সালাম’ তথা (শান্তিপূর্ণ কথা) বলে এড়িয়ে যায়।
চার. যারা রাত যাপন করে তাদের রবের সামনে সিজদাবনত হয়ে এবং দণ্ডায়মান অবস্থায়। অর্থাৎ রাত জাগরণ করে ইবাদতের ভেতর দিয়ে রাত কাটায়।
পাঁচ. যারা আল্লাহর ভয় ও আখিরাতের চিন্তায় ইবাদতে মশগুল থাকে এবং আল্লাহর কাছে পানাহ চায়।
ছয়. আল্লাহর প্রিয় বান্দারা ব্যয় করার সময় অপব্যয় করে না এবং কৃপণতা ও ত্রুটিও করে না; বরং উভয়ের মধ্যবর্তী সমতা বজায় রাখে।
(উল্লিখিত ছয়টি গুণের মধ্যে আনুগত্যের মূলকথা এসেছে। সামনে গুনাহ ও অবাধ্যতার প্রধান কয়েকটি বিষয়ের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। প্রথমে বিশ্বাস ও কর্মের তিনটি বড় গুনাহ সম্পর্কে।)
সাত. তারা ইবাদতে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করে না। কেননা, শিরক সর্ববৃহৎ গুনাহ। আল্লাহ সব কিছু ক্ষমা করলেও শিরক ক্ষমা করবেন না।
আট. তারা কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে না।
নয়. তারা জিনা ও ব্যভিচারে লিপ্ত হয় না।
দশ. তারা মিথ্যা ও বাতিল মজলিসে যোগদান করে না। মিথ্যা চর্চাকেন্দ্র এবং অনর্থক আলোচনার আসর থেকেও আল্লাহর প্রিয় বান্দারা বিরত থাকেন।
এগারো. যারা কোনো অন্যায় বা বেহুদা কার্যকলাপের কাছে দিয়ে অতিক্রম করলে আত্মসম্মান বাঁচিয়ে গাম্ভীর্যপূর্ণ হয়ে ভদ্রতার সঙ্গে চলে যায়।
বারো. তাদের আখিরাতের কথা স্মরণ করানো হলে, তখন তারা এসবের প্রতি অন্ধ ও বধিরদের মতো আচরণ করে না, বরং শ্রবণশক্তি ও অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষের মতো এ নিয়ে চিন্তাভাবনা করে এবং তদনুযায়ী আমল করে।
তেরো. যারা নিজ সন্তান-সন্ততি ও স্ত্রীদের জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করে, হে মাবুদ, তাদের আমাদের চক্ষু শীতলের উপকরণ বানাও।
এই হলো আল্লাহর বিশেষ ও প্রিয় বান্দাদের বিশেষ গুণাবলি। মহান আল্লাহ আমাদের রহমান আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার তাওফিক দান করুন।