ইনশাআল্লাহ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ যদি আল্লাহ চান। কথোপকথনে এটি ব্যবহার করা মহান আল্লাহর নির্দেশ। মুসলমানদের আলাদা এক সভ্যতা-সংস্কৃতি।
কিন্তু বর্তমানে এই শব্দের ভুল ব্যবহার প্রকট আকার ধারণ করেছে। এখানে ইনশাআল্লাহ শব্দ নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো :
কোরআনে ইনশাআল্লাহর ব্যবহারপবিত্র কোরআনে ইনশাআল্লাহ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে । মুসা (আ.) যখন খিজির (আ.)-এর শিষ্যত্ব গ্রহণের দরখাস্ত পেশ করেন। তখন খিজির (আ.) বলেন, আমি নিশ্চিত যে আমার সঙ্গে থাকার ধৈর্য আপনার নেই।
আর যে বিষয়ে আপনি পরিপূর্ণ জ্ঞাত নন, তাতে আপনি ধৈর্য রাখবেন বা কিভাবে? মুসা (আ.) বলল, ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আমি আপনার কোনো হুকুম অমান্য করব না। (সুরা : কাহফ, আয়াত : ৬৭–৬৯)
কোরবানির ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ণনা প্রসঙ্গে কোরআনে এসেছে, অতঃপর সে পুত্র যখন ইবরাহিমের সঙ্গে চলাফেরা করার উপযুক্ত হলো, তখন সে বলল, ‘হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে তোমাকে জবেহ করছি। এবার চিন্তা করে বলো তোমার অভিমত কী? পুত্র বলল, আব্বাজান, আপনাকে যা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আপনি সেটাই করুন। ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীল হিসেবে পাবেন।’ (সুরা : সাফফাত, আয়াত : ১০২)
হাদিসে ইনশাআল্লাহর ব্যবহার
হাদিসে ইনশাআল্লাহ শব্দ ব্যবহারের গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, সুলাইমান ইবনে দাউদ (আ.) বলেছেন, আজ রাতে আমি আমার ৭০ জন কিংবা ৯০ জন স্ত্রীর কাছে যাব। (তাদের সঙ্গে সহবাস করব) প্রত্যেক স্ত্রী একজন করে অশ্বারোহী যোদ্ধা গর্ভধারণ করবে। এরা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে। তখন তার সাথি বললেন, ইনশাআল্লাহ বলুন।
কিন্তু তিনি মুখে তা বলেননি। এরপর একজন স্ত্রী ব্যতীত কেউ গর্ভধারণ করলেন না। তিনি যা-ও একটি পুত্রসন্তান প্রসব করলেন, তার একটি অঙ্গ ছিল না। নবী করিম (সা.) বলেন, তিনি যদি ইনশাআল্লাহ মুখে বলতেন, তাহলে (সব সন্তানই জন্ম নিতো) এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করত। (বুখারি, হাদিস : ৩১৮৪)
ইনশাআল্লাহ না বলার পরিণতি
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, একবার মক্কার কাফিররা মদিনার ইহুদি আলেমদের পরামর্শ নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) সত্য নবী, নাকি মিথ্যাবাদী তা জানার জন্য তার কাছে তিনটি প্রশ্ন করেন। এক. পূর্বযুগে যে যুবকরা বেরিয়ে গিয়েছিলেন তাদের ঘটনা বর্ণনা করুন। দুই. ওই ব্যক্তি সম্পর্কে বলুন, যিনি সমগ্র পৃথিবী ভ্রমণ করেছিলেন। তিন. রুহ সম্পর্কে বিস্তারিত বলুন। তখন তিনি বলেছিলেন, আগামীকাল তোমাদের জবাব দেব। কিন্তু তিনি ভুলে ইনশাআল্লাহ বলেননি। এরপর ১৫ দিন পর্যন্ত তার ওপর কোনো ওহি অবতীর্ণ হয়নি। (তাবারি : ১৭/৫৯২)
এর ফলে মক্কাবাসী কাফিররা সন্দেহ করতে থাকে এবং পরস্পর বলাবলি করে, দেখো এক দিনের ওয়াদা ছিল, অথচ আজ ১৫ দিন হলো তবু জবাব দিতে পারল না। ওহি বন্ধ ও কাফিরদের কথার ঝাঁজে রাসুলুল্লাহ (সা.) দ্বিগুণ দুঃখে ব্যথিত ও জর্জরিত হতে লাগলেন। এরপর জিবরাইল (আ.) সুরা কাহফ নিয়ে আসেন। কাফিরদের প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয়। এবং রাসুল (সা.)-কে ইনশাআল্লাহ বলার নির্দেশ দেওয়া হয়। হে নবী! কোনো কাজ সম্পর্কে কখনো বলো না যে আমি এ কাজ আগামীকাল করব। তবে বলো ইনশাআল্লাহ (আল্লাহ যদি চান তাহলে করব)। (সুরা : কাহফ, আয়াত : ২৩–২৪)
ইনশাআল্লাহ শব্দের ব্যবহার
মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করে মূলত প্রত্যকটি কাজ করতে হয়। আর সে কাজ যদি বৈধ ও ভবিষ্যতে করার নিয়ত থাকে তখন ইনশাআল্লাহ শব্দ ব্যবহার করতে হয়। যে কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে তার ক্ষেত্রে নয়। কোরআনে এসেছে, ‘তোমরা ইচ্ছা করবে না (তোমাদের ইচ্ছা বাস্তবে রূপ নেবে না) যদি না আল্লাহ ইচ্ছা করেন যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক।’ (সুরা :তাকভির, আয়াত : ২৯)