শিরোনাম
৩১ জানুয়ারি, ২০২৪ ০৮:২৪

ইসলামের ইতিহাসে কীর্তিমান ১০ মুসলিম কিশোর

আতাউর রহমান খসরু

ইসলামের ইতিহাসে কীর্তিমান ১০ মুসলিম কিশোর

ইতিহাসের কোনো কীর্তি গড়তে যে শক্তি-সামর্থ্য ও বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন হয়, তা সাধারণত শিশুদের মধ্যে থাকে না। তার পরও বহু শিশু ইতিহাসের অমর গ্রন্থে নিজেদের নাম লেখাতে সক্ষম হয়েছেন। ইতিহাসে অমর কীর্তি গড়া ১০ মুসলিম কিশোরের পরিচয় বর্ণনা করা হলো।

১. আরকাম ইবনে আবিল আরকাম (রা.) : মক্কার মুসলিমরা যখন মুশরিকদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ, তখন মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।

আর সংকটময় সময়ে তিনি নিজের ঘরকে দ্বিনি ঘরে পরিণত করেন। তাঁর ঘরে সাহাবিরা নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে মিলিত হতেন এবং তিনি তাদের শরিয়তের বিধি-বিধান শেখাতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করার আগ পর্যন্ত তাঁর বাড়িটি ইসলামের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ জন্য আরকাম (রা.)-এর ঘরকে ইসলামের প্রথম বিদ্যাপীঠ বলা হয়। ৫৫ হিজরিতে তিনি মদিনায় ইন্তেকাল করেন।

২. তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ (রা.) : উহুদের যুদ্ধ ছিল ইসলামের ইতিহাসে প্রথম মর্মন্তুদ একটি ঘটনা। এই যুদ্ধে বহু সাহাবি শহীদ হন এবং স্বয়ং রাসুলে আকরাম (সা.) রক্তাক্ত হন। এই মহান বীর সাহাবি মাত্র ১৬ বছর বয়সে উহুদ যুদ্ধে অংশ নেন।

শুধু তা-ই নয়, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাতে মৃত্যুর শপথ নেন। মুশরিকরা চতুর্দিক থেকে নবীজি (সা.)-কে যখন হামলা করছিল তিনি নিজের শরীর দিয়ে তাঁকে রক্ষার চেষ্টা করেন। ওমর (রা.) তাঁকে পরবর্তী খলিফা নির্বাচনের জন্য গঠিত শুরার সদস্য করেন। তিনি ইসলামের পক্ষে বহু যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন এবং জনকল্যাণে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেন। ৩৬ হিজরিতে তিনি ইন্তেকাল করেন। তিনি জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবিদের একজন।

৩. জুবায়ের ইবনুল আউয়াম (রা.) : জুবায়ের ইবনুল আউয়াম (রা.) ছিলেন জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবিদের একজন। সম্পর্কে তিনি নবীজি (সা.)-এর ফুফাতো ভাই ছিলেন। অন্যদিকে তিনি আসমা বিনতে আবু বকর (রা.)-এর স্বামী হিসেবেও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আত্মীয় ছিলেন। নবী (সা.) তাঁকে নিজের ‘হাওয়ারি’ তথা সাহায্যকারী আখ্যা দেন। তিনি মাত্র ১৫ বছর বয়সে ইসলামের পক্ষে সর্বপ্রথম তরবারি কোষমুক্ত করেন। এ ছাড়া তিনি ঐতিহাসিক ইয়ারমুক যুদ্ধ ও মিসর বিজয়ের সাক্ষী ছিলেন। ওমর (রা.) কর্তৃক গঠিত শুরার সদস্য ছিলেন। তিনি ৩৬ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন।

৪. মুয়াজ ও মুয়াওবিজ (রা.) : মুয়াজ বিন আমর (রা.) ১৩ বছর বয়সে এবং মুয়াওবিজ বিন আফরা (রা.) ১৪ বছর বয়সে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাদের অমর কীর্তি হলো তারা ইসলামের চরম শত্রু আবু জাহালকে হত্যা করে। আবু জাহাল নিহত হওয়ার পর মক্কার মুশরিকরা মনোবল হারিয়ে ফেলে এবং মুসলমানের মনোবল ত্বরান্বিত হয়। মুয়াজ (রা.) উসমান (রা.)-এর শাসনামলে ইন্তেকাল করেন। মুয়াওবিজ (রা.) ৩৭ হিজরি মতান্তরে ৪০ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন।

৫. জায়েদ বিন সাবিত (রা.) : রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় আগমন করার পর তিনি পরিবারের সঙ্গে মাত্র ১১ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি একাধিক ভাষায় দক্ষ ছিলেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে নবীজি (সা.) তাঁকে ওহি লেখকের মর্যাদা দেন। জায়েদ বিন সাবিত (রা.) তাঁর জন্য বিভিন্ন বিষয় অনুবাদ করতেন। কোরআন একত্রীকরণের জন্য গঠিত পর্ষদের প্রধান ছিলেন তিনি। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের বছর তিনি তাঁকে দুবার পুরো কোরআন পাঠ করে শোনান।

৬. মুহাম্মদ বিন কাসিম (রহ.) : ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে ‘সিন্ধু বিজয়’ একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এ বিজয় উপমহাদেশে ইসলামের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠার দ্বার উন্মুক্ত করেছিল। সিন্ধু বিজয়ের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন হাজ্জাজ বিন ইউসুফের ভাতিজা ও জামাতা মুহাম্মদ বিন কাসিম (রহ.)। তিনি মাত্র ১৭ বছর বয়সে সিন্ধু বিজয় করেন। সিন্ধুর বিস্তৃত অঞ্চল বিজয় করে তিনি যখন সামনে অগ্রসর হচ্ছিলেন, তখন দামেস্কে ক্ষমতার পালাবদল ঘটে। খলিফা সুলায়মান বিন আবদুল মালিক তাঁকে পদচ্যুত ও বন্দি করেন। ৯৫ হিজরিতে কারাগারেই তাঁর মৃত্যু হয়।

৭. সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা.) : ইসলামের বীর সেনাপতি সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা.)-কে নবীজি (সা.) জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। তিনি ঐতিহাসিক কাদেসিয়ার যুদ্ধ, জালুয়ার যুদ্ধ ও মাদায়েন যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন। তিনি ছিলেন কুফায় নিযুক্ত প্রথম মুসলিম প্রশাসক। সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা.) মাত্র ১৭ বছর বয়সে ইসলামের পক্ষে প্রথম তীর নিক্ষেপ করেন। তিনিও ওমর (রা.) কর্তৃক গঠিত শুরার সদস্য ছিলেন। সাদ (রা.) ৫৫ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন।

৮. উসামা বিন জায়েদ (রা.) : মহানবী (সা.)-এর অত্যন্ত স্নেহভাজন ছিলেন উসামা বিন জায়েদ (রা.)। নবীজি (সা.) অধিক ভালোবাসতেন বলে তাঁকে ‘হুব্বুর রাসুল’ (রাসুলের ভালোবাসা) বলা হতো। উসামা (রা.)-এর পিতা জায়েদ ছিলেন নবীজি (সা.)-এর সেবক ও পালকপুত্র। মৃত্যুর পূর্বে রাসুলুল্লাহ (সা.) রোমান বিরুদ্ধে প্রেরিত এক বিশাল বাহিনীর সেনাপতি নিযুক্ত করেন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর মতান্তরে ১৮ বছর। এই অভিযানে বহু মর্যাদাবান সাহাবি অংশগ্রহণ করেন। ৫৪ হিজরিতে তিনি ইন্তেকাল করেন।

৯. হারুনুর রশিদ : আব্বাসীয় খলিফাদের ভেতর সবচেয়ে পরিচিত মুখ হারুনুর রশিদ। তিনি তাঁর সুশাসন, নেতৃত্ব, প্রজাবৎসলতা ও প্রজ্ঞার কারণে বিখ্যাত। হারুনুর রশিদ মাত্র ১৫ বছর বয়সে আব্বাসীয় বাহিনীর সেনাপতি নিযুক্ত হন। তৎকালীন পৃথিবীতে এই সেনা বাহিনীকেই দিগ্বিজয়ী বাহিনী বলা হতো। হারুনুর রশিদ মাত্র ২০ বছর বয়সে মুসলিম জাহানের খলিফা নিযুক্ত হন। ১৯৩ হিজরিতে তিনি ইন্তেকাল করেন।

১০. সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহ : উসমানীয় সুলতানদের ভেতর সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহ তাঁর বীরত্ব, সাহসিকতা, বিচক্ষণতা ও প্রজ্ঞার জন্য সমাদৃত। তিনি মাত্র ১৪ বছর বয়সে উসমানীয় সাম্রাজ্যের খলিফা নিযুক্ত হন এবং ২১ বছর বয়সে কনস্ট্যান্টিনোপল বা ইস্তাম্বুল জয় করেন। ঐতিহাসিক এই শহর জয়কারী বাহিনীর জন্য নবীজি (সা.) সুসংবাদ দিয়েছিলেন। তিনি ৮৮৬ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন।

তথ্যসূত্র : রাবেতা ডটকম, উইকিপিডিয়া ও মারেফা ডকটম

 

বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর