শিরোনাম
৩ জুন, ২০২৪ ১১:২৬

মিথ্যা বলা একটি ঘৃণ্য আচরণ

মুহম্মাদ আশরাফ আলী

মিথ্যা বলা একটি ঘৃণ্য আচরণ

প্রতীকী ছবি

মিথ্যা বলা মানুষের একটি কদর্য ও ঘৃণ্য আচরণ। মিথ্যার মাধ্যমে মানুষের হক নষ্ট হয়। মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে মানুষকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে নাহক অর্থ হরণ করা হয়। এমন উপার্জন যে হারাম তা বলাই বাহুল্য। মিথ্যুক ব্যক্তি যে ঘৃণ্য ও তুচ্ছ সে ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারী ও মিথ্যাবাদীকে সৎপথে পরিচালিত হেদায়াত করেন না।’ (সুরা মোমিন, আয়াত ২৮)

আবু বাকরাহ (রা.) বলেন, একদা আমরা রসুল (সা.)-এর কাছে বসা ছিলাম। তিনি বললেন, তোমাদের সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহর কথা বলে দেব নাকি? এরূপ তিনবার বলার পর তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। শোনো! আর মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া ও মিথ্যা কথা বলা। তিনি হেলান দিয়ে বসে ছিলেন, কিন্তু শেষোক্ত কথাটি বলার সময় হেলান ছেড়ে উঠে বসলেন। এরপর এ কথা তিনি বারবার পুনরাবৃত্তি করতে লাগলেন। শেষাবধি আমরা বললাম, হায়, যদি তিনি চুপ হতেন। আল্লাহর রসুল (সা.) বলেন, ‘অবশ্যই সত্যবাদিতা পুণ্যের প্রতি পথপ্রদর্শন করে এবং পুণ্য পথপ্রদর্শন করে বেহেশতের প্রতি। আর মানুষ সত্য বলতে থাকলে পরিশেষে সে আল্লাহর কাছে দারুণ সত্যবাদী হয়ে যায়। পক্ষান্তরে মিথ্যাবাদিতা পাপের প্রতি পথপ্রদর্শন করে এবং পাপ পথপ্রদর্শন করে দোজখের প্রতি। আর মানুষ মিথ্যা বলতে থাকলে অবশেষে সে আল্লাহর কাছে ভীষণ মিথ্যাবাদী বলে লিখিত হয়।’ মিথ্যা বলার অভ্যাস কোনো মুসলিমের হতে পারে না। তার কর্ম ও পেশা যা-ই হোক, কোনো ক্ষেত্রেই সে মিথ্যার আশ্রয় নিতে পারে না। আসলে মিথ্যা বলা মোনাফেকের হীনচরিত্রের একটি নিকৃষ্ট গুণ।

আল্লাহর নবী (সা.) বলেন, ‘মোনাফেকের লক্ষণ হতিনটি- কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা দিলে খেলাপ করে এবং চুক্তি করলে ভঙ্গ করে।’ মুসলিমের এক বর্ণনায় এ কথা বেশি আছে, ‘যদিও সে ব্যক্তি নামাজ পড়ে, রোজা রাখে এবং নিজেকে মুসলিম মনে করে।’

বহু উকিল আছেন যারা মক্কেলকে কেসে জেতানোর উদ্দেশ্যে মিথ্যা ব্যবহার করেন। বহু লেখক আছেন যারা মিথ্যা কথা বানিয়ে লিখে লোককে হাসিয়ে অর্থ উপার্জন করেন। বহু ব্যবসায়ী আছেন যারা মিথ্যা বলে নিজেদের পণ্য বিক্রি করেন। এরা বলেন মিথ্যা না বললে কি ব্যবসা চলে? আসলে মিথ্যা বলাটা এদের কাছে ব্যবসার একটা টেকনিক। আল্লাহর রসুল (সা.) বলেন, ‘ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে পৃথক না হওয়া পর্যন্ত (ক্রয়-বিক্রয়ে তাদের) এখতিয়ার থাকে। সুতরাং তারা যদি (ক্রয়-বিক্রয়ে) সত্য বলে এবং (পণ্যদ্রব্যের দোষ-গুণ) খুলে বলে, তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত দেওয়া হয়। অন্যথায় যদি (পণ্যদ্রব্যের দোষ-ত্রুটি) গোপন করে এবং মিথ্যা বলে তাহলে বাহ্যত তারা লাভ করলেও তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত বিনাশ করে দেওয়া হয়। মিথ্যা না বললে কি ব্যবসা চলে? এ কথা ওদের কাছে ধ্রুব ও চিরন্তন সত্য বলেই মহানবী (সা.) আমাদের ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে বলেছেন, ‘ব্যবসায়ীরাই ফাজের (পাপাচারী)। সাহাবিরা বললেন, আল্লাহ কি ব্যবসাকে হালাল করেননি? তিনি বললেন, অবশ্যই। কিন্তু তারা কসম করে পাপ করে এবং কথা বলতে মিথ্যা বলে।’

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

বিডি প্রতিদিন/এমআই

সর্বশেষ খবর