১০ জুন, ২০২৪ ১২:১২

মদিনা মুনাওয়ারায় নবীজির রওজা মোবারক জিয়ারত

মুফতি রুহুল আমিন কাসেমী

মদিনা মুনাওয়ারায় নবীজির রওজা মোবারক জিয়ারত

প্রতীকী ছবি

মদিনাতুন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা নবীর শহর সোনার মদিনা, বিশ্ব মুসলিমের সর্বোচ্চ ইমানি আবেগ-উচ্ছ্বাসের কেন্দ্রস্থল। মক্কার কুরাইশরা যখন সাইয়েদুল মুরসালিন, খাতামুন নাবিইয়িন, মানবকুল শিরোমণি মুহাম্মদ (সা.)-কে নির্দয় নিষ্ঠুর আচরণ করে নিজ জন্মভূমি মক্কা মুকাররমা থেকে হিজরত করতে বাধ্য করেছিল, তখন যে পবিত্র ভূমি রাহমাতুল্লিল আলামিনকে তার কোলে আশ্রয় দিয়ে চিরধন্য হয়েছিল, সেই পবিত্র নগরীই হচ্ছে এ মদিনাতুল মুনাওয়ারা। 

তাঁর পবিত্র দেহ মোবারককে ধারণ করে আজও এ নগরী লাভ করেছে পৃথিবীর বুকে সর্বোচ্চ সম্মান ও জান্নাতের মর্যাদা। পবিত্র কোরআনে এ ভূমিকে আল্লাহতায়ালা আরদুল্লাহ (আল্লাহর ভূমি) বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ পবিত্র ভূমির প্রায় ১০০টি নাম কোরআন, হাদিস ও ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে। মহানবী (সা.)-এর চরণ স্পর্শে ধন্য হয়েছে এর প্রতিটি অলিগলি, এর আকাশে-বাতাসে মিশে রয়েছে তাঁর পবিত্র নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের সুবাস। 

মদিনার প্রতি নবী করিম (সা.) এর এত অধিক পরিমাণ আকর্ষণ ছিল যে, কোনো সফর থেকে মদিনায় প্রত্যাবর্তনকালে উটের গতি বাড়িয়ে দিতেন, কারণ তখন তিনি মদিনায় প্রবেশের জন্য ব্যাকুল হয়ে যেতেন, মদিনায় পৌঁছে তাঁর হৃদয় মন জুড়াত। তিনি চাদর না খুলেই বলতেন, আহ! কী মনোরম প্রশান্তিময় তার আলো-বাতাস। গায়ে লেগে যাওয়া মদিনার ধুলাবালি যা তাঁর মুখমন্ডলে এসে পড়ত, তা তিনি পরিষ্কার করতেন না। কোনো সাহাবি ধুলাবালি থেকে রক্ষার জন্য মুখ আবৃত্ত করলে তিনি তাদের নিষেধ করতেন এবং বলতেন মদিনার মাটিতে শিফাও নিরাময় রয়েছে। 

তিনি বলেছেন, এ শহর পবিত্র, এটা গুনাহগুলোকে বিদূরিত করে যেমনটা বিদূরিত করে হাপর লোহার মরিচাকে, বুখারি। তিনি মদিনার জন্য বরকতের ও রোগ মুক্তির দোয়া করেছেন। মদিনায় মসজিদে নববিতে রিয়াজুল জান্নাহ নামক স্থানটি জান্নাতের বাগান এবং ওহুদ পাহাড়টি জান্নাতের পাহাড়। ওহুদ পাহাড়ের কোলঘেঁষে মসজিদে নববি, এখানেই সবুজ গম্বুজের নিচে শায়িত আছেন প্রিয়নবী মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, হজরত আবু বকর, ওমর। পাশেই জান্নাতুল বাকিতে হজরত উসমান, হজরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া রাদুআনহুসহ অসংখ্য অগণিত সাহাবায়ে কেরাম। 

নবীজি ইরশাদ করেন- মদিনা আমার হিজরতস্থল, এখানেই আমার শয়ানস্থল, এখান থেকেই কেয়ামতের দিন আমার পুনরুত্থান হবে। আমার উম্মতের কর্তব্য আমার পড়শিদের হেফাজত ও সম্মান করা। যাতে তারা কবিরা গুনাহ থেকে দূরে থাকে। আমি তাদের সম্মান, হেফাজত ও সুপারিশকারী হব। নবীজি দুই হাত তুলে দোয়া করেছেন- হে আল্লাহ! যে আমার ও আমার নগরীর অনিষ্ট সাধন করতে চায়, তুমি তার ধ্বংস ত্বরান্বিত কর। পবিত্র মদিনাকে আল্লাহতায়ালা দাজ্জালের ফিতনা থেকেও রক্ষা করবেন। নবীজির রওজা শরিফ জিয়ারত যে কত বড় পরম সৌভাগ্য ও শ্রেষ্ঠ সওয়াবের কাজ তা বর্ণনাতীত। তাই নবীজির রওজা জিয়ারত করাকে কোনো কোনো ফকিহ ওয়াজিব বলেছেন। 

নবীজি ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় আমার জিয়ারত করবে, কেয়ামতের দিন সে আমার আশপাশে থাকবে। মিশকাত। তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি হজ করল এবং আমার মৃত্যুর পর আমার কবর জিয়ারত করল, সে যেন জীবদ্দশায় আমার সঙ্গেই সাক্ষাৎ করল। তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি মক্কার হজ সমাপন করে আমার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে আমার মসজিদে আসে, তার জন্য দুটি মকবুল হজের সওয়াব লিখিত হয়। তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি দুনিয়াবি কোনো উদ্দেশ্য ব্যতীত শুধু আমার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে আমার কাছে আসে, কেয়ামতের দিন আমি তার জন্য সুপারিশকারী হব। 

নবীজী বলেন, আমার এ মসজিদে এক নামাজ, মসজিদুল হারাম ব্যতীত অন্যান্য মসজিদে ১ হাজার নামাজ আদায়ের চেয়েও উত্তম। কোনো কোনো বর্ণনায় তা ৫০ হাজার বলেও উল্লেখ রয়েছে। মদিনায় পৌঁছার পর দরুদ-সালাম, ভালোবাসা ও আবেগের মাত্রা বাড়িয়ে দেবেন। হাদিস শরিফে আছে, জিয়ারতকারী মদিনার নিকটবর্তী হলে রহমতের ফেরেশতারা তাকে অভ্যর্থনার জন্য এগিয়ে আসেন, এ সময় রওজাপাকের দিকে সর্বোচ্চ মনোযোগ, সর্বোচ্চ আদব, সর্বোচ্চ সম্মান, দুনিয়ার সবকিছু থেকে নিজেকে আলাদা করে নিজের চিন্তা-চেতনায় নবীজির ভালোবাসায় একনিষ্ঠ হওয়া। 

নিজেকে উজাড় করে প্রেমাষ্পদের সঙ্গে সাক্ষাতের প্রতীক্ষার প্রহর গোনা। জুলহুলাইফা বা বীরেআলী নামক স্থানে পৌঁছলে, সম্ভব হলে অজু-গোসল করে নতুন কাপড় পরিধান ও সুগন্ধি ব্যবহার করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা। অতঃপর সোনার মদিনার নগর প্রাচীর চোখে পড়া মাত্রই ভালোবাসা ও কান্নাজড়িত কণ্ঠে দরুদ পাঠ করা শুরু করবেন। মনে রাখবেন আপনি যেখান দিয়ে হাঁটছেন, কদম রাখছেন, হয়তবা আল্লাহর প্রিয় হাবিব সেখানেই কদম রেখেছেন, সেই পথেই হেঁটেছেন। তাই অত্যধিক সম্মান, আদব ও বিনয় অবনত অন্তর নিয়ে ধীরস্থির কদমে এগিয়ে যাওয়া।

অতঃপর সর্বপ্রথম মসজিদে নববিতে দোয়া পড়ে ডান পা রেখে অত্যন্ত বিনয় ও আদব সহকারে প্রবেশ করবেন এবং সম্ভব হলে রিয়াজুল জান্নাতে তাহিয়্যাতুল মসজিদ ও দুই রাকাত শুকরিয়া নামাজ আদায় করবেন এবং সর্বোত্তমভাবে আল্লাহর রসুলের রওজা জিয়ারত করার তৌফিক কামনা করবেন।

লেখক : ইমাম ও খতিব, কাওলার বাজার জামে মসজিদ, দক্ষিণখান, ঢাকা।


বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর