শিরোনাম
১৬ জুন, ২০২৪ ০৮:০৯

কোরবানির তাৎপর্য ও ইতিহাস

ড. ইকবাল কবীর মোহন

কোরবানির তাৎপর্য ও ইতিহাস

ঈদুল আজহার ইতিহাস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে এই ইতিহাস আমাদের সামনে গুরুত্বপূর্ণ আমল ও ইবাদতের নির্দেশনা দেয়। ঈদুল আজহার দিনে অন্যতম ইবাদত হলো পশু কোরবানি করা। এটি ওয়াজিব বা অবশ্যপালনীয়।

এই কোরবানির পেছনে আছে গৌরবময় এক ইতিহাস। কোরবানির এই নিগূঢ় ইতিহাসের প্রাথমিক সূচনা হয়েছিল আদম (আ.)-এর পুত্র হাবিল ও কাবিলের মধ্যে কোরবানির প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। কোরবানির এই প্রতিযোগিতায় হাবিল সফল হলো আত্মিক পবিত্রতার মহিমায়। আর কাবিল লোভ ও প্রতিহিংসার আগুনে আত্মাহুতি দিয়েছিল।

এ সম্পর্কে কোরআনের ভাষ্য হচ্ছে, ‘ওদের আদমের দুই পুত্রের (হাবিল ও কাবিল) ঘটনা ঠিকঠিকভাবে শোনাও, যখন তারা আল্লাহর উদ্দেশে একটি করে কোরবানি করেছিল। তাদের একজনের কোরবানি কবুল হলো, অন্যজনের হলো না। তখন দ্বিতীয়জন বলল, ‘আমি তোমাকে খুন করে ফেলব।’ প্রথমজন বলল, ‘আল্লাহ তো শুধু মুত্তাকিদের কোরবানি কবুল করেন।’
(সুরা : মায়িদা, আয়াত : ২৭)

এই কোরবানির ঘটনা ধারাবাহিকভাবে আল্লাহর নবী ইবরাহিম (আ.) পর্যন্ত পৌঁছায়। কোরবানিকে কেন্দ্র করে ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর এক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হন। আল্লাহ তাঁকে প্রিয়বস্তু কোরবানি করার আদেশ দেন। আদেশ পেয়ে ইবরাহিম (আ.) মহা চিন্তায় পড়ে যান। ইবরাহিম (আ.) নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন তাঁর শিশুপুত্র ইসমাঈল (আ.)-কে।

তাই তিনি নিজ পুত্রকেই কোরবানি করার জন্য মনস্থির করেন। ইসমাঈল (আ.) তখন বেশ ছোট। তাঁকে কোরবানির কথা জানানো হলে ইসমাঈল (আ.) পিতার কথা হাসিমুখে গ্রহণ করেন। পিতা ও পুত্রের এই কথোপকথন সুরা সাফফাতের ১০২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বর্ণনা করেছেন এভাবে : ‘অতঃপর সে (ইসমাঈল) যখন পিতার সঙ্গে কাজ করার মতো বয়সে উপনীত হলো, তখন ইবরাহিম বললেন, বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি তোমাকে আমি জবাই করছি, এখন তোমার অভিমত কী? সে বলল, হে আমার পিতা! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন, তা-ই করুন। আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন।’

ইবরাহিম (আ.) কোরবানি সম্পন্ন করার জন্য স্ত্রী হাজেরা ও ইসমাঈলকে নিয়ে একদিন মিনা প্রান্তরে হাজির হন। এরপর ইবরাহিম (আ.) প্রাণাধিক স্নেহের পুত্রের চোখ বেঁধে কোরবানি দিতে উদ্যত হন। তখন মহান আল্লাহর কুদরতে আকাশ থেকে এক আওয়াজ এলো : ‘হে ইবরাহিম থামো। তোমার আত্মত্যাগ ও স্বার্থত্যাগে আমি মুগ্ধ হয়েছি। তোমার পুত্রকে জবাই করতে হবে না। আমি তো কেবল তোমার আন্তরিকতা পরীক্ষা করে দেখলাম।’ এরপর কুদরতিভাবে আসা একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে গেল। ফলে ইসমাঈল (আ.) মুক্তি পেলেন। ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর আদেশ পালনে শেষ পর্যন্ত অটল থাকায় তাঁর কাজে আল্লাহ অত্যন্ত খুশি হন। এ প্রসঙ্গে  সুরা আস সাফফাতের ১০৪-১০৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে ইবরাহিম! আপনি আপনার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিঃসন্দেহে এটা ছিল বড় কঠিন পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে দিলাম জবেহ করার জন্য এক মহান বস্তু (দুম্বা)।’

ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাঈল (আ.)-এর আত্মত্যাগ ও আল্লাহভীতির এ মহিমা স্মরণ করে ঈদুল আজহার উৎসব পালিত হয়।

কোরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত

আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মদীর ওপর এই কোরবানিকে ওয়াজিব করেছেন। সুরা আল-কাউসারের ২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘সুতরাং আপনি আপনার প্রতিপালকের উদ্দেশে সালাত আদায় করুন এবং কোরবানি করুন।’

অনেক নেক আমলের মধ্যে কোরবানি একটি বিশেষ আমল।

উল্লেখ্য যে, পশু কোরবানি করা আল্লাহর উদ্দেশ্য নয়, বরং আল্লাহভীতিই এখানে মুখ্য বিষয়। এ প্রসঙ্গে সুরা হাজের ৩৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না এর গোশত ও রক্ত, পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।’

কোরবানির শিক্ষা

বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান পশু কোরবানির মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের প্রত্যাশায় এই দিনটি পালন করে। কোরবানি কেবলমাত্র পশু জবেহ করা নয়, কোরবানি হলো নিজের ভেতরের পশু সত্তাকে জবেহ করা। মানে মনের কুপ্রবৃত্তিকে খতম করা। কোরবানির গোশত পেয়ে গরিব-দুঃখী খুশি হয়। কোরবানি করার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর আনুগত্য ও নির্দেশ মানার শিক্ষা গ্রহণ করে। কোরবানির দিন মুসলমানরা সাম্য, ঐক্য, সম্প্রীতি ও সহানুভূতির মনোভাব নিয়ে হাতে হাত মেলায়।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন
 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর