১৬ জুলাই, ২০২৪ ১৪:০০

যেসব কারণে ঈমান দুর্বল হয়

জাওয়াদ তাহের

যেসব কারণে ঈমান দুর্বল হয়

আমাদের ঈমান অনেক সময় দুর্বল হয়ে যায়। হয়তো আমরা তা অনুভব করি না। অথচ এই দুর্বল ঈমান আমার দিন ও দুনিয়া উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। হাদিসে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের ভেতর ঈমান পুরাতন হয়ে যায় যেভাবে তোমাদের কাপড় পুরাতন হয়ে যায়।

তাই তোমরা আল্লাহর কাছে ঈমান নবায়নের দোয়া করো।’ (আল-মুজামুল কবির, হাদিস : ১৪৬৬৮)
আজকে আমরা আলোচনা করব, যেসব কারণে ঈমান দুর্বল হয়—

গুনাহে জড়ানো

কেউ গুনাহ করার পর তার ভেতরে যদি কোনো অনুশোচনা না আসে, বরং সে বারবার গুনাহ করেই যেতে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে তার ঈমান দুর্বল হয়ে গেছে।  আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যভিচারী মুমিন অবস্থায় ব্যভিচার করে না এবং কোনো মদ্যপায়ী মুমিন অবস্থায় মদ পান করে না। কোনো চোর মুমিন অবস্থায় চুরি করে না।

কোনো লুটতরাজকারী মুমিন অবস্থায় এরূপ লুটতরাজ করে না যে যখন সে লুটতরাজ করে তখন তার প্রতি লোকজন চোখ তুলে তাকিয়ে থাকে (অর্থাৎ তার থেকে ঈমানের নুর ছিনিয়ে নেওয়া হয়)।’
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৩১৩)

অন্তর কঠোর হওয়া

কারো যদি মনে হয়, আমার অন্তরে দয়া-মায়া কমে গেছে, কঠোর হয়ে গেছে। তাহলে এটিও প্রমাণ বহন করে যে তার ঈমান দুর্বল হয়ে গেছে।


ইবাদতে অলস হওয়া

কারো ভেতর যদি ইবাদত করতে অলসতা চলে আসে, বুঝতে হবে তার ঈমান ক্রমেই দুর্বল হয়ে আসছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এ মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে ধোঁকাবাজি করে, অথচ আল্লাহই তাদের ধোঁকায় ফেলে রেখেছেন। তারা যখন নামাজে দাঁড়ায়, তখন অলসতার সঙ্গে দাঁড়ায়। তারা মানুষকে দেখায় আর আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৪২)
 
কৃপণ হওয়া

কোনো ব্যক্তির মন যদি এমন হয়, দান করলে কষ্ট লাগে এবং তার ভেতরে কৃপণতা আছে, তাহলে এটিও তার ঈমান দুর্বল হয়ে যাওয়ার প্রমাণ বহন করে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদের) ধুলা ও জাহান্নামের ধোঁয়া কোনো বান্দার মধ্যে কখনো একত্র হতে পারে না।

অনুরূপভাবে মনের সংকীর্ণতা ও ঈমান কোনো বান্দার মধ্যে কখনো একত্র হতে পারে না।’
(আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ২৮১)

ঈমানি মজলিসে অংশগ্রহণ না করা

আমরা মানুষ। আমাদের ঈমান প্রায়ই দুর্বল হয়। সে জন্য আমাদের মাঝে মাঝে ঈমানের মজলিসে যেতে হয়। আমি যদি ঈমানের হালকা মজলিসে না যাই তাহলে ধীরে ধীরে আমার ঈমান দুর্বল হয়ে যাবে। সাহাবারা একে অন্যকে বলতেন—‘এসো আমাদের সঙ্গে বসো, কিছুক্ষণ ঈমানের আলোচনা করি।’ (আল-মুসান্নাফ, লিবনে আবি শাইবা, হাদিস : ৩১০৬৫)

দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষা

মানুষের ভেতরে অনেক ধরনের আকাঙ্ক্ষা থাকে। বাকি কারো ভেতরে যদি অতিশয় দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষা থাকে তাহলে এটিও ঈমান দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণ। জাবের (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি আমার উম্মতের ওপর দুই ব্যাপারে খুব বেশি ভয় করি। প্রবৃত্তির কামনা, আর দীর্ঘ হায়াতের আকাঙ্ক্ষা। বস্তুত প্রবৃত্তি মানুষকে ন্যায়নীতি গ্রহণ করা থেকে বাধা দেয়। আর দীর্ঘ হায়াতের আকাঙ্ক্ষা আখিরাতকে ভুলিয়ে দেয়। এই যে দুনিয়া! এটি প্রবহমান প্রস্থানকারী এবং ওই আখিরাত! তা প্রবহমান আগমনকারী। আর এটার প্রত্যেকটির সন্তানাদিও রয়েছে। অতএব, যদি তোমাদের সাধ্যে কুলায় আর তোমরা দুনিয়ার সন্তান না হয়ে থাকতে পারো তবে তাই করো। কেননা, আজ তোমরা আমলের গৃহে রয়েছে, (এখানে) কোনো হিসাব-কিতাব নেই। আর আগামীকাল তোমরা আখিরাতের অধিবাসী হবে, আর তথায় কোনো আমল নেই।’

(শুআবুল ঈমান, হাদিস : ১০১৩২) 

আর দুর্বল ঈমানকে সবল করার বড় মাধ্যম হচ্ছে কোরআনে কারিম পাঠ করা, কোরআন নিয়ে চিন্তা-ফিকির করা। কারণ কোরআন হচ্ছে নুর। কোরআন পড়া ও তা নিয়ে ভাবা তো আলোকিত করে দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি কোরআনে এমন বিষয় নাজিল করি, যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত। গুনাহগারদের তো এতে শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৮২)

এ ছাড়া নবীদের সিরাত, সাহাবায়ে কিরামের জীবনী পাঠ করা, আল্লাহর জিকির করা, দুনিয়ার বাস্তবতা নিয়ে চিন্তা করা—এগুলোর মাধ্যমে নিজের ঈমানকে বলীয়ান করা যায়।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন 

সর্বশেষ খবর