শিরোনাম
১৮ আগস্ট, ২০২৪ ১৮:০৩

ইসলামে পারিবারিক জীবনের গুরুত্ব

মুফতি মোহাম্মদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

ইসলামে পারিবারিক জীবনের গুরুত্ব

সমাজজীবনের প্রথম ভিত্তি ও বুনিয়াদ হলো পরিবার। মানব জীবনের যাত্রা থেকেই এ পরিবার সূত্রের শুভ সূচনা। পিতা-মাতা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি প্রভৃতি একান্নভুক্ত ব্যক্তির সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সংক্ষিপ্ত মানব পরিমণ্ডলকে পরিবার বলে। আদি পিতা হজরত আদম (আ.) ও আদি মাতা হজরত হাওয়া (আ.)-এর মাধ্যমেই এর প্রথম বিকাশ। পৃথিবীর সব মানুষের সৃষ্টি এক আদম (আ.) থেকে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন : হে মানব! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও যিনি তা থেকে স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছেন, যিনি তাদের দুজন থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়েছেন এবং আল্লাহকে ভয় কর যার নামে তোমরা একে অপরের কাছে যাচনা কর এবং সতর্ক থাক জাতিবন্ধন সম্পর্কে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি তীক্ষè দৃষ্টি রাখেন। সুরা নিসা, আয়াত-০১। অন্যত্র আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন : হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ এবং এক নারী থেকে। তারপর তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকি। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু জানেন, সব খবর রাখেন। সুরা হুজুরাত, আয়াত-১৩।

পৃথিবীর সব মানুষকে আল্লাহতায়ালা নারী-পুরুষ রূপে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর দয়ামায়ার বাঁধনে আবদ্ধ করেছেন। মানুষের স্বভাবগত পরিচ্ছন্নতা, মানসিক ভারসাম্যতা ও চারিত্রিক পবিত্রতার অন্যতম উপায় বিবাহ। যখন হজরত আদম (আ.) জান্নাতে অতৃপ্তিতে ভুগছিলেন তখনই আল্লাহতায়ালা মা হাওয়া (আ.)-কে সৃষ্টি করলেন জীবন সঙ্গিনীরূপে। বিয়ের মাধ্যমে পাপাচার কামাচার অন্যায় অশ্লীলতা থেকে মানুষ হেফাজতে থাকে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন : হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহ করতে সক্ষম তারা যেন বিয়ে করে নেয়। কারণ, বিয়ে দৃষ্টি অবনত রাখতে ও লজ্জাস্থানের হেফাজতে অধিক কার্যকর। আর যে ব্যক্তি বিয়ে করতে অক্ষম সে যেন রোজা রাখে। কেননা, রোজা তার যৌন চাহিদাকে অবদমিত করে। (বুখারি, মুসলিম)।

বর্তমানে বিয়েশাদিতে অনেক খরচ করা হয়, অপব্যয় করা হয়। এটা উচিত নয়। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে বিয়েতে খরচ কম ও সহজ সে বিয়েই অধিক বরকতপূর্ণ। বায়হাকি। বিয়ের মোহর বেশি করার জন্য ছেলে পক্ষকে অনেক চাপ দেওয়া হয়, এটা ইসলামসম্মত নয়। অনেক বিয়েতে মেয়ে পক্ষ থেকে জোর করে যৌতুক নেওয়া হয়, ইসলাম এটাকেও নিরুৎসাহিত করেছে। ইদানীং চট্টগ্রামে কোরবানির ঈদে কনের পক্ষ থেকে বরের পরিবারকে যৌতুক হিসেবে গরু দেওয়ার পরিবর্তে ছাগল দেওয়াকে কেন্দ্র করে কনের হত্যাকাণ্ডের অমানবিক ঘটনা আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করেছে। বর্তমানে বিয়ে উপলক্ষে গায়ে হলুদের অনৈসলামিক অপসংস্কৃতির কর্মকাণ্ড, যেমন গানবাজনার আয়োজন, নাচগানের কনসার্ট করা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনার ছড়াছড়ি এগুলো ও ইসলাম সমর্থন করে না। পারিবারিক জীবনের সবকিছুই হবে আল কোরআন সুন্নাহ মোতাবেক। পিতা-মাতার সুপরামর্শ অনুযায়ী পরিবার পরিচালিত হবে। বড়কে সম্মান করা, ছোটকে স্নেহ করা, ছেলেমেয়ে, সন্তান-সন্তুতি সবাইকে ইসলামী তাহজিব অনুযায়ী ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করা। দুঃখে-সুখে একে অপরের পাশে থাকা ইসলামী আদর্শ পরিবারের বৈশিষ্ট্য। অনেক পরিবারে বোনকে পিতার সম্পত্তির ন্যায্য হক তথা অধিকার দেওয়া হয় না। এটা ইসলামী পরিবারের বৈশিষ্ট্য নয়। পিতা-মাতা, ভাইবোন আত্মীয়-স্বজন, স্বামী-স্ত্রীর অধিকার সমুন্নত রাখা, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামদের জীবন চর্চা করে সে অনুযায়ী আমাদের পারিবারিক জীবন পরিচালিত করতে হবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : খতিব, মনিপুর বায়তুল আশরাফ (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ, মিরপুর-২, ঢাকা

বিডি প্রতিদিন/এমআই

 

সর্বশেষ খবর