২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০৮:৪৪

সমাজ সংস্কারে মুহাম্মাদুর রসুল (সা.)-এর আদর্শ

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

সমাজ সংস্কারে মুহাম্মাদুর রসুল (সা.)-এর আদর্শ

আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই রসুলুল্লাহ (সা.) এর জীবনে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ’ (সুরা আহযাব-২১)। মহানবী (সা.) একদিকে ছিলেন মুসলিম জাহানের সফল রাষ্ট্র নায়ক, অন্যদিকে ছিলেন তিনি শ্রেষ্ঠ সমাজসেবক। তিনি খাদিজা (রা.)-এর স্বামী, ফাতেমা (রা.)-এর পিতা এবং হাসান হুসাইন (রা.)-এর নানা ছিলেন। তিনি রণাঙ্গনের সেনাপতি ছিলেন, ছিলেন মক্কার মরুভূমিতে একজন এতিম রাখাল। তাঁর মধ্যে রয়েছে সমাজের প্রতিটি মানুষের অনুসরণের জন্য উত্তম আদর্শ। নবুওয়াত লাভের অনেক আগেই তিনি আদর্শ মহামানবে আখ্যায়িত হয়েছেন। তিনি ছিলেন সবার কাছে বিশ্বস্ত আল-আমিন। তাঁর কাছে আল্লাহ প্রেরিত ধর্মে শোষণ নেই, নিপীড়ন নেই, অত্যাচার-নির্যাতন নেই। দুর্নীতি নেই। ধনী-গরিবের কোনো বৈষম্য নেই। নেই প্রতিশোধের জঘন্য প্রবণতা। আছে শুধু ক্ষমা, সহিষ্ণুতা, উদারতা ও সহমর্মিতার উজ্জ্বল আদর্শ। তাঁর অনুপম চরিত্র মাধুরীর প্রশংসা করেছেন স্বয়ং আল্লাহতায়ালা। তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী’ (সুরা আল কলম-৪)। সাহাবি আনাস (রা.) বলেন, আমি ১০ বছর রসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিয়মিত কাজ করেছি। আল্লাহর শপথ! তিনি কখনো আমাকে বলেননি, তুমি কেন এটা করলে? কেন ওটা করলে না (সহিহ বুখারি)। মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন মানবতার নবী। ব্যক্তি, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে প্রবর্তন করেছিলেন মানবতার উজ্জ্বল নমুনা। ক্ষমা করতেন তিনি ঘাতক চিরশত্রুকেও। মুসলিম ও অমুসলিম সবার জন্য ছিলেন তিনি উদার। জীবনের শুরু থেকে আত্মনিয়োগ করেন জনসেবায়। বন্ধু-শত্রু সবার সঙ্গে তিনি অঙ্গীকার রক্ষা করতেন। আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষায় তিনি খুবই যত্নবান ছিলেন। ছিলেন বড়দের প্রতি পরম শ্রদ্ধাশীল ও ছোটদের প্রতি দয়ালু। সর্বোত্তম আদর্শের সমাহার ছিল তাঁর জীবনে। ফলে তিনি মানবতা বিপন্ন বর্বর আরব জাতির অন্তরে বিশ্বাসের সৌধ নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাই অশান্ত মানবগোষ্ঠী দলে দলে তাঁর শান্তির পতাকাতলে এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়তে আরম্ভ করে।

রবিউল আউয়াল মাসে তাঁর আদর্শ অনুসরণই হবে আমাদের আনন্দের মূল উৎস, সব ধরনের সংস্কারের মানদণ্ড। তাঁর আদর্শ অনুসরণে ঘুরে দাঁড়াতে পারে একটি ঘুণেধরা জাতি। মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে সমাজ সংস্কারের বাস্তব নমুনা মহানবী (সা.) দেখিয়ে গেছেন সবার চোখে আঙুল দিয়ে। রসুলে খোদা (সা.) ছিলেন দিশাহারা মানবজাতির সার্বিক কল্যাণের খোদায়ি রাহবার, আদর্শ সমাজ সংস্কারক। ছিলেন গণমানুষের মৌলিক চাহিদা এবং আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বিধানকারী মহান রাষ্ট্রনায়ক। রণক্ষেত্রে ছিলেন সেনাধ্যক্ষ সিপাহসালার। সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে ছিলেন নিবেদিত সমাজসেবক। পারিবারিক সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় ছিলেন অসাধারণ গৃহকর্তা। মানব কল্যাণে তিনি ছিলেন দরদি প্রাণ। এককথায় জীবনের সর্বক্ষেত্রে তিনি গড়েছিলেন বিশ্ববাসীর জন্য এক অনন্য সংস্কারমূলক আদর্শ। যেখানে অন্যায় নেই। উগ্রতা নেই, শোষণ-নিপীড়ন নেই, খুন, সন্ত্রাস, ধর্ষণ ও দুর্নীতি নেই। নেই স্বজনপ্রীতি ও প্রতিশোধের জঘন্য প্রবণতা। আছে শুধু বিনয়, আত্মত্যাগের বিস্ময়কর কাহিনি, ধৈর্য-সহনশীলতার সচিত্র উদাহরণ, আর উদারতার নির্মল আদর্শ। মহান প্রভুর ঘোষণা- ‘আর তোমরা আল্লাহর সেই করুণার কথা স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মনে সম্প্রীতি দান করেছেন, ফলে এখন তোমরা তাঁর অনুগ্রহে পরস্পর ভাই ভাই হয়েছ’ (আলে ইমরান-১০৩)।

আমাদের এ সমাজ মহানবী (সা.)-এর আদর্শ থেকে দূরে, অনেক দূরে। মানবতার চরম বিপর্যয় ও অমানবিক বিড়ম্বনার ইতি টেনে চলমান বিশ্বে আবারও সুখ-শান্তির স্বর্গীয় সমাজ বিনির্মাণের আন্দোলনে মহানবী (সা.)-এর আদর্শে দেশটাকে সংস্কার করার বিকল্প নেই। নেই মুক্তির কোনো উপায়।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা

বিডি প্রতিদিন/এমআই

সর্বশেষ খবর