অভিশপ্ত শয়তান মানুষকে বিভ্রান্ত করার চ্যালেঞ্জ নিয়েছে। মানুষের এই চিরশত্রু মানুষের বাসস্থানে প্রবেশ করে অপূরণীয় ক্ষতি করে ফেলতে পারে। তাই মুসলমানদের জন্য এই ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।
নিম্নে শয়তানের প্রভাব থেকে সুরক্ষার কিছু আমল বর্ণনা করা হলো :
১. রাতে সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া : আবু মাসউদ (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, কেউ যদি রাতে সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত পাঠ করে, সেটা তার জন্য (বিপদাপদ ও শয়তানের অনিষ্ট থেকে) যথেষ্ট। (বুখারি, হাদিস : ৫০০৯)
৩. পানাহারের সময় আল্লাহর নাম নেওয়া : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘যখন কোনো ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশ এবং খাবার গ্রহণের সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে, তখন শয়তান হতাশ হয়ে (তার সঙ্গীদের) বলে, তোমাদের (এখানে) রাত যাপনও নেই, খাওয়াও নেই। আর যখন সে প্রবেশ করে এবং প্রবেশকালে আল্লাহর নাম স্মরণ না করে, তখন শয়তান বলে, তোমরা থাকার স্থান পেয়ে গেলে। আর যখন সে খাবারের সময় আল্লাহর নাম স্মরণ না করে, তখন সে (শয়তান) বলে, তোমাদের নিশি যাপন ও রাতের খাওয়ার আয়োজন হলো।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫১৫৭)
৪. সন্ধ্যা হলে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ঘরের দরজা বন্ধ করা : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন সন্ধ্যা হয়, তখন তোমাদের সন্তানদের ঘরে আটকে রাখো। কেননা এ সময় শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে। তবে রাতের কিছু অংশ অতিক্রম করলে তখন তাদের ছেড়ে দিতে পার। আর ঘরের দরজা বন্ধ করবে। কেননা, শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না...। (বুখারি, হাদিস : ৫৬২৩)
৫. ঘরে সুরা বাকারা পাঠ করা : হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) তোমরা ঘরগুলোকে কবরস্থান বানিয়ো না, যে ঘরে সুরা বাকারা পাঠ করা হয়, শয়তান সে ঘর থেকে পলায়ন করে। (মুসলিম, হাদিস : ১৭০৯)
৬. শয়তানের প্রিয় বস্তু ঘরে না রাখা : শয়তানের প্রিয় জিনিস থেকে মুক্ত রাখতে পারলে শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। পবিত্র কোরআনে শয়তানের প্রিয় বস্তুর ব্যাপারে এসেছে, ‘হে মুমিনরা, মদ, জুয়া আর মূর্তী ও ভাগ্য নির্ধারক তীর ঘৃণিত শয়তানি কাজ, তোমরা তা বর্জন করো, যাতে তোমরা সাফল্যমণ্ডিত হতে পারো। ’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৯০)
৭. ঘরকে গান-বাজনামুক্ত রাখা : পবিত্র কোরআনে শয়তানের কর্ম সম্পর্কে এসেছে : ‘তোমার কণ্ঠ দিয়ে তাদের মধ্যে যাকে পারো প্ররোচিত করো, তাদের ওপর ঝাপিয়ে পড় তোমার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে...।’ (সুরা বনি ইসরাইল/ইসরা, আয়াত : ৬৪)
তাফসিরবিদদের মতে, গান-বাজনা হলো শয়তানের আওয়াজ। কাজেই ঘর গান-বাজনামুক্ত থাকলে শয়তানের প্রভাবমুক্ত থাকে।
৮. ঘরে প্রবেশের সময় দোয়া পড়া : রাসুলুল্লাহ ( সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি যখন তার ঘরে ঢুকে, তখন যেন সে বলে—উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাল মাওলিজে ওয়া খাইরাল মাখরিজি বিসমিল্লাহি ওলাজনা ওয়া বিসমিল্লাহি খারাজনা, ওয়া আলাল্লাহি রাব্বিনা তাওয়াক্কালনা।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে ঘরে প্রবেশের ও বের হওয়ার কল্যাণ চাই। আল্লাহর নামে (ঘরে) প্রবেশ করি এবং আল্লাহর নামে ঘর থেকে বের হই; আর আমাদের রব আল্লাহর ওপর ভরসা রাখি।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৯৬ )
৯. ঘরে কোনো বিছানা বিছিয়ে পরিত্যক্ত না রাখা : যে বিছানায় দীর্ঘদিন ধরে কেউ থাকে না অথচ তা বিছিয়ে রাখা হয় এমন বিছানায় শয়তান আশ্রয় নেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘একটি বিছানা ব্যক্তির জন্য, একটি তার পরিবারের জন্য, একটি অতিথির জন্য, আর চতুর্থটি শয়তানের জন্য।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩৩৮৫)
১০. বাথরুমে প্রবেশের সময় দোয়া পড়া : টয়লেট ও গোসলখানা মানুষের জন্য স্পর্শকাতর স্থান। এগুলো ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সাধারণত পায়খানার স্থানে শয়তান এসে থাকে। সুতরাং তোমাদের কেউ পায়খানায় প্রবেশ করলে যেন বলে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল খুবসি ওয়াল খাবায়িস।’
অর্থ : ‘আমি আল্লাহর কাছে শয়তান ও যাবতীয় নোংরা বিষয় থেকে আশ্রয় চাই।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৬; বুখারি, হাদিস : ৬৩২২)
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন