হিজরতের পর মদিনায় ইসলামের কাজ গতিশীল হতে লাগল। ইসলামের সুশীতল হাওয়া পৃথিবীব্যাপী ছড়াতে শুরু করল। মুসলানের সংখ্যাও বাড়তে লাগল। প্রয়োজন দেখা দিল নামাজের সময় হলে মুসল্লিদের অবগতির জন্য কোনো একটা ব্যবস্থাকরণের। সে জন্য রাসুল (সা.)-এর দরবারে দফায় দফায় বৈঠকও হলো। সঠিক কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছা গেল না।
দয়াময় মাওলা আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ ইবনে আবদে রাব্বিহি (রা.)সহ একাধিক সাহাবিকে আজানের শব্দগুলো স্বপ্নযোগে শিখিয়ে দিলেন। ঘুম থেকে জেগে দেরি করলেন না আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ। দ্রুত চলে গেলেন রাসুল (সা.) এর দরবারে। বিস্তারিত খুলে বললেন। রাসুল (সা.) আনন্দিত হলেন এবং বেলাল (রা.)-কে ডেকে আজান দিতে বললেন। বিলাল (রা.) ছিলেন সুস্পষ্টভাষী, বাগ্মী, সুমধুর ও সুউচ্চ কণ্ঠস্বরের অধিকারী। এটি ছিল ইসলামের সর্বপ্রথম আজান, যা বিলাল (রা.)-এর সৌভাগ্যে জুটল। এরপর থেকে তিনি রাসুল (সা.) এর মসজিদে প্রধান মুয়াজ্জিন হিসেবে আজানের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর অনুপস্থিতি কখনো সেই দায়িত্ব পালন করতেন হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.)। তবে তাহাজ্জুদ ও ফজরের আজানে তাঁদের দুজনের মধ্যে পালা পরিবর্তন হতো। বিলাল (রা.) তাহাজ্জুদের আজান দিলে, উম্মে মাকতুম (রা.) দিতেন ফজরের আজান। (মুসলিম : ১/৩৪৯; সহিহ ইবনে খুজাইমা ৩/২১০)
রাসুল (সা.) এর আবাসে-প্রবাসে সর্বত্রে আজান দিতেন হজরত বিলাল (রা.)। এক সফরে রাসুল (সা.) রাতের প্রায় শেষ প্রহরে কোনো এক এলাকায় অবতরণ করলেন। দীর্ঘ সফরে ক্লান্তশ্রান্ত সাহাবি ঘুমিয়ে পড়লেন। ফজরের সময় হলে সবাইকে জাগিয়ে দেবে কে? সেজন্যে দায়িত্ব দিলেন মুয়াজ্জিন বিলাল (রা.)-কে। তিনি দু-চার রাকাত নামাজ পড়ে পূর্ব দিগন্তের দিকে তাকিয়ে হাওদার সাথে হেলান দিয়ে বসে গেলেন। যেন সুবহে সাদিক হওয়ার সাথে সাথে আজান দিতে পারেন এবং সবাইকে জাগিয়ে দিতে পারেন। আল্লাহর কী হেকমত! এই অবস্থায় তিনিও অন্যদের মতো গভীর তন্দ্রায় ডুবে গেলেন। সুবহে সাদিক হল, সারা দুনিয়ায় আলো ছড়িয়ে পড়ল, এমনকি সূর্য উদিত হয়ে তার কিরণ ছড়াতে লাগল। কেউ জাগ্রত হলেন না। সবার আগে জাগলেন রাসুল (সা.), জাগালেন সবাইকে। সাহাবায়ে কেরাম পেরেশান হয়ে গেলেন। রাসুল (সা.) তাদের সান্ত্বনা দিয়ে ইরশাদ করলেন, তোমাদের কোনো দোষ নেই। সামনে চলো! মাকরুহ ওয়াক্ত পার হওয়ার পর হজরত বিলাল (রা.)-কে আজান দিতে বললেন। তিনি আজান দিলেন। অতপর রাসুল (সা.) জামাতের সাথে ফজরের নামাজ আদায় করলেন। (মুসলিম : ১/২৩৮; আস-সুনানুল কুবরা, বায়হাকি ২/৩০৮)ইসলামের প্রথম আজানদাতা সৌভাগ্যবান সাহাবি বিলাল (রা.) (মুসনাদে আহমাদ ৩৮/১৪৭; সহিহ ইবনে খুযাইমা ২/২১৩)
লেখক : মুহাদ্দিস, আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাইজদী, নোয়াখালী।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন