সবার ঈমান সমান নয়। ঈমান ও আমলের দিক থেকে মুমিনদের বিভিন্ন স্তর আছে। আছে ঈমানের বিবেচনায় একজনের ওপর অন্যজনের শ্রেষ্ঠত্ব।
মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘লক্ষ করো, আমি কিভাবে তাদের একদলকে অন্যদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি, পরকাল তো নিশ্চয়ই মর্যাদায় মহত্তর ও গুণে শ্রেষ্ঠতর।’ (সুরা বনি ইসরাঈল/ইসরা, আয়াত : ২১)
মুমিনের তিন স্তর : মহান আল্লাহ মুমিনদের তিন স্তরে ভাগ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,‘অতঃপর আমি কিতাবের অধিকারী করলাম আমার বান্দাদের মধ্যে তাদের, যাদের আমি মনোনীত করেছি। তবে তাদের মধ্যে কেউ নিজের প্রতি জুলুম করেছে, কেউ মধ্যপন্থা অবলম্বন করেছে, কেউ আল্লাহর ইচ্ছায় কল্যাণের কাজে অগ্রসর হয়েছে। এটাই (মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে) মহা অনুগ্রহ।’ (সুরা ফাতির, আয়াত : ৩২)।এখানে মহান আল্লাহ ঈমানের দিক দিয়ে মুমিন বান্দাদের তিনটি স্তরে ভাগ করেছেন-
১. এদের মধ্যে যারা হেদায়েতের পথে অগ্রসর হয়, তারা ওয়াজিব ও মুস্তাহাব কাজ সঠিক পদ্ধতিতে আদায় করে এবং হারাম বিষয় ও ইসলামী শরিয়তের অপছন্দীয় বিষয়াবলী থেকে বিরত থাকে, তারাই নৈকট্য প্রাপ্ত।
২. যারা মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী, তারা তাদের ওপর অর্পিত ওয়াজিব বিষয় সঠিক পদ্ধতিতে আদায় করে থাকে এবং হারামকৃত বিষয় থেকে বিরত থাকে।
৩. আর যারা নিজের আত্মার প্রতি জুলুম করেছে, তারা কিছু হারাম কাজে পতিত হয় এবং কিছু ওয়াজিব বিষয় সমূহ আদায়ে ত্রুটি করে। যদিও তাদের ঈমান আছে।
পবিত্র কোরআনের ভাষ্য মতে, ঈমানদাররা এই তিন ভাগে বিভক্ত।
মক্কা বিজয়ের যারা ঈমান এনেছেন, তাঁদের বিশেষ মর্যাদা : মক্কা বিজয়ের আগে যারা ঈমান এনেছেন, ইসলামে তাঁদের বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যেসব মুহাজির ও আনসার (ঈমানের দিক দিয়ে) অগ্রবর্তী ও প্রথম, আর যেসব লোক একান্ত নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুগামী, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তিনি তাদের জন্য এমন জান্নাত প্রস্তুত করে রেখেছেন যার তলদেশ দিয়ে নহর সমূহ প্রবাহিত। তাতে তারা চিরস্থায়ীভাবে অবস্থান করবে। সুতরাং এটাই হচ্ছে মহা সাফল্য।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ১০০)
আমলের ভিত্তিতে মর্যাদা বৃদ্ধি : যার যত বেশি সত্ আমল আছে, সে ব্যক্তি ঈমানের দিক থেকে তত বেশি শক্তিশালী এবং এর ফলে জান্নাতেও তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারাই সত্যিকারের ঈমানদার। এদের জন্যেই আছে তাদের প্রতিপালকের কাছে উচ্চমর্যাদা (বিশেষ মর্যাদা)। আরো আছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ৪)
দ্বিনি জ্ঞানের কারণে বিশেষ মর্যাদা : মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদের উচ্চ মর্যাদা দান করবেন।’ (সুরা মুজাদালা, আয়াত : ১১)
মর্যাদার মূল ভিত্তি তাকওয়া : ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের মর্যাদার মূল ভিত্তি তাকওয়া বা খোদাভীতি।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ, আমি তোমাদের এক নারী ও এক পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি আর তোমাদের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি। যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সে-ই বেশি মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে বেশি তাকওয়া সম্পন্ন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১৩)
মহান আল্লাহ আমাদের ঈমানি মর্যাদা বৃদ্ধি করুন।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ