যেকোনো জাতি-গোষ্ঠীর জন্য শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা অনেক বড় নিয়ামত। ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবার ঐকান্তিক চেষ্টা থাকে শান্তি ও নিরাপত্তাকে বাস্তবায়নের জন্য, যাতে মানুষ সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারে।
ইসলাম মানবজাতির যে নিরাপত্তা দিয়েছে তা অন্য কোনো ধর্ম দেয়নি। কোনো সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন ব্যক্তি যদি তা নিয়ে ভাবে সে ইসলামের সত্যতা খুঁজে পাবে। জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তায় ইসলামের বিধি-বিধান দেওয়া হয়েছে।
জীবনের নিরাপত্তা : ইসলাম মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিয়েছে। এ জন্য হত্যা-রাহাজানি হারাম ঘোষণা করেছে। যারা এর ব্যতিক্রম করবে তাদের জন্য আছে কঠোর হুঁশিয়ারি। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে জেনেশুনে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম। সেখানে সে সর্বদা থাকবে, আল্লাহ তার প্রতি গজব নাজিল করবেন এবং তাকে লানত করবেন। আর আল্লাহ তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৯৩)
অন্যায়ভাবে কেউ কাউকে হত্যা করলে এর জন্য আছে কিসাসের বিধান।
কোনো অমুসলিম নাগরিকও ইসলামী রাষ্ট্রে নিরাপদ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি যদি কোনো চুক্তিবদ্ধ (অমুসলিম)-কে হত্যা করে তাহলে সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ তার (জান্নাতের) সুগন্ধি ৪০ বছরের দূরত্ব থেকে পাওয়া যায়।’
(বুখারি, হাদিস : ৬৯১৪)
বিবেক-বুদ্ধি ঠিক রাখা : মানুষকে আল্লাহ তাআলা বিবেক-বুদ্ধি দিয়েছেন। এই বিবেক-বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে সে ভালো-মন্দ পথ নির্বাচন করে থাকে।
এই বিবেক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে। যেসব কারণে মানুষের বিবেক-বুদ্ধি হারিয়ে যায় কিংবা লোপ পায়, এগুলো হারাম করে দিয়েছে। যেমন—মদ ও মাদক জাতীয় যত দ্রব্য আছে সব কিছু ইসলামে নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমার বেদি ও জুয়ার তীর অপবিত্র, শয়তানি কাজ। সুতরাং এসব পরিহার করো, যাতে তোমরা সফলতা অর্জন করো।’
(সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৯০)
মাদককে ‘উম্মুল খাবাইস’ বা অনিষ্টের মূল বলা হয়। এ জন্য মাদক সেবনকারীর জন্য ইসলামে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
সম্পদের নিরাপত্তা : ইসলাম মানুষের সম্পদের নিরাপত্তা দিয়েছে। তাই চুরি, ডাকাতি ইত্যাদিকে বড় অপরাধ বলে সাব্যস্ত করেছে। এসবের জন্য অঙ্গ কর্তনসহ গুরুতর শাস্তির বিধান রেখেছে। আল্লাহ বলেন, ‘যে পুরুষ ও যে নারী চুরি করে, তাদের উভয়ের হাত কেটে দাও, যাতে তারা নিজেদের কৃতকর্মের প্রতিফল পায় (এবং) আল্লাহর পক্ষ থেকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। আল্লাহ ক্ষমতাবান, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৩৮)
মানুষের সম্মানের নিরাপত্তা : অন্যকে অসম্মান করা পাপ। কারো দোষচর্চা করা পাপ। কারো পেছনে গোয়েন্দাগিরি করাও পাপ। কোনো নিষ্পাপ ব্যক্তির ওপর দোষ চাপিয়ে দেওয়া জঘন্য অপরাধ বলে অবহিত করেছে ইসলাম। কোনো সতী নারীকে অপবাদ দেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ রেখো, যারা চরিত্রবতী, সরলমতী মুমিন নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশাপ্ত হয়েছে আর তাদের জন্য আছে ভয়ানক শাস্তি।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ২৩)
সামাজিক নিরাপত্তা : সমাজে বিভিন্ন মানুষের চলাফেরা যখন একসঙ্গে হবে, তখন স্বাভাবিকভাবে নানা সমস্যা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে যেন কোনো বিশৃঙ্খলা, মতবিরোধ ও ঝগড়া-বিবাদ না হয়, সে জন্য আমিরের আনুগত্য করাকে বাধ্য করেছে ইসলাম। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! আল্লাহর নির্দেশ মান্য করো, নির্দেশ মান্য করো রাসুলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৯)
পরনিন্দা, গিবত ইত্যাদি হারাম করা হয়েছে। কারণ এসব হচ্ছে সামাজিক ব্যাধি।
বংশীয় নিরাপত্তা : মানুষের বংশ বিস্তার ঠিক রাখার ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম। এ জন্য ব্যভিচার ও বিচারের দিকে নিয়ে যায়—এমন সব কাজ হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘আর (তোমরা) ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না, নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩২)
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন