নারী সাহাবিদের অন্যতম ছিলেন আয়েশা (রা.)। তিনি ছিলেন ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকর (রা.)-এর সুযোগ্যা কন্যা এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রিয়তমা একজন স্ত্রী। গোটা জীবনে তিনি শিক্ষাদীক্ষা, গৃহস্থালি কাজ এবং সামাজিক দায়িত্ব পালনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে তাঁর দাম্পত্য জীবনের অংশবিশেষ এখানে উল্লেখ করা হলো—
সাদাসিধা দাম্পত্য জীবন : রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে আয়েশা (রা.)-এর দাম্পত্য জীবন অত্যন্ত সাদামাটা ও সাধারণ ছিল। তাঁদের ঘরে দারিদ্র্য ছিল, তবু তাঁরা সুখী ছিলেন। বৈষয়িক ও চারিত্রিক ক্ষেত্রে সর্বোত্কৃষ্ট শিক্ষা তাঁদের জীবনে পাওয়া যায়। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি একবার উরওয়া (রহ.)-কে লক্ষ্য করে বললেন, ‘ভাগ্নে। আমরা (মাসের) নতুন চাঁদ দেখতাম, আবার নতুন চাঁদ দেখতাম।
এভাবে দুই মাসে তিনটি নতুন চাঁদ দেখতাম। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কোনো ঘরে আগুন জ্বালানো হতো না। [উরওয়া (রহ.) বলেন] আমি জিজ্ঞাসা করলাম, খালা। আপনারা তাহলে কিভাবে বেঁচে থাকতেন? তিনি বলেন, দুটি কালো জিনিস অর্থাৎ খেজুর আর পানিই শুধু আমাদের বাঁচিয়ে রাখত। অবশ্য কয়েক ঘর আনসার পরিবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতিবেশী ছিল। তাদের কিছু দুধেল উটনি ও বকরি ছিল। তারা রাসুল (সা.)-এর জন্য দুধ হাদিয়া পাঠাত। তিনি আমাদের তা পান করতে দিতেন।’(বুখারি, হাদিস : ২৩৯৭)
দাম্পত্য জীবনে পরীক্ষা : দাম্পত্য জীবনে টুকিটাকি ঝামেলা, রাগ-অভিমান হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। আয়েশা (রা.)-এর অভিমান বুঝে রাসুলুল্লাহ (সা.) হাসিমুখে সমাধান করে নিতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) আমাকে বলেন, আমি জানি কখন তুমি আমার প্রতি খুশি থাকো এবং কখন রাগান্বিত হও। আমি বললাম, কী করে আপনি তা বুঝতে সক্ষম হন? তিনি বলেন, তুমি প্রসন্ন থাকলে বলো, না! মুহাম্মাদ (সা.)-এর রবের কসম! কিন্তু তুমি আমার প্রতি নারাজ থাকলে বলো, না! ইবরাহিম (আ.)-এর রবের কসম! শুনে আমি বললাম, আপনি ঠিকই বলেছেন। আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রাসুল! সে ক্ষেত্রে শুধু আপনার নাম মুবারক উচ্চারণ করা থেকেই বিরত থাকি। (বুখারি, হাদিস : ৪৮৫২)
দাম্পত্য জীবনে আয়েশা (রা.)-এর ওপর অপবাদ লাগানোর ঘটনাটি ছিল দুঃখজনক। এটা তাঁদের দাম্পত্য জীবনে কঠিন পরীক্ষা হিসেবে আসে। কিছু মুনাফিক আয়েশা (রা.)-এর চরিত্র সম্পর্কে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছিল। আল্লাহ তাআলা আয়েশা (রা.)-এর নিষ্কলুষতা ঘোষণা করেছেন। (সুরা : নুর, আয়াত : ১১)। আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে প্রিয়তমার উন্নত চরিত্রের সার্টিফিকেট পেয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে আরো বেশি স্নেহ ও সম্মান করতেন।
পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা : রাসুলুল্লাহ (সা.) আয়েশা (রা.)-কে সবচেয়ে বেশি মহব্বত করতেন। প্রিয়তমা স্ত্রীকে ‘হুমায়রা’ উপাধিতে ডাকতেন। সাহাবিদের সঙ্গে তাঁর প্রতি ভালোবাসার স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। আমর ইবনে আস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) তাঁকে ‘জাতুস সালাসিল’ যুদ্ধের সেনানায়ক করে পাঠিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি তাঁর খিদমতে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, মানুষের মধ্যে কে আপনার কাছে সবচেয়ে প্রিয়? তিনি বলেন, আয়েশা (রা.)। আমি বললাম, পুরুষদের মধ্যে কে? তিনি বলেন, আয়েশার পিতা (আবু বকর রা.)। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তারপর কোন লোকটি! তিনি বলেন, উমর ইবনে খাত্তাব (রা.)। তারপর আরো কয়েকজনের নাম উল্লেখ করলেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৪০০)
পরস্পরের প্রতি হালাল ভালোবাসার আরেকটি খণ্ডচিত্র আয়েশা (রা.) নিজে ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি হাড় থেকে গোশত কামড়ে নিতাম। তারপর আমি যেখানে মুখ রাখতাম রাসুলুল্লাহ (সা.)-ও সেখানে তাঁর মুখ রাখতেন। অথচ তখন আমি ঋতুমতী ছিলাম। আমি পাত্র থেকে পানি পান করতাম। তারপর তিনিও সেই স্থানে মুখ রাখতেন, যেখানে আমি মুখ রাখতাম। অথচ আমি তখন ঋতুমতী ছিলাম।’ (নায়াসি, হাদিস : ৭০)
রাসুল (সা.) গার্হস্থ্যকর্মে সাহায্য-সহযোগিতা করতেন। আসওয়াদ (রহ.) বলেন, ‘আমি আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, নবী করিম (সা.) ঘরে থাকা অবস্থায় কী করতেন? তিনি বলেন, ঘরের কাজকর্মে ব্যস্ত থাকতেন। অর্থাৎ পরিজনের সহায়তা করতেন। আর নামাজের সময় এলে নামাজে চলে যেতেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪২)
মুসলিম দাম্পত্য জীবনের আদর্শ রূপায়ণে আয়েশা (রা.)-এর জীবন থেকে শেখার আছে অনেক কিছু।
লেখক : খতিব ও মাদরাসা শিক্ষক , রায়পুর, লক্ষ্মীপুর।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ