শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

টুঙ্গিপাড়ার খোকা থেকে শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা

বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী

টুঙ্গিপাড়ার খোকা থেকে শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত, বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবন, মসজিদ, মন্দির, গির্জা, নদ-নদী, খাল-বিল, পাহাড়-পর্বতসহ প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্যে ভরপুর আমাদের বাংলাদেশ। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরে সিকিম ও মেঘালয়, পূর্বে আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও মিয়ানমার। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছেন স্বাধীন বাংলার মহান স্থপতি বাংলার অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মময় রাজনৈতিক জীবন। এদেশের কৃষক-শ্রমিক, মুটে-মজুর ও মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য পরাধীনতার শিকল থেকে আমাদের দেশমাতৃকা ও বাঙালি জাতিকে মুক্ত করতে যিনি জীবনের সিংহভাগ সময় জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সুচিন্তিত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশের নিপীড়িত বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা যে সম্ভব তা সমগ্র পৃথিবীর মানুষের কাছে তিনি প্রমাণ করেছেন। বঙ্গবন্ধু কেবল বাঙালি জাতির অধিনায়ক ছিলেন না, তিনি ছিলেন পৃথিবীর বঞ্চিত সমগ্র মানব গোষ্ঠীর পথ প্রদর্শক ও মহান নেতা। বঙ্গবন্ধু কেবল রাজনৈতিক স্বাধীনতার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলেন না, তিনি চেয়েছিলেন বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবিক রাষ্ট্রীয় সভ্যতা, সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা, সব মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুখী সমৃদ্ধিশালী জাতি গঠনের মাধ্যমে বিশ্বসভায় বাঙালি জাতির সুদৃঢ় অবস্থান সৃষ্টি করতে। এ মহাপুরুষের জন্ম না হলে হয়তো আজকের বাংলাদেশ আমরা পেতাম না।

বঙ্গবন্ধুর জীবন, কর্ম, দর্শন বিশ্ব মানবতার জন্য তাঁর চিন্তা ধারাবাহিকভাবে লিপিবদ্ধ করা দুঃসাধ্য বৈকি? প্রাসঙ্গিক বিষয়ে সংক্ষেপে নব-প্রজন্মের উদ্দেশ্যে লিপিবদ্ধ করার চিন্তা থেকে এ ক্ষুদ্র প্রয়াস। প্রারম্ভেই আমি টুঙ্গিপাড়ার খোকা থেকে শেখ মুজিব, বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতার পথ পরিক্রমা সংক্ষেপে আলোকপাত করতে চাই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৭ মার্চ ১৯২০ সালে ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন পিতা-মাতার আদরের খোকা। তাঁর পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা সায়েরা খাতুনের চার কন্যা ও দুই পুত্রের মধ্যে শেখ মুজিব ছিলেন তৃতীয় সন্তান। মা-বাবা তাকে খোকা নামে ডাকতেন। শেখ মুজিবের শৈশবকাল কেটেছে টুঙ্গিপাড়া গ্রামে। ১৯২৭ সালে সাত বছর বয়সে নিজ এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খোকার প্রাতিষ্ঠানিক ছাত্রজীবনের সূচনা হয়। তিনি ৯ (নয়) বছর বয়সে ১৯২৯ সালে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে এবং পরবর্তীতে তিনি স্থানীয় মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন। অসুস্থতার কারণে তার লেখাপড়ায় সাময়িক বিরতি ঘটে এবং চার বছর শিক্ষাজীবন ব্যাহত হওয়ার পর ১৯৩৭ সালে পুনরায় স্কুলে ভর্তি হন।

১৯৩৮ সালের ১৬ জানুয়ারি বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল পরিদর্শনে এলে শৈশবকাল থেকে ডানপিটে স্বভাবের শেখ মুজিব দাবি আদায়ের মিছিলের নেতৃত্ব দেওয়ার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরিচিত হন। ১৯৩৮ সালে ১৮ বছর বয়সে তিনি শেখ ফজিলাতুন নেছার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের দুই কন্যা শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও তিন পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল। সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা করার কারণে ১৯৩৯ সালে বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন শুরু হয়। ১৯৪২ সালে বঙ্গবন্ধু এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হওয়ার পর বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষে থাকতেন। ১৯৪৪ সালে শেখ মুজিব কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সম্মেলনে যোগদানের মাধমে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে অভিষিক্ত হন। একই বছরে ফরিদপুর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ১৯৪৬ সালে শেখ মুজিব বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সহকারীর দায়িত্ব লাভ করেন। প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে তিনি মুসলিম লীগের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৪৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। তিনি ঢাকায় অনুষ্ঠিত গণতান্ত্রিক যুব কর্মীদের সম্মেলনে সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৪৮ সালে বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। একই বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করলে বঙ্গবন্ধু তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ করেন। ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিলে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হন কিন্তু পূর্ব বাংলার ছাত্র-জনতার তীব্র প্রতিবাদের মুখে ১৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকে মুক্তি পান। ফরিদপুরের কর্ডন প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর শেখ মুজিবকে পুলিশ গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের প্রায় চার মাস পর ১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। ১৯৪৯ সালের ৩ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে ধর্মঘট ঘোষণা করলে বঙ্গবন্ধু তাদের ধর্মঘটকে সমর্থন জানান। আন্দোলনে যোগ দেওয়ার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধুকে অযৌক্তিকভাবে জরিমানা করে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সৃষ্ট আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুকে আবার গ্রেফতার করা হয়। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সম্মেলনে জেলে থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধু আওয়ামী মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে না গিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে মনোনিবেশ করেন। একই বছর পূর্ব বাংলায় দুর্ভিক্ষ শুরু হলে খাদ্যের দাবিতে তিনি আন্দোলন শুরু করেন এবং ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি কঠোর আন্দোলনের কারণে শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করা হয়। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু কারাগারে অনশন শুরু করেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে সালাম, জব্বার, রফিক, বরকতসহ আরও অনেকে নিহত হন। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বঙ্গবন্ধু জেল থেকে বিবৃতি দেন এবং টানা অনশন অব্যাহত রাখেন। টানা অনশনে অসুস্থ হওয়ায় ১৯৫২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্যগত কারণে বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। ১৯৫৩ সালের ১৬ নভেম্বর প্রাদেশিক আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে তিনি কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন।

১৯৫৪ সালের ১০ মার্চ সাধারণ নির্বাচনে ২৩৭টি আসনের মধ্যে ২২৩টি আসনে যুক্তফ্রন্ট বিজয়ী হয়। বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জ থেকে বিজয়ী হয়ে যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভায় কৃষিমন্ত্রী হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীকালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভা বাতিল ঘোষণা করলে বঙ্গবন্ধু করাচি থেকে ঢাকায় ফিরে এলে তাঁকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। একই বছরের ২৩ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর জেল গেটেই নিরাপত্তা আইনে তাঁকে আবার গ্রেফতার করা হয়। কারা মুক্তির পর ১৯৫৫ সালের ৫ জুন শেখ মুজিব পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে ঢাকার পল্টনের জনসভায় তিনি পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন দাবি করেন। ১৯৫৫ সালের ২১ অক্টোবর আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে ধর্মনিরপেক্ষতাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণপূর্বক দলের নাম পরিবর্তন করে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী লীগ নামকরণ করেন এবং শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করেন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয় এবং তাঁকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। জামিনে মুক্তি পেলেও তাঁর গতিবিধির ওপর নিষেধাজ্ঞা চলতে থাকে। ওই সময় তিনি বারবার গ্রেফতার হন এবং আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। ৪ বছরের সামরিক শাসনের অবসানের পর ১৯৬২ সালের ১৮ জুন শেখ মুজিব মুক্তিলাভ করেন। ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করেন এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ‘সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। তিনি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবিরোধী প্রতিরোধ কমিটি গঠন করেন। শেখ মুজিবের নেতৃত্বে সম্মিলিত বিরোধী দল কম্বাইন্ড অপজিশন পার্টি (কঅপ) গঠিত হওয়ার পর ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কঅপ-এর পক্ষ থেকে মিস ফাতিমা জিন্নাহকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ ফাতিমা জিন্নাহকে সমর্থন করে। নির্বাচনী প্রচারণার সময় শেখ মুজিবকে নির্বাচনের ১৪ দিন আগে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। ওই নির্বাচনে ফিল্ড মার্শাল জেনারেল আইয়ুব খান বন্দুকের নলে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৬৬ সালের ১৮ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির সনদ ৬ দফা গৃহীত হয়। ৬ দফার পক্ষে দেশব্যাপী জনমত গঠনে প্রচারণা শুরু করলে বঙ্গবন্ধুকে সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকায় গ্রেফতার করা হয়। আইয়ুব সরকার তিন মাসে শেখ মুজিবকে আটবার গ্রেফতার করে নির্জন কারাবাসে প্রেরণ করে।

১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগে বঙ্গবন্ধুকে এক নম্বর আসামি করে ৩৫ জন বাঙালি সেনা ও সিএসপি অফিসারের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করেন। বঙ্গবন্ধু নিজেদের নির্দোষ দাবি করে আদালতে লিখিত বিবৃতি দেন। এ বিবৃতি বাংলার মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে গেলে শেখ মুজিবসহ সবার বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সাধারণ মানুষের আন্দোলন পর্যায়ক্রমে তীব্র গণআন্দোলনে রূপ নেয়। ছাত্রসমাজ ছয় দফা দাবির সমর্থনে ১১ দফা দাবি উপস্থাপন করে। উদ্ভূত পরিস্থিতি ঠেকাতে পাকিস্তানের সামরিক সরকার ১৯৬৯ সালের ৩০ জানুয়ারি আলোচনার জন্য বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হলে শেখ মুজিব ওদের প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের অভ্যন্তরে মামলার অন্যতম আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হককে নির্মমভাবে হত্যা করা হলে বিক্ষুব্ধ জনতা বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। তীব্র গণআন্দোলনের মুখে সরকার নতি স্বীকারে বাধ্য হয়ে শেখ মুজিবসহ অন্যদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। কারাগার থেকে মুক্তির পর ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ডাকসু এবং ছাত্রলীগ একসঙ্গে ঢাকায় বিশাল সংবর্ধনা সভায় শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন। রাজনৈতিক সংকট নিরসনে আইয়ুব খান রাওয়ালপিন্ডিতে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে ৬ দফার পক্ষে বঙ্গবন্ধু দৃঢ় অবস্থান নিলে বৈঠক কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই ভন্ডুল হয়ে যায়। গোলটেবিল বৈঠক ব্যর্থ হওয়ায় আইয়ুব খান সামরিকপ্রধান ইয়াহিয়া খানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ক্ষমতায় এসে ইয়াহিয়া খান সামরিক শাসন জারি করেন। সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দেন। (চলবে)

লেখক : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মাননীয় বিচারপতি এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সরকারি কৌঁসুলি

সর্বশেষ খবর