করোনার আবহেই শনিবার পশ্চিমবঙ্গে চলমান বিধানসভার নির্বাচনে পঞ্চম দফায় ভোটগ্রহণ শুরু হতে চলেছে। এই দফায় রাজ্যটির উত্তরবঙ্গের ১৩টি ও দক্ষিণবঙ্গের ৩২টি আসন মিলিয়ে মোট ৪৫টি আসনে ভোট নেওয়া হবে। ভোট শুরু হবে সকাল ৭টা থেকে, কোনোরকম বিরতি ছাড়াই চলবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত।
উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোর মধ্যে জলপাইগুড়িতে সাতটি, দার্জিলিংয়ে পাঁচটি ও কালিম্পংয়ে একটি আসনে ভোট নেওয়া হবে। অন্যদিকে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলোর মধ্যে উত্তর চব্বিশ পরগনায় ১৬টি, নদীয়া ও পূর্ব বর্ধমানে প্রত্যেকটিতে আটটি করে আসনে ভোট নেওয়া হবে।
মোট ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১.১৩ কোটি। ৩৪২ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারিত হতে চলেছে। অন্যতম প্রার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন-শিলিগুড়ি কেন্দ্রে রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী সিপিআইএম প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্য, দমদম কেন্দ্রে রাজ্যের বর্তমান মন্ত্রী তৃণমূলের প্রার্থী ব্রাত্য বসু, রাজারহাট-গোপালপুর কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য, ওই কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী গায়িকা অদিতি মুন্সি, কামারহাটি কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী মদন মিত্র, বরানগর কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী রাজ্যের মন্ত্রী তাপস রায়, এই কেন্দ্রে তার প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপির প্রার্থী অভিনেত্রী পার্নো মিত্র, বারাসত কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী অভিনেতা দীপক (চিরঞ্জিত) চক্রবর্তী, বিধাননগর কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসু, মধ্যমগ্রাম কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী অভিনেত্রী রাজশ্রী রাজবংশী, ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী রাজ্যের মন্ত্রী গৌতম দেব ও জলপাইগুড়ি কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী সুখবিলাস বার্মা প্রমুখ।পঞ্চম দফায় উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং ও জলপাইগুড়িতে ভোটের প্রধান ইস্যু হতে চলেছে চা-বাগান ও এই কাজে যুক্ত কৃষকদের কম মজুরিসহ নানা সমস্যা। অন্যদিকে বর্ধমান শহর ও গ্রামাঞ্চলে কৃষিকাজ সম্পর্কিত ইস্যুই বড় হতে চলেছে। কৃষকদের কাছে টানতে বিজেপির পক্ষে প্রধানমন্ত্রী কিশান সম্মান নিধি ও তৃণমূলের পক্ষে কৃষক বন্ধু সম্মান প্রকল্পের সুবিধার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। পঞ্চম দফার আসনগুলোতে লড়াই মূলত ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস ও বিরোধী বিজেপির মধ্যে। তবে কিছু আসনে শক্ত লড়াই দিতে পারে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীরাও।
নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত বুধবার সন্ধ্যায় এই সমস্ত কেন্দ্রে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, দলের সভাপতি জে পি নাড্ডা, অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী-এই ছিল বিজেপির স্টার ক্যাম্পেনার।
তৃণমূলের পক্ষে স্টার ক্যাম্পেনারদের মধ্যে ছিলেন মমতা ব্যানার্জি ও সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি, অভিনেত্রী জয়া বচ্চন ও টালিগঞ্জের একঝাঁক তারকা। আর প্রথম চার দফায় নির্বাচনী প্রচারণায় রাজ্যে না আসলে পঞ্চম দফার ভোটের আগে একেবারে শেষ মুহূর্তে দার্জিলিং জেলায় সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীর সমর্থনে বাংলায় এসেছিলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী।
গত ১০ এপ্রিল চতুর্থ দফায় কোচবিহার জেলার শীতলকুচিতে পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পঞ্চম দফায় অতিরিক্ত সতর্কতা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট করতে ৮৫৩ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। ৪৫টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের জন্য ১৫,৭৮৯টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
পঞ্চম দফায় যে ৪৫টি কেন্দ্রে ভোট হতে চলেছে, ২০১৯ সালের লোকসভার নিরিখে ওইসব কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ে অনেক ভাল জায়গায় অবস্থান করছে বিজেপি। তৃণমূলের থেকে অনেক বেশি বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে আছে গেরুয়া শিবির। যদিও ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল ৩২টি আসন পেয়েছিল, বাম-কংগ্রেস জোটের ঝুলিতে ছিল ১০টি আসন, বিজেপি একটি আসনেও জয়ের মুখ দেখতে পায়নি।
রাজ্যের ২৯৪টি আসনের মধ্যে আগামী ২২ এপ্রিল ষষ্ঠ দফায় ৪৩টি আসনে, ২৬ এপ্রিল সপ্তম দফায় ৩৬টি আসনে, ২৯ এপ্রিল অষ্টম ও শেষ দফায় ৩৫টি আসনে ভোট নেওয়া হবে।
তবে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে লাফিয়ে বাড়ছে তা নিয়ে যথেষ্ট আতঙ্ক ছড়িয়েছে। কারণ নির্বাচনী প্রচারণাকে ঘিরে যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করা হচ্ছে বা মাস্ক, সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে নেতাকর্মী-সমর্থকরা জমায়েতে অংশ নিচ্ছেন তা রীতিমতো আতঙ্কের। এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সামশেরগঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী রেজাউল হকের মৃত্যু এবং আরও একাধিক প্রার্থীর করোনায় সংক্রমিত হওয়ার খবরে উদ্বেগ চরম মাত্রায় পৌঁছায়।
এমন এক পরিস্থিতিতে শেষ তিন দফার ভোটগ্রহণ একটি মাত্র দফায় করা যায় কি না তা নিয়ে শুক্রবার দুপুরেই নির্বাচন কমিশনের আহ্বানে একটি সর্বদল বৈঠক হয়। বৈঠকে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে তাদের মতামত জানানো হয় নির্বাচন কমিশনকে। যদিও ওই বৈঠকে দফা কমানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে কমিশন। বদলে জানানো হয় কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মেনেই প্রচারণার কাজ চলছে। ভার্চুয়াল প্রচারণার সম্ভাবনাও খারিজ করে দিয়েছে কমিশন।
ভোট গণনা আগামী ২ মে। ওইদিন আসাম, কেরেলা, তামিলনাড়ু ও কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল পডুচেরিতেও বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই