২৩ মার্চ, ২০২২ ১৯:০৮
আটজনকে পুড়িয়ে হত্যা

দোষীরা কেউই ছাড়া পাবে না : মমতা

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

দোষীরা কেউই ছাড়া পাবে না : মমতা

মমতা ব্যানার্জি। ফাইল ছবি।

পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার রামপুরহাটে বর্বরোচিতভাবে আটজনকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় মুখ খুললেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, জানিয়ে দিলেন দোষীদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। বৃহস্পতিবারই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাচ্ছেন মমতা।

তার আগে বুধবার কলকাতার নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ‘বিধবা ভাতা’ প্রদানের সূচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার ফাঁকে মমতা বলেন ‘রামপুরহাটে একটা ঘটনা ঘটেছে, সেটা দুর্ভাগ্যজনক। যারা ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা কেউ ছাড় পাবে না এবং আমি খবর পাওয়ার সাথে সাথেই ৫০ বার রামপুরহাটে ফোন করেছি। রামপুরহাটের ওসি, এসডপিওকে সরিয়ে দিয়েছি। আমরা আইবি, ডিআইবিকেও সরিয়ে দিতে বলেছি। আমরা স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) গঠন করেছি। রাজ্যপুলিশের ডিজি সেখানে পড়ে রয়েছেন। আমি ফিরহাদ হাকিমকে পাঠিয়েছিলাম। বৃহস্পতিবার আমি নিজেও সেখানে যাব। আমি আজই যেতাম। কিন্তু কিছু দল (বিরোধীরা) ল্যাংচা খেতে খেতে ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে সেখানে ঢুকছে তাই রাত হয়ে যাবে। তাছাড়া ওরা থাকাকালীন আমি ওখানে যাব না। কারণ পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করতে আমি চাই না।’

তিনি আরও বলেন ‘একটা ঘটনা ঘটেছে, আমরা তার নিন্দা করি। এরাজ্যে ১১ কোটি মানুষ আছে। মধ্যরাতে কোনো একটা গ্রামে গিয়ে যদি কেউ আগুন লাগিয়ে দেয়, খুন করে দেয়...আমরা কেউ তা চাই না। এই ঘটনা অন্যায়, এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং সেক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক রঙ দেখা হবে না। মানবিকতাকে যারা হত্যা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াটাই আমাদের কাজ।’ তার দাবি ‘এর থেকে অনেক বেশি ঘটনা উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট ও রাজস্থানে হয়।’

গণমাধ্যমকে এক হাত নিয়ে তিনি বলেন ‘সরকারের কোনো উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ বাংলার টিভি চ্যানেলগুলো দেখায় না। কিন্তু কোথাও একটা ঘটনা ঘটলো...সারাদিন ওই লাশটা নিয়ে, রক্ত নিয়ে বিষময় করে যাচ্ছে।’

মমতার অভিমত ‘সরকারটা আমাদের। আমরা কি কখনও চাই যে কোনো রক্ত ঝরুক, খুন হোক, বোমাবাজি হোক। এগুলো কারা করে? যারা সরকারে থাকে না, সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করার জন্যই তারাই আমাদের বিরুদ্ধে এসব চক্রান্ত করে। যাতে আমাদের বদনাম হয়।’

রাজ্যটির রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কেও কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন মমতা। তিনি বলেন ‘এখানে একজন লাটশাহেব বসে আছেন। বারবার তিনি বলে উঠছেন যে সবচেয়ে খারাপ রাজ্য বাংলা। প্রতিদিন দার্জিলিং থেকে জলপাইগুড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছেন আর সরকারকে গালিগালাজ করছেন।’ 

একসময় তিনি বলেন ‘আসলে রাজ্যের উন্নয়নের ফলে এরা রাজ্যের বিরুদ্ধে কোন অপপ্রচার করতে পারছে না। তাই ধরে নিয়েছে যে সহজেই একটা দেশলাই জ্বালিয়ে দেবে। কিন্তু তারা বোঝে না যে অন্যের ঘরে দেশলাই লাগালে সেই দেশলাই কখনও উড়ে এসে নিজের ঘরেও পড়তে পারে।’ 

উল্লেখ্য, সোমবার রাতে রামপুরহাট ১ নম্বর বক্লের বরশাল গ্রামের উপপ্রধান ও তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ভাদু শেখকে বোমা মেরে খুনের অভিযোগ ওঠে দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনার এক ঘণ্টার মধ্যেই রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রাতভর চলে বোমাবাজি। অন্তত ১০-১২টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ঘটানো হয়।

অভিযোগ ভাদুর মৃত্যুর বদলা নিতেই তার অনুগামীরা ওই গ্রামে রাতভর তান্ডব চালায়। অভিযোগ বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। আর তাতেই আটজন অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়। যদিও মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে এখনো যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়েছে। 

ওই ঘটনার পর গোটা গ্রাম জুড়ে এখনও চাপা উত্তেজনা রয়েছে। নতুন করে সহিংসতার আশঙ্কায় অনেকেই গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ও উত্তেজনা থামাতে গ্রামে বসানো হয়েছে পুলিশ পিকেট, চলছে পুলিশের টহলও।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর