কখনও বাথরুম, খাটের তলায়, ওয়ারড্রোব থেকে, আবার কখনও গাড়ীর টায়ারের ভিতর থেকে উদ্ধার লাখ লাখ রুপি। গত কয়েক মাস ধরে একের পর এক এভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্ধারের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এই ঘটনায় মন্ত্রী, রাজনীতিবিদ, প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশের বিষয়টিও সামনে এসেছে। সেই তালিকায় এবার নাম উঠলো এক অধ্যাপকের।
রাজ্যটির উত্তর ২৪ পরগনা জেলার খড়দহে নাথুপাল ঘাট রোডে বৃহস্পতিবার রাত থেকে এক অধ্যাপকের বাড়িতে চিরুনি তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হয়। খড়দহ থানার পুলিশ ও ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটর গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা যৌথভাবে এই অভিযান চালিয়ে শুক্রবার দুপুরে এই রুপি উদ্ধার করে।
ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারের গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রের খবর গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তারা বৃহস্পতিবার রাত থেকে তল্লাশি চালিয়ে ওই ফ্ল্যাটে থেকে নগদ আনুমানিক ৩২ লক্ষ রুপি উদ্ধার করে।জানা গেছে খড়দহ নাথুপাল ঘাট রোড এলাকায় শিরোমনি আবাসনের একতলার বাসিন্দা অমিতাভ দাসের ঘরে বৃহস্পতিবার রাতে এবং শুক্রবার সকাল থেকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি চালায় গোয়েন্দারা। প্রতিবেশীদের দাবি অমিতাভ দাস পেশায় একজন অধ্যাপক। স্ত্রী বর্ণালী সাধুখা এবং এক সন্তানকে নিয়ে গত আড়াই বছর ধরে ওই ফ্ল্যাটে বসবাস করছেন তিনি। জিজ্ঞাসাবাদ জন্য আটক করা হয়েছে অমিত দাসকেও। তবে ঠিক কি কারনে কত পরিমান টাকা ঘরে মজুদ রাখা ছিল তা এখনো পরিষ্কার নয়। এই বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তারাও কিছু বলতে চাননি।
অমিতাভের প্রতিবেশীরা জানান, আগে কখনো কোনো সন্দেহজন কিছু চোখে পড়েনি ওই দম্পতির ওই পরিবারের কাছ থেকে। যদিও তাদের প্রাথমিক ধারণা শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে যেভাবে অর্থ নয় ছয় হয়েছে, এটি তারই একটি অংশ।
এদিকে খড়দায় রুপি উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে এদিন সন্ধ্যায় নব ব্যারাকপুরে একটি অনুষ্ঠানে এসে রাজ্যটির কৃষিমন্ত্রী শোভন দেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'যার বাড়ি থেকে রুপি উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে, সেটা যদি তার নিজের রুপি হয় ভালো। আর বেআইনি রুপি হলে ধরা পরবে এবং শাস্তিও পাবে।'
উল্লেখ্য, রাজ্যে রুপি উদ্ধারের ঘটনা সর্বপ্রথম সামনে আসে গত ২৩ জুলাই, পশ্চিমবঙ্গের সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ অর্পিতা চ্যাটার্জির টালিগঞ্জের অভিজাত ফ্লাট থেকে উদ্ধার হয় প্রায় ২০ কোটি রুপি। ওই ঘটনার ছয় দিন পর ২৮ জুলাই বেলঘরিয়ার অর্পিতার বেলঘড়িয়ার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধারার ২৭ কোটি ৯০ লাখ রুপি।
এরপর ৩০ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার পাঁচলায় ঝাড়খণ্ডের টিম কংগ্রেসের বিধায়কের গাড়ি থেকে উদ্ধার হয় পঞ্চাশ লক্ষ রুপি। পরে ওই তিন কংগ্রেস বিধায়কের গ্রেফতার করে পুলিশ।
গত ১০ সেপ্টেম্বর গার্ডেনরিচে এক ব্যবসায়ী আমির খানের খাটের ঘরের খাটের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয় ১৭ কোটি ৩২ লাখ রুপি।
সম্প্রতি গত ডিসেম্বরে গাড়ির টায়ারের মধ্যে করে অভিনব কায়দায় রুপি পাচার করতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় কয়েকজন দুর্বৃত্ত। ঘটনাটি ঘটে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ির ডুয়ার্সের বানারহাট এলাকায়। ওই ঘটনায় উদ্ধারকৃত মোট অর্থের পরিমাণ ছিল ৯৩ লাখ ৮৩ হাজার রুপি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল