১৬ জানুয়ারি, ২০২৩ ১৫:৫২

মেডিকেল কলেজ তৈরিতে অরিজিৎ সিংকে সহায়তা করবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

মেডিকেল কলেজ তৈরিতে অরিজিৎ সিংকে সহায়তা করবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার

অরিজিৎ সিং

পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় জন্মগ্রহণ, বেড়ে ওঠা। পরবর্তীতে একজন প্রসিদ্ধ সংগীত শিল্পী হিসেবে পরিচিতি লাভ করা। সেই অরিজিৎ সিং হাসপাতাল গড়তে চেয়ে রাজাটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কাছে সহায়তার চেয়েছিলেন। এবার তাতে সম্মতি জানালেন মমতা। 

সোমবার মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘীতে এক সরকারি পরিসেবা প্রদান অনুষ্ঠান থেকে মমতা ঘোষণা করেন ‘মুর্শিদাবাদের জেলার ছেলে অরিজিৎ, খুব ভালো গান করেন আজকে সারা বিশ্বের গর্ব। অরিজিৎ আমাকে বলেছে দিদি জঙ্গিপুরে আমি একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল গড়তে চাই। মুর্শিদাবাদের মাটিতে দাঁড়িয়েই বলছি তুমি তৈরি কর। যা যা সহায়তা দরকার, আমরা সব সহায়তা দেব। তুমি এগিয়ে এসো’। 

অরিজিৎ সম্পর্কে মমতার অভিমত ‘ও একজন মা-মাটি-মানুষের লোক অর্থাৎ মাটিতে চলার লোক। দেখবেন ওর কোনো অহংকার নেই। ওর নিজের গুণই সবচেয়ে বড় অহংকার ও অলংকার। কাজেই এই ধরনের কাজগুলোকে আমরা করব’। 

এদিন একাধিক ইস্যুতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেখে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এটা মুর্শিদাবাদের মাটি, নবাব সিরাজদ্দৌলা যুদ্ধ করেছিলেন। আমি বলতে চাই আমি বুলডোজার এর পক্ষে নই, কিন্তু গণতন্ত্রে যারা বুলডোজার চালায়, বুলডোজারের পরিবর্তে তাদের ক্লোজার হবে’। 

১০০ দিনের কাজ, গঙ্গার ভাঙ্গন রোধ, ঐক্যশ্রী স্কলারশিপসহ বিভিন্ন প্রকল্পের বকেয়া অর্থ প্রদান নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিমাতাসুলভ আচরণের অভিযোগ তুলে মমতা বলেন, ‘১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের আওতায় যেসব শ্রমিকরা কাজ করেছে। তাদের প্রাপ্য বাবদ ৬০০০ কোটি রুপি এখনো দেওয়া হয়নি। এই প্রকল্পে রাজ্য সরকার এক নম্বর হয়েছে। কিন্তু তবুও এখনো গরিব মানুষকে এই রুপি দেওয়া হয়নি।... আগামী দিন আমরা ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে লড়ে নেব’। তার অভিযোগ, অন্য রাজ্য, নিজেদের রাজ্যগুলিকে (বিজেপি শাসিত) দেয়া হচ্ছে অথচ অন্য রাজ্যগুলির ক্ষেত্রেই এই আচরণ করা হচ্ছে। তার প্রশ্ন কেন বাংলা পাবে না? বাংলা লড়াই, প্রতিবাদ করে বলে? আমরা যতদিন বাঁচবো ততদিন এই লড়াই প্রতিবাদ করে যাব। কারণ এটা রবীন্দ্র, নজরুল, রামকৃষ্ণ, নেতাজী, স্বামী বিবেকানন্দের মাটি’।

তার অভিমত, ‘গঙ্গা, ভাগীরথী নদীর ভাঙ্গনে লাখ লাখ মানুষ গৃহহারা হচ্ছেন। নদীর ভাঙ্গনকে এভাবে আটকানো যায় না। কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ দিয়ে এটা করা উচিত’।

এদিকে সরকারি অনুষ্ঠান থেকে বাংলাদেশের সাথে ফারাক্কার পানি চুক্তির বিষয়টিও উত্থাপন করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সাথে যখন ফারাক্কার পানি নিয়ে চুক্তি হয়েছিল, এরা রাজ্য সরকারকে ৭০০ কোটি রুপি দেওয়ার কথা ছিল ওই এলাকার উন্নয়ন করার জন্য। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই রুপি দেওয়া হয়নি। আমি পরিষ্কারভাবে বৈঠকে বলেছি গঙ্গা ভাঙন রোধ করতে গিয়ে যা ব্যবস্থা করার দরকার প্রত্যেকটা করতে হবে। না করলে আমরা ছেড়ে কথা বলব না’।

মমতা বলেন, ‘মানুষের জন্য আমরা মানবিক কিন্তু মানুষকে যারা বঞ্চিত করে তাদের জন্য আমরা কঠিন, কঠোর, বর্জ্য, তুফান, টর্নেডো, আইলা। আমরা লড়াই করতে জানি’। 

মমতা বলেন, ‘আমাকে জব্দ করা খুব মুশকিল। আপনি ১০০ দিনের কাজের টাকা দেওয়া বন্ধ করেছেন, গরিব লোকের কাজ দেওয়া বন্ধ করেছেন। আমি কি রকম চিজ আপনার নিশ্চয়ই জানা আছে। আমাকে যদি আপনি ভালো করে বলেন তবে আমি হাসিমুখে আপনার বাড়ি গিয়ে রান্না করে আসব। কিন্তু আমায় যদি বলে তোমাকে আমি ভাতে মারবো... তুমি কেন, সারা বিশ্ব এক হয়ে গেলেও তোমরা আমাকে ভাতে মারতে পারবে না।' 

মমতার হুঁশিয়ারি, ‘বদলা আমি নেব না, তবে বদল আমি করব’। তার স্পষ্ট অভিমত, ‘রুপি নেই, বিজেপিকে দরকার নেই, বিজেপির ভোট নেই। এখন রাম-বাম-শ্যাম অর্থাৎ সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি সব এখন এক হয়ে গেছে’।

দলের কর্মীদের সংযত হওয়ার পরামর্শ দিয়ে মমতা বলেন, ‘লোভ করবেন না। দু’একজন খারাপ হতে পারে, কিন্তু সবাই খারাপ নয়। যদি কেউ অন্যায় করে থাকেন মানুষের কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিন। যদি কেউ মানুষের কাছ থেকে কোন রুপি নিয়ে থাকেন তাকে গিয়ে ফেরত দিয়ে দিন। তাতে মানুষের খুব ভালো হবে। মানুষও আপনাকে ভুল বুঝবে না। মানুষও ক্ষমা করে দেবে। কারণ মা-মাটি-মানুষ না থাকলে আমারও কোনো অস্তিত্ব থাকবে না’।

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর