ভারতের পশ্চিমবঙ্গে খেলতে গিয়ে মাঠেই মৃত্যু হয়েছে এক বাংলাদেশি ফুটবলারের। এই ফুটবলারের নাম হানিফ রশিদ ডাবলু। ৫৬ বছর বয়সী এই ফুটবলারের বাড়ি বাংলাদেশের আরামবাগ এলাকায়।
জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার বানারহাটের স্থানীয় ‘গ্রিন ল্যান্ড ডুয়ার্স ভেটারেন্স ক্লাব’এর উদ্যোগে ভারত, ভুটান, বাংলাদেশ ও নেপাল- এই চার দেশের সাবেক খেলোয়াড়দের নিয়ে ২২ ও ২৩ জানুয়ারি- দুই দিন ব্যাপী এই আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়।
প্রতিযোগিতার আসর বসে জলপাইগুড়ি জেলার বানারহাট ব্লকের গয়েরকাঁটা হাই স্কুল মাঠে। রবিবার প্রথম দিনের খেলা ছিল বাংলাদেশের সঙ্গে মালদা দলের। খেলা শুরু হয়, হাড্ডাহাড্ডি খেলা চলছিলো। মাত্রা ১০-১৫ মিনিটের মাথায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মাঠেই লুটিয়ে পড়ে এক বাংলাদেশি খেলোয়াড়। এরপর মাঠের মধ্যেই তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে একটি প্রাইভেট গাড়ি ডেকে তড়িঘড়ি তাকে হাসপাতালে নিলে মৃত বলে ঘোষণা করে চিকিৎসকেরা। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকদের অনুমান হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তার।এদিকে গোটা ঘটনায় গাফিলতির অভিযোগের আঙুল উঠেছে উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ খেলার মাঠে অনুষ্ঠানের আয়োজকদের প্রাথমিক চিকিৎসা, মেডিকেল টিম কিছুই ছিল না। এমনকি একটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট চলকালিন অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থাও রাখা হয়নি বলে অভিযোগ।
পরিবর্তে উদ্যোক্তারা মাঠের মধ্যে নিজেরাই প্রাথমিক চিকিৎসার চেষ্টা চালিয়ে সময় নষ্ট করেন বলে অভিযোগ। যদিও আয়োজকদের দাবি, অসুস্থ হয়ে পড়ার পর ওই ফুটবলারকে তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে বীরপাড়া রেল গেটে গাড়ি আটকে পড়ে। এতে বেশ কিছুটা সময় অতিবাহিত হওয়ায় তার শরীরিক পরিস্থিতি বেগতিক হয় এবং হাসপাতালে নিয়ে গেলেও তাকে বাচাঁনো সম্ভব হয়নি। এই ঘটনায় যথেষ্ট সোরগোল পড়ে যায় জেলায়। ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে ক্রীড়াপ্রেমী মহলে। খেলতে নামার আগে খেলোয়াড়দের ব্লাড প্রেশার মাপাসহ অন্যান্য শারীরিক পরীক্ষা করা আদৌ করা হয়েছিল কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে।
বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক আরমান বলেন, ‘মৃত ওই খেলোয়াড়ের নাম ডাবলু। বাংলাদেশের আরামবাগ এলাকায় তার বাড়ি। তার স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।’
বিষয়টি নিয়ে জলপাইগুড়ি পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ মাহাতো বলেন,‘বানারহাটের একটি ক্লাব এই ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলার আয়োজন করেছিল। খেলার সময় মাঠেই অসুস্থ হয়ে পড়েন বাংলাদেশের ওই ফুটবলার। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’
জলপাইগুড়ি জেলা স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে আয়োজকরা এই টুর্নামেন্টের জন্য তাদের কাছ থেকে অনুমতি নেয়নি। সংস্থার সচিব কুমার দত্ত বলেন, এই কমিটি আমাদের অনুমতি নেয়নি। অনুমতি চাইলে অবশ্যই আমরা জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ যা আমাদের গাইডলাইন আছে তা আমরা জানিয়ে দিতাম। ওই সংস্থার কোনোভাবে উচিত হয়নি বিনা অ্যাম্বুলেন্সে এ খেলা পরিচালনা করা। এইভাবে একজন বিদেশি খেলোয়াড় আমাদের জেলায় মারা গেলো এতে আমরা অত্যন্ত মর্মাহত। বিষয়টির তদন্ত হবে।’
এদিকে এমন ঘটনার পর রবিবার খেলা বন্ধ করে দেন আয়োজকেরা।
অপরদিকে মৃত ডাবলুর পরিবারের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে। সেইসাথে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে লাশ পোস্টমর্টেম করার জন্য পাঠানো হয়েছে। সোমবার সকালে পোস্টমর্টেম হবে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে শিলিগুড়িতে অবস্থিত এফআরআরও অফিসের সাথেও কথা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ