ভারতের দিকে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাত থেকে পেট্রাপোল পর্যন্ত যশোর রোড সম্প্রসারণের জন্য সড়কের দুই পাশে থাকা শতাব্দী প্রাচীন শত শত গাছ কাটার প্রতিবাদে করে মানববন্ধন হয়েছে কলকাতায়।
শনিবার বিকেলে কলকাতার ধর্মতলায় লেলিন মূর্তির নিচে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন করেছে যশোর রোড গাছ বাঁচাও কমিটি ও মানবাধিকার সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অব ডেমোক্রেটিক রাইটস (এপিডিআর)-এর সদস্যরা। এর আগে এদিন দুপুরে যশোর রোড গাছ বাঁচাও কমিটির পক্ষে কলকাতা প্রেস ক্লাবে এ বিষয়ে সাংবাদিক বৈঠক করা হয়।
যশোর রোড সম্প্রসারণ ও পাঁচটি রেলওয়ে লেভেল ক্রসিংয়ে ওভার ব্রিজ তৈরির জন্য ২০১৮ সালের হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ৩৫৬টি গাছ কাটার নির্দেশ দেয়। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে দ্বারস্থ হয় পরিবেশপ্রেমীরা। এরপর চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়কে বহাল রেখেই ৩৫৬টি গাছ কাটার নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত।যদিও এর মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেশ কয়েকটি গাছ নষ্ট হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে বর্তমানে গাছের সংখ্যা ৩০৬টি। অর্থাৎ শীর্ষ আদালতের রায় অনুযায়ী এই ৩০৬টি গাছ কাটার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। যদিও আদালতের নির্দেশ একটি গাছের পরিবর্তে পাঁচটি গাছ অর্থাৎ প্রায় ১৫০০ নতুন গাছ লাগানোর শর্ত আরোপ করে আদালত। একমাত্র এই শর্তে গাছ কাটা যাবে। কিন্তু সেই গাছ কাটার বিরোধিতা করেই আন্দোলনে নামে যশোর রোড গাছ বাঁচাও কমিটি ও এপিডিআর।
যশোর রোড গাছ বাঁচাও কমিটির সম্পাদক সৌভিক মুখার্জী বলেন, গাছ কাটার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় আমরা মেনে নিতে পারছি না। আমাদের দাবি ওই গাছগুলোকে হেরিটেজ ঘোষণা করা হোক। গাছ কেটে নয়, ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতি করে যশোর রোডের যানজট সমস্যার সমাধান করা হোক। সাধারণ মানুষকে গাছ কাটার বিরুদ্ধে রাস্তায় নামার জন্য অনুরোধও জানান সৌভিক।
মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর’র সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত সূর বলেন, যশোর রোডের এই গাছগুলো ইতিহাস বিজড়িত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাক্ষী। প্রশাসন চেষ্টা করছে গাছগুলো কেটে সেখানে যশোর রোড সম্প্রসারণ ও পাঁচটি রেলওয়ে ওভার ব্রিজ নির্মাণের। এজন্য তারা চার হাজার গাছ কেটে ফেলার পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা মানবাধিকার সংগঠন, প্রকৃতিপ্রেমী সংগঠন এবং অধিকার রক্ষার সংগঠন হিসেবে মনে করি ভারত সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই সিদ্ধান্ত সর্বনাশা সিদ্ধান্ত। আমরা মামলা করে বিষয়টি আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হলো না। সুপ্রিম কোর্টের গ্রিন বেঞ্চ ৩৬৫টি গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু আমরা এর পরিণতি জানি। হয়তো আগামী দিনে সব গাছই কেটে ফেলা হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই