১৮ এপ্রিল, ২০২৩ ১৭:৫৩

অমর্ত্য সেন চিঠি দিলেন বিশ্বভারতীকে, উচ্ছেদ নোটিশের আইনি যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

অমর্ত্য সেন চিঠি দিলেন বিশ্বভারতীকে, উচ্ছেদ নোটিশের আইনি যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন

অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। ফাইল ছবি

কোনো আইনেই পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে উচ্ছেদ করতে পারে না। আইনি যুক্তি দিয়ে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিলেন নোবেলজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন।

গত শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) অমর্ত্য সেনকে উচ্ছেদের হুঁশিয়ারি দিয়ে তার বাড়িতে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ একটি নোটিশ দেয়। 

সেই পরিপ্রেক্ষিতেই সোমবার (১৭ এপ্রিল) বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম কর্মসচিব ও সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তার উদ্দেশে একটি চিঠি দেন অমর্ত্য সেন। তাতে তিনি লেখেন, ‘আমার শান্তিনিকেতনের পৈতৃক বাড়িতে বিশ্বভারতীর কিছু জমি আছে এমন একটা বিবৃতি দেখেছি। যে বাড়ি ও জমি ১৯৪৩ সাল থেকে আমরা নিয়মিত ব্যবহার করে আসছি। আমি জমির ধারক ও জমিটি হস্তান্তর করা হয়েছে। ৮০ বছর ধরে ব্যবহৃত এই জমির চরিত্র একই রয়ে গেছে। এই জমির ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কেউ জমি দাবি করতে পারে না।’ 

‘প্রতীচী’ বাড়ির জমির আইনশৃঙ্খলা ও শান্তিরক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেট, তাও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে মনে করিয়ে দেন অমর্ত্য সেন। তিনি লেখেন, ‘ম্যাজিস্ট্রেট নির্দেশ দিয়েছেন এলাকায় শান্তিভঙ্গ যাতে না হয় ও জমি হস্তান্তর যাতে না হয়।’

এক কথায় চিঠি দিয়ে অমর্ত্য সেন স্পষ্ট করে দিলেন, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই এই জমি দাবি করতে পারে না। চিঠির শেষে এই অর্থনীতিবিদ এও জানিয়ে দেন যে, ‘আগামী জুন মাসে আমি শান্তিনিকেতন ফিরবো।’

গত কয়েক মাস ধরে সংবাদের শিরোনামে রয়েছে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের জমি বিতর্ক ইস্যুটি। তার বিরুদ্ধে ১৩ শতক জমি জোর করে দখল রাখার অভিযোগ তুলে সেই জমি ফেরত চেয়ে তিনটি চিঠি দিয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। যা নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছিল সর্বত্র।

এরই মধ্যে রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি অমর্ত্য সেনের পাশে দাঁড়িয়ে, প্রয়াত পিতা আশুতোষ সেনের উইল অনুযায়ী ১.৩৮ একর জমিই অমর্ত্য সেনের নামে রেকর্ড করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই মোতাবেক বোলপুর ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর ওই জমি অমর্ত্য সেনের নামে রেকর্ড করে দেয়।

উল্লেখ্য, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথেই বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠায় সমান ভূমিকা ছিল পণ্ডিত ক্ষিতিমোহন সেনের। তার কন্যা অমিতা সেন গুরুদেবের ছাত্রী ছিলেন। আবার অমিত সেনের পুত্রের নাম ‘অমর্ত্য’ রেখেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ফলে কবিগুরুর জীবদ্দশায় থেকেই শান্তিনিকেতন বসবাস করছে সেন পরিবার। ১৯৪৩ সালে নিয়ম অনুযায়ী প্রতীচী বাড়ির জমি বিশ্বভারতীর কাছ থেকে ইজারা নেন অমর্ত্য সেনের পিতা আশুতোষ সেন। পরে মেয়াদ শেষে ২০০৬ সালে ওই জমি উত্তরাধিকার সূত্রে ইজারা নেন অমর্ত্য সেন।

বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ১.২৫ একর জমি অমর্ত্য সেনকে ইজারা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই প্রতীচী বাড়িতে মোট ১.৩৮ একর জমি রয়েছে। অর্থাৎ, ১৩ শতক অতিরিক্ত জমি রয়েছে। অমর্ত্য সেনের যুক্তি, প্রয়াত পিতার উইল অনুযায়ী সম্পূর্ণ জমিই উত্তরাধিকার সূত্রে তার।

বর্তমানে অমর্ত্য সেন বিদেশে রয়েছেন। তার অনুপস্থিতিতে শান্তিনিকেতনের ‘প্রতীচী’ বাড়ি ও জমি বেদখল হয়ে যেতে পারে। এই আশঙ্কা প্রকাশ করে গত সপ্তাহে বোলপুর মহকুমা শাসকের কাছে অভিযোগ করেন প্রতীচী বাড়ির দেখভালের দায়িত্বে থাকা গীতিকন্ঠ মজুমদার। এ বিষয়ে মহকুমা শাসকের এজলাসে মামলাও শুরু হয়। অমর্ত্য সেনের বাড়ি ও সংলগ্ন এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য শান্তিনিকেতন থানাকে নির্দেশ দেন ম্যাজিস্ট্রেট। অর্থাৎ, মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কেউ বেদখল করতে পারবে না। এরপরেই তড়িঘড়ি শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) অমর্ত্য সেনের বাড়িতে নোটিশ লাগিয়ে দেয় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ওই নোটিশে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয় আগামী ১৯ এপ্রিল অমর্ত্য সেনের জমি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।

এরপরই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে পাল্টা চিঠি অমর্ত্য সেনের। বিদেশের মাটিতে থেকে সোমবার চিঠিটি দিলেও তা প্রকাশ্যে আসে মঙ্গলবার।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর