১০ মে, ২০২৩ ১৭:০৯

অমর্ত্য সেনের জমি সংক্রান্ত মামলার শুনানি ৩০ মে

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

অমর্ত্য সেনের জমি সংক্রান্ত মামলার শুনানি ৩০ মে

অমর্ত্য সেন

প্রধান জেলা ও দায়রা বিচারক আদালতে উপস্থিত না থাকায় নোবেল জয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের জমি সংক্রান্ত মামলার শুনানি পিছিয়ে গেলো। মামলার পরবর্তী শুনানি ৩০ মে৷

পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে অমর্ত্য সেনের 'প্রতীচী' নামক বাড়িতে তার নামে থাকা ১৩ শতক জমি ফেরত চেয়ে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল, গত ৪ মে তার উপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি বিভাস রঞ্জন দের একক বেঞ্চ জানিয়েছিলেন, এই সম্পর্কিত একটি মামলা বীরভূম জেলা দায়রা আদালতে চলছে। ওই মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অমর্ত্য সেনের জমির বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। হাইকোর্ট এও জানিয়ে দেন, আগামী ১০ মে জেলা আদালতে ওই মামলার পরবর্তী শুনানি। অর্থাৎ ততদিন পর্যন্ত বিতর্কিত ১৩ শতক জমি নিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ নিতে পারবে না। 

সেই মোতাবেক বুধবার সিউড়ি শহরে অবস্থিত বীরভূম জেলা ও দায়রা আদালতে মামলাটির শুনানি শুরু হওয়ার কথা ছিল প্রধান জেলা ও দায়রা বিচারক সুদেষ্ণা দে (চ্যাটার্জি) এজলাসে। কিন্তু তিনি উপস্থিত না থাকায় সেই মামলাটি ওঠে আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা (চতুর্থ কোর্ট) বিচারক সরজিৎ মজুমদারের এজলাসে।
তবে বেলা ২টার পরিবর্তে অনেক আগেই এদিন সকাল ৯টার কিছু পরেই মামলার শুনানি শুরু হয় বলে জানা যায়। সেক্ষেত্রে অনেক বিচারকই এদিন ওই সময়ে আদালতে উপস্থিত হতে পারেননি।

এদিকে সকাল সকাল মামলা শুরু হওয়ার ক্ষেত্রে আপত্তি জানিয়েছিলেন অমর্ত্য সেনের আইনজীবী সৌমেন্দ্র রায় চৌধুরী। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষও তাতে মান্যতা দেয়।
ফলে এই মামলার শুনানি পিছিয়ে যায়। সেক্ষেত্রে আগামী ৩০ মে মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন সরজিৎ মজুমদার৷ দুই পক্ষই তা মেনেও নেয়৷

সেক্ষেত্রে অমর্ত্য সেনকে জমি খালি করার বিষয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের নোটিশের উপর হাইকোর্টের যে স্থগিতাদেশ জারি ছিল, তাই অব্যাহত থাকল। অর্থাৎ নিম্ন আদালতে বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিশ্বভারতী কোন পদক্ষেপই নিতে পারবে না।

এ ব্যাপারে সিউড়িতে অবস্থিত জেলা আদালতের সরকারি আইনজীবী মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, যেহেতু প্রধান জেলা ও দায়রা বিচারককে এই মামলা শোনার নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্ট, তাই অন্য কেউ এই মামলা শুনতে পারবেন না৷ ফলে মামলার পরবর্তী শুনানি ৩০ মে ধার্য হয়েছে। দুপক্ষই সেটা মেনেও নিয়েছে৷ সেক্ষেত্রে কলকাতা হাইকোর্টের জারি করা অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ জারি থাকবে।

উল্লেখ্য, শান্তিনিকেতনে অমর্ত্য সেনের 'প্রতীচী' বাড়ির জমি নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। অমর্ত্য সেনের 'প্রতীচী' বাড়িতে মোট জমির পরিমাণ ১.৩৮ একর জমি। যদিও বিশ্বভারতীর দাবি, ১৯৪৩ সালে অমর্ত্য সেনের বাবা প্রয়াত আশুতোষ সেনের নামে ৯৯ বছরের জন্য 'প্রতীচী'র যে জমি লিজ দেওয়া হয়েছিল, তার পরিমাণ ১.২৫ একর। তা মোটেই ১.৩৮ একর জমি নয়। অর্থাৎ বাকি ১৩ ডেসিমেল (শতক) জমি দখল করে রেখেছেন অমর্ত্য সেন। সেই জমি ফেরত চেয়েই ৩ টি চিঠি দেয় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যা নিয়ে রীতিমতো বিতর্ক তৈরি হয়।

জমি নিয়ে এমন বিতর্কের মাঝেই গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি নাগাদ অমর্ত্য সেনের পিতা প্রয়াত আশুতোষ সেনের উইল অনুযায়ী আবেদনের ভিত্তিতে বোলপুর ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর ১.৩৮ একর জমিই অমর্ত্য সেনের নামেই জমি রেকর্ড করে দেয়৷ 
এমন এক পরিস্থিতিতে গত ১৯ এপ্রিল বিশ্বভারতীর তরফে অমর্ত্য সেনের বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে 'প্রতীচী' বাড়িতে নোটিশ লাগিয়ে জোর করে দখলকৃত ১৩ শতক জমি খালি করার জন্য আগামী ৬ মে পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল। অন্যথায় বলপ্রয়োগ করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল।  

বিশ্বভারতীর ওই অনড় মনোভাবের পরেই ওই নোটিশের স্থগিতাদেশ জারির আর্জি চেয়ে সিউড়িতে অবস্থিত জেলা আদালতে মামলা করেন অমর্ত্য সেনের আইনজীবী। কিন্তু সেই মামলার দিন ধার্য করা হয়েছিল ১৫ মে। এই অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে সেই মামলা শোনার আরজি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ।

বিশ্বভারতীর উচ্ছেদের নোটিশের বিরোধিতা করে ইতিমধ্যেই মানববন্ধন, অবস্থান প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ।

বিডি প্রতিদিন/এএ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর