১০ জুলাই, ২০২৩ ১৩:২১
পঞ্চায়েত ভোটে সহিংসতা

পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৭০০ বুথে চলছে পুনরায় নির্বাচন

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৭০০ বুথে চলছে পুনরায় নির্বাচন

পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৭০০ বুথে চলছে পুনরায় নির্বাচন

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ৬৯৬টি বুথে পুনরায় নির্বাচন চলছে। সোমবার সকাল সাতটা থেকে শুরু হয়েছে এই নির্বাচন, বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। ভোট নেওয়া হচ্ছে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে।

গত ৮ জুলাই (শনিবার) রাজ্যটির ২২টি জেলার মধ্যে ২০টি জেলায় ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত (গ্রাম সভা, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ) ভোট হয়। বাকি দুই জেলা-দার্জিলিং এবং কালিম্পং জেলায় দ্বিস্তরীয় পঞ্চায়েত (গ্রাম সভা, পঞ্চায়েত সমিতি) ভোট হয়। কিন্তু ওই নির্বাচনকে ঘিরে ব্যাপক সহিংসতা দেখা যায় অধিকাংশ জেলায়। ছাপ্পা ভোট, ভোট লুট, ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেওয়া, ভোটারদের প্রভাবিত করা, ভয় দেখানো, মারধর, বোমা, গুলি চালানোর মতো ঘটনা ঘটে। কেবলমাত্র সহিংসতায় ভোটের দিনই মৃত্যু হয় ১৫ জনের। সেই পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত। যদিও কোনো কোনো মহল থেকে ১৮ জনের মৃত্যুর কথা বলা হয়।

রবিবার রাতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষে দেওয়া বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ২২টি জেলার মধ্যে ১৯টি জেলার (ঝাড়গ্রাম, দার্জিলিং এবং কালিম্পং জেলা ব্যতীত) ৬৯৬টি বুথে পুনরায় নির্বাচন চলছে।

এর মধ্যে মুর্শিদাবাদ জেলায় সবচেয়ে বেশি ১৭৫টি বুথে ভোট নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও মালদহে (১০৯), নদীয়া (৮৯), কোচবিহার (৫৩), উত্তর চব্বিশ পরগনা (৪৬), উত্তর দিনাজপুর (৪২), দক্ষিণ ২৪ পরগনা (৩৬), পূর্ব মেদিনীপুর (৩১), হুগলি (২৯), দক্ষিণ দিনাজপুর (১৮), জলপাইগুড়ি (১৪), বীরভূম (১৪), পশ্চিম মেদিনীপুর (১০), বাঁকুড়া (৮), হাওড়া (৮), পশ্চিম বর্ধমান (৬), পুরুলিয়া (৪), পূর্ব বর্ধমান (৩) এবং আলিপুরদুয়ার জেলায় একটি মাত্র বুথে পুনরায় ভোট নেওয়া হচ্ছে। অশান্তি এড়াতে প্রতিটি বুথে মোতায়েন রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান ও রাজ্য পুলিশের সদস্যরা।

তবে পুনর্নির্বাচনের দিনও বিভিন্ন এলাকা থেকে ভোট সহিংসতার খবর এসেছে। গত শনিবার ভোটের দিন নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর কোতয়ালী থানার ভালুকা আনন্দবাসে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতকারীরা বোমাবাজি ও মারধর করে বলে অভিযোগ। সেই বোমার আঘাতে বেশ কয়েকজন আহত হয়ে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়। দুদিন ধরে চিকিৎসা চলার পর সিপিআইএম কর্মী শুকুর আলী সেখের মৃত্যু হয় শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে।

এই জেলার বার্নিয়া শ্রীকৃষ্ণপুরে তেহট্ট ঘাট এলাকায় ভোটারদের ভোট দিতে ভোট কেন্দ্রে যেতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার প্রতিবাদে দেবগ্রাম রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে গ্রামবাসীরা।
পশ্চিম বর্ধমান জেলার কাঁকসার শোকনা গ্রামের ১৫১ নম্বর ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে তার মায়ের ভোট দিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ঘটনাকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায়।

মালদার কালিয়াচক ১ নম্বর ব্লকের মোসিমপুর জোলাপাড়ার ১৮৮ নম্বর বুথে তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ কংগ্রেসের। পাল্টা ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে প্রভাবিত করার অভিযোগ কংগ্রেস প্রার্থীর বিরুদ্ধে তুললেন তৃণমূল প্রার্থী।

উল্লেখ্য, শেষবার ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনেকে ঘিরে ব্যাপক সহিংসতা দেখেছিল রাজ্যবাসী। মৃত্যু হয়েছিল ২৩ জনের। এছাড়াও ভোট লুট, ছাপ্পা ভোট, ভোটারদের প্রভাবিত করা, ভয় দেখানোসহ একাধিক অভিযোগ উঠেছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই ওই বছর ৫৭৪ টি বুথে পুনর্নির্বাচন নেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু পাঁচ বছর আগের পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে রাজ্যে ভোট কেন্দ্রিক যে সহিংসতা কিংবা মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল তাকে ছাপিয়ে যায় এবার। চলতি বছরের গত ৮ জুন পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ঘোষণা হওয়ার পর থেকে গত এক মাস ধরে নির্বাচন কেন্দ্রিক সহিংসতায় সেই মৃত্যুর সংখ্যা ছুঁয়েছে ৩২-এ।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর