সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। গত ৮ জুলাই গোটা রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়, ১১ জুলাই ছিল তার গণনা। কিন্তু নির্বাচনের দিন ঘোষণার পর থেকে শুরু করে প্রায় এক মাস নির্বাচন কেন্দ্রিক সহিংসতায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত অর্ধ শতাধিক মানুষের, এরমধ্যে কেবল মাত্র নির্বাচনের দিনই প্রাণ যায় ২১ জনের। আহতের সংখ্যাও কম নয়। আর বেশিরভাগ সহিংসতার ঘটনাতেই রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে অভিযোগের আঙুল ওঠে।
এবার সেই নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা তুলে তৃণমূল কংগ্রেসকে নিশানা করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার অভিযোগ 'রক্তের খেলা খেলেছে তৃণমূল।'
শনিবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে দিল্লী থেকে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ায় ক্ষেত্রীয় পঞ্চায়েতি রাজ পরিষদের একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মোদি এসব কথা বলেন। এদিন হাওড়ার এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা এবং দলের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারসহ অন্য নেতা, কর্মীরা।মোদির ওই বক্তব্যের পরেই তার উপর ক্ষোভ ঝাড়েন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এক অডিও বার্তায় মমতা বলেন, 'একটি ছোট্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রী মানুষের জন্য মানবিক বার্তা না দিয়ে তিনি বাংলাকে বদনাম করেছেন, বঞ্চিত করেছেন, লাঞ্ছনা করেছেন নিপীড়ন করেছেন, শোষণ করেছেন। আর নিজের দলের লোকেদের তোষণ করবার জন্য বাংলার গরিব মানুষের রুপি বন্ধ করে দিয়েছেন।'
মমতার প্রশ্ন, 'নির্বাচনে যদি হিংসাই হতো তবে, ২ লাখ ৩১ হাজার প্রার্থীর মনোনয়নপত্র কিভাবে জমা পড়ল? যদি হিংসাই হতো তবে বিজেপি, কংগ্রেস বা সিপিআইএম মিলে এতগুলো পঞ্চায়েতে কিভাবে বোর্ড গঠন করলো? যদি হিংসা হতো তাহলে আমাদের দলের ২০ জন লোক কেন মরল?'
মমতা বলেন, 'বাংলার দিকে আঙুল তোলার আগে তার (মোদি) বলা উচিত যে মণিপুর নিয়ে তিনি তিন মাস ধরে কি করেছেন? ত্রিপুরায় কেন ৯৩% মানুষকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেওয়া হল না? উত্তরপ্রদেশে কেন ৪০% মানুষকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেওয়া হয়নি? রেসলারদের উপর কেন এই অত্যাচার করা হয়েছিল?'
প্রধানমন্ত্রীকে তোপ দেগে মমতা বলেন, 'আপনার মতিগতি কি হয়েছে বোঝা যাচ্ছে না। আপনার লক্ষ্য কেবলমাত্র বাংলাকে বঞ্চনা করা, বাংলাকে ভাতে মারা, বাংলার বদনাম করা। কারণ আপনি বাংলার মেধাকে ভয় পান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, আবুল কালাম আজাদ, বিরসা মুন্ডা এদেরকে আপনি ভয় পান। আমরা হিন্দু, মুসলিম, জৈন পারসি, আদিবাসী সকলকে নিয়ে একসাথে থাকার চেষ্টা করি, আমাদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই। আর আপনাদের কাজ হলো, মণিপুরের মত বাংলাতেও জাতি দাঙ্গা লাগানো। দার্জিলিংকে ভাগ করা, জঙ্গলমহলে আগুন জ্বালানো। কিন্তু আমরা এই আগুন জ্বালাতে দেব না। প্রয়োজনে আমার লাশের উপর দিয়ে আগুন জ্বালাতে হবে।'
মমতার আবেদন, 'বাংলা শান্তিতে চলছে, শান্তিতে থাকতে দিন। বাংলার মানুষ কোনদিন মাথা নত করেনি, করবেও না। আমরা চাই বাংলার সম্মান। আমাকে আপনি (মোদি) গালাগালি দিন, কিন্তু বাংলার মানুষকে কটু কথা বলবেন না, বাংলাকে অসম্মান করবেন না।
উল্লেখ্য, রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরোধীদের কার্যত ধূলিসাৎ করে জয়ী হয় শাসক দল। ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনের ২২টি জেলা পরিষদের প্রত্যেকটিতে জয়ী হয় তারা। ৩৩১৭ গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৬৪১ টি (৮০%) এবং ৩৪১ পঞ্চায়েতের সমিতির মধ্যে ৩১৩ টি (৯২%) দখল করেছে তারা।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল