কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলার নিউ মার্কেট চত্ত্বর। কেনাকাটা থেকে শুরু করে খাওয়া-দাওয়া, সাজ-সজ্যা সবকিছুই প্রায় এক ছাতার তলায় পাওয়া যায় এই নিউমার্কেট চত্ত্বরে। স্বাভাবিক ভাবেই বিদেশিদের কাছে বিশেষ করে বাংলাদেশিদের কাছে অত্যন্ত পছন্দের জায়গা এই নিউমার্কেট। অনেকের কাছেই আবার মিনি বাংলাদেশ বলেও পরিচিত এই নিউ মার্কেট। বাংলাদেশি পর্যটকরা কলকাতায় পা রেখেই এই নিউ মার্কেটের মার্কুইস স্ট্রীট, কিডস স্ট্রীট, সদর স্ট্রীট, টটি লেনসহ বিভিন্ন জায়গায় হোটলে অবস্থান করেন। কিন্তু প্রশ্ন হল এই নিউ মার্কেটে বাংলাদেশি নাগরিকরা কতটা নিরাপদ ও সুরক্ষিত?
সাম্প্রতিককালে নিউ মার্কেট এলাকায় রাতের দিকে ছিনতাই, বহিরাগতের উপস্থিতিসহ কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনার অভিযোগ উঠেছে। যার শিকার হয়েছেন বাংলাদেশি পর্যটকরা- এমনটাই অভিযোগ। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার কথা ভেবে সিসিটিভির আওতায় আসছে নিউমার্কেট চত্ত্বর। মার্কুইস স্ট্রীট, সদর স্ট্রীট, ফ্রি স্কুল স্ট্রীটসহ গোটা নিউমার্কেট চত্ত্বর মুড়ে ফেলা হবে। এজন্য মোট ৩২ টি সিসিটিভি লাগানো হবে। পাশাপাশি মার্কেট অ্যাসোসিয়েশন এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুইটি হেল্প ডেস্ক করা হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনিয়ে সদস্য মনোতোষ সরকার। বাংলাদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে সোমবার এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয় কলকাতার নিউমার্কেট এলাকায়। সেখানে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন মনোতোষ সরকার। তিনি বলেন, 'বাংলাদেশিদের সুরক্ষার জন্য নিউমার্কেট চত্ত্বরে ৩২ টি সিসিটিভি লাগানো হবে। পাশাপাশি দুইটি হেল্প ডেস্ক করা হবে। যেখানে একটি হটলাইন নাম্বার প্রদান করা হবে। কোনো বাংলাদেশি পর্যটক কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলেই সেখানে ফোন করলেই তাকে সহায়তা প্রদান করা হবে।'এদিন সন্ধ্যায় মার্কুইস স্ট্রিটের 'হোটেল এমারেল্ড' এ যৌথ ভাবে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন, মার্কুইস স্ট্রিট ও ফ্রি স্কুল স্ট্রিট রেসিডেন্সিয়াল এন্ড কমার্শিয়াল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, হোটেল এবং রেস্তোরাঁ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, নিউমার্কেট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন।
বাংলাদেশি পর্যটকদের ক্ষেত্রে ভিসা সরলীকরণের দাবি তুলে 'ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনোতোষ কুমার সাহা বলেন, 'নিউ মার্কেট এলাকাটা মূলত বাংলাদেশ পর্যটকদের উপর নির্ভর। কিন্তু ভিসা সমস্যার কারণে সাম্প্রতিকালে বাংলাদেশি পর্যটকদের আগমন অনেক কমে গেছে। ফলে আমাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কয়েক মাস আগেও যেখানে দৈনিক গড়ে নিউমার্কেটে ৫০০০ পর্যটক আসতেন, সেখানে বর্তমানে ৫ শতাধিক পর্যটকও আসছেন না। দ্বিতীয়ত ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে অভিবাসন দপ্তরেও বাংলাদেশি পর্যটকদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সর্বোপরি যারা কলকাতায় আসছেন সেই সব পর্যটকরা কিভাবে এখানে সুরক্ষিত থাকতে পারেন মূলত এই তিনটি বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে।'
শ্যামলী যাত্রী পরিবহনের কর্ণধার অবনী ঘোষ বলেন, 'ভিসা সমস্যাটাই বড় আকার ধারণ করেছে। সরকারের কাছে আমাদের আবেদন এই সমস্যা যাতে দ্রুততার সাথে সমাধান করা যায়। না হলে তার প্রভাব পড়ছে আমাদের ব্যবসায়।'
কলকাতার ঐতিহ্যশালী চর্ম শিল্প ব্যবসায়ী শ্রীলেদার্সের মালিক সত্যব্রত দে বলেন, আমি নিজেও বাংলাদেশের লোক। আমি চাইব যে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কোনো পার্থক্য না থাকে। কারণ আমাদের খাওয়া-দাওয়া সংস্কৃতি ঐতিহ্য সবকিছুই এক। আমরা চাই সেই সম্পর্ক দিন দিন যাতে বৃদ্ধি পায়। যদিও কলকাতায় বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল