৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১৩:৪৫

প্রেমিকের টানে ভারতে বাংলাদেশি নারী

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

প্রেমিকের টানে ভারতে বাংলাদেশি নারী

প্রতীকী ছবি

প্রেমিকের টানে প্রায় ২২০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে বাংলাদেশ থেকে ভারতের রাজস্থানে গেছেন এক বাংলাদেশি নারী। উম্মে হাবিবা ওরফে হানি নামে ৩০ বছর বয়সে ওই নারীর সাথে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয় হয় রাজস্থানের অনুপগড় জেলার রাভলা মান্ডি গ্রামের বাসিন্দা রোশন সিংয়ের। যদিও ওই নারীর অবস্থানের কথা জানতে পেয়েই স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশকে জানালে তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার বাসিন্দা উম্মে হাবিবার সঙ্গে একটি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ৬-৭ মাস আগে পরিচয় হয় ২৮ বছর বয়সী রোশনের। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে সম্পর্ক গাঢ় হয়। সেই সম্পর্কের টানেই ঢাকা থেকে কলকাতা-দিল্লি হয়ে রাজস্থানের বিকানের শহরে পৌঁছায় হাবিবা।

গত ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে কলকাতা আসেন। এরপর হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে গত ৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বিকানের পৌঁছায় ওই নারী। পরে বাসে চেপে অনুপগর জেলার রাভলা গ্রামে রোশনের বাসায় যান তিনি। সেই থেকে গত দুইদিন ধরে তার বাসাতেই অবস্থান করছিল হাবিবা। মঙ্গলবার বিকালের দিকে হাবিবার অবস্থানের কথা জানতে পারে স্থানীয় বাসিন্দারা। তারাই খবর দেয় পুলিশের কাছে। পরে রোশন এবং হাবিবা উভয়কেই ডেকে থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়।

এ ঘটনা সামনে আসার পরই বিকানের আইজিপি ওম প্রকাশ পুলিশকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি গোয়েন্দা কর্মকর্তাদেরও সতর্ক করেন।

রোশনের মা কৃষ্ণা বাঈ জানান, দু’বছর আগে রোশন স্থানীয় রোজদী গ্রামের বাসিন্দা সোমা বাঈ নামে এক নারীকে বিয়ে করে এবং তাদের সাত বছরের এক সন্তান আছে। গত রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকালের দিকে শীর্ষা গ্রামে একটি পূজায় অংশ নিতে গিয়েছিল সোমা বাঈ। ওই দিনই হাবিবাও আমাদের বাড়িতে আসে, সে হিন্দিতেই কথা বলছিল। সে আরও বলেছিল যে, সে আর বাংলাদেশে ফিরে যেতে চায় না, ভারতেই বাকি জীবনটা কাটাতে চায়।

জানা গেছে, হাবিবাকে নিয়ে রোশন রাজস্থানে নিজের বাসার ঢোকার পরেই তার স্ত্রী বাড়ি ছাড়েন। হাবিবা তখন ফোনে তার স্ত্রীর সাথে কথা বলে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে সে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তার স্বামীর সাথে দেখা করতে আসেনি। এরপরই রোশনের স্ত্রী হাবিবাকে তার নিজের দেশে ফিরে যাওয়ার কথা বলে। কিন্তু হাবিবা জানিয়ে দেয় তিনি আর বাংলাদেশে ফিরে যেতে রাজি নয়, তারা তিনজনই (রোশন, তার স্ত্রী এবং হাবিবা) একসাথে থাকতে চান।

রোশনের বোন সন্তোষ কৌর জানান, আমরা চাই ওই বাংলাদেশি নারী তার দেশে ফিরে যাক। আমরা আমাদের ভাইকে ঘর সংসার নিয়ে থাকতে দেখতে চাই। কিন্তু উম্মে হাবিবা জানিয়েছে সে আর এখন দেশে ফিরবে না। ছয় মাসের ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে সে ভারতে এসেছে, সেই ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেই সে দেশে ফিরে যাবে।

হাবিবা রোশনের পরিবারকে আরও জানায়, তারা পাঁচ ভাই ও এক বোন। সে পরিবারের ছোট। তার ভাইয়েরা সেদেশে শ্রমিকের কাজ করে।

এদিকে রোশনের মা কৃষ্ণা বাঈ জানায়, তিনি এনরেগা প্রকল্পের অধীনে একজন শ্রমিকের কাজ করেন। তার বড় ছেলে রোশন মাত্র চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। সে ও তার ভাই মালকিত-উভয়েই শ্রমিকের কাজ করে, আর তাতেই তাদের সংসার চলে। রোশনের বাবা গত এক বছর আগে শারীরিক অসুস্থতার কারণে প্রয়াত হন। পুলিশ এবং গণমাধ্যমের সামনে জানায় তারা হাবিবাকে তাদের সাথে রাখতে চান না। তাই পুলিশ প্রশাসন এবং সরকার যেন উদ্যোগ নিয়ে তাকে শিগগিরই তার দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করে।

গোটা বিষয়টি সামনে আসার পরেই রাভালা মান্ডি গ্রামে পৌঁছান পঞ্চায়েত কমিটির সদস্য গোপী রাম ভূকর। তিনি জানান, ওই বাংলাদেশি নারীর অবস্থানের কথা জানতে পেরে আমরা পুলিশকে অবগত করেছি যে, যে কোন মূল্যেই ওই বাংলাদেশি নারীকে যেন তার দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। এ ব্যাপারে আমরাও গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে পুলিশকে যথাযথ সহায়তা করব।

রাভলা পুলিশ থানার কর্মকর্তা রমেশ কুমার জানান, উম্মে হাবিবা নামে নারী টুরিস্ট ভিসা নিয়ে ভারতে আসে। তার কাছ থেকে ২০০০ বাংলাদেশি টাকা, ঢাকা-কলকাতা ট্রেন টিকিট, একটি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে। হাবিবা এবং রোশন- উভয়কেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ পেলেই সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর