১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০৪:৪৬

বিশ্ব ঐতিহ্য তকমা পেল কবিগুরুর শান্তিনিকেতন

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

বিশ্ব ঐতিহ্য তকমা পেল কবিগুরুর শান্তিনিকেতন

ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের (বিশ্ব ঐতিহ্য) তালিকায় যুক্ত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলায় অবস্থিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত শান্তিনিকেতন। 

ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে শান্তিনিকেতনকে নথিভুক্ত করতে সুপারিশ করেছিল ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টারের উপদেষ্টা সংস্থা 'ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অন মনুমেন্টস এন্ড সাইটস' (ICOMOS)। এই বিষয়টি নিয়ে চলতি সেপ্টেম্বরেই সৌদি আরবের রিয়াদে ৪৫তম বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সভাও হয়। এরপরই রবিবার টুইট করে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি ঘোষণা করে ইউনেস্কো। 

পরে টুইট করে 'সমস্ত ভারতীয়দের জন্য গর্বের মুহূর্ত' বলে অভিহিত করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি লেখেন 'আমি আনন্দিত যে শান্তিনিকেতন- গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দৃষ্টিভঙ্গির মূর্ত প্রতীক এবং ভারতের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য- ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হল। এটি সমস্ত ভারতীয়দের জন্য একটি গর্বের মুহূর্ত।' 

টুইট করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি লিখেছেন 'আমি খুব আনন্দিত এবং গর্বিত যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শহর শান্তিনিকেতন অবশেষে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বিশ্ব বাংলার গর্ব শান্তিনিকেতনকে কবিগুরু লালন করেছেন এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম একে সমর্থন করে গিয়েছে বাংলার মানুষ। গত ১২ বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গ সরকার শান্তিনিকেতনের পরিকাঠামো উন্নয়নে কাজ করে গিয়েছে, এখন তাকে স্বীকৃতি দিল ইউনেস্কো। যারা বাংলাকে ভালোবাসেন, রবীন্দ্রনাথ এবং তার ভ্রাতৃত্বের বার্তাকে ভালোবাসেন তাদের আমার কুর্নিশ। জয় বাংলা, গুরুদেবকে প্রণাম।' 

প্রসঙ্গত ভারতের কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তরফে শান্তিনিকেতন তথা বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়কে হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল ইউনেস্কোর কাছে। সেই আবেদনের ভিত্তিতে ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর ICOMOS-এর ৭ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখে যায়। সেসময় তারা বিশ্বভারতীর বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থান-  শান্তিনিকেতন গৃহ, উপাসনা গৃহ, ঘণ্টা তলা, কলাভবন, সঙ্গীত ভবন, রবীন্দ্রভবন, তালধ্বজ, ছাতিমতলা, গৌরপ্রাঙ্গণ প্রভৃতি ঘুরে দেখেন৷  প্রকৃতপক্ষে তাদের মতামতের উপরেই নির্ভর করে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকায় কার নাম থাকবে।  

বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ কর্মকর্তা মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'আমাদের জানা মতে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ই প্রথম কোন লিভিং বিশ্ববিদ্যালয় (সচল রয়েছে এমন কোন বিশ্ববিদ্যালয়) ইউনেস্কোর হেরিটেজ তকমা পেল। কারণ সাধারণত কোন মনুমেন্ট বা সৌধকে হেরিটেজ তকমা দেওয়া হয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই আমরা অত্যন্ত খুশি।' 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী জানান 'বিশ্বভারতীর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত প্রতিটি মানুষ তথা এবং দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে এটি একটি অত্যন্ত ভালো খবর এবং গর্বের বিষয়।' 

ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টার'এর ওয়েবসাইটে বিশ্বভারতী সম্পর্কে উল্লেখ করা হয় '১৯২১ সালে এশিয়ার প্রথম নোবেল পদক জয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। বিশ্বভারতীর অর্থ গোটা বিশ্বের সাথে ভারতের যোগাযোগ গড়ে তোলা। স্বাধীনতার আগে এটি একটি কলেজ ছিল। ১৯৫১ সালে এটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিণত হয়। বিশ্বভারতীর প্রথম উপাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর। দ্বিতীয় উপাচার্য ছিলেন নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের দাদু ক্ষীতিমোহন সেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় 'পরিদর্শক' দেশটির রাষ্ট্রপতি, 'আচার্য' হলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী এবং 'প্রধান' (রেক্টর)-এর পদ অলঙ্কৃত করে থাকেন রাজ্যটির রাজ্যপাল। 

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে হিউম্যানিটি, সোশ্যাল সায়েন্স, সায়েন্স, পারফর্মিং আর্টস, ফাইন আর্টস, মিউজিক, এডুকেশন, এগ্রিকালচারাল সায়েন্স, রুরাল কন্সট্রাকশন সহ একাধিক বিষয়ে পাঠদান করা হয়। 

দেশবিদেশ থেকে প্রচুর শিক্ষার্থী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা করতে আসেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্যতম নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন, অস্কারবিজয়ী চিত্র-পরিচালক সত্যজিৎ রায়, জয়পুরের রানী তথা কোচবিহারের রাজকন্যা গায়েত্রী দেবী, ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী প্রমুখ।

 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর