১৪ অক্টোবর, ২০২৩ ১৮:৪২

পেট্রাপোল চেকপোস্টে বারসহ ৩ কেজি স্বর্ণালঙ্কার জব্দ, গ্রেফতার ৪

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

পেট্রাপোল চেকপোস্টে বারসহ ৩ কেজি স্বর্ণালঙ্কার জব্দ, গ্রেফতার ৪

ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ উদ্ধার করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের বার, ব্রেসলেট, আংটির ওজন ৩ কেজি ১৯১.২২ গ্রাম। স্বর্ণ পাচারের অভিযোগে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পায়ুপথে এসব স্বর্ণ বাংলাদেশ থেকে ভারতে আনা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। 

 
শনিবার বিএসএফের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, 'শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) বিএসএফ'এর দক্ষিণবঙ্গ সীমান্তের অধীনে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পেট্রাপোল সুসংহত চেকপোস্টে ২৩ টি স্বর্ণের বার, ৪ টি স্বর্ণের ব্রেসলেট, ১ টি স্বর্ণের আংটি উদ্ধার করে বিএসএফ সদস্যরা। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের ওজন ৩১৯১.২২ গ্রাম। যার আনুমানিক মূল্য ১,৮৬,৭০,৭৪২ রুপি। ওই স্বর্ণের জিনিস বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার করা হচ্ছিল। এদিকে স্বর্ণ পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় ৪ বাংলাদেশি পাচারকারীকে। 

তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে সন্ধ্যা ৬.৪৫, ৭ টা ও রাত ৮টা নাগাদ তিনটি ভিন্ন ঘটনায় বাংলাদেশি যাত্রীদের কাছ থেকে এই স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। 

মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে রুটিন তল্লাশি করার সময়  পাসপোর্ট-ভিসাধারী বেলাল হোসেন, আজম খান ও মোহাম্মদ কবির নামে আগত তিন ব্যক্তির শরীরের নিচের অংশে ধাতব পদার্থের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। ওই যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা সবাই তাদের মলদ্বারে স্বর্ণের বারের উপস্থিতি স্বীকার করে। 

বেলাল হোসেন ও আজম খানের কাছ থেকে ৬ টি করে স্বর্ণের বার এবং মোহাম্মদ কবিরের কাছ থেকে ১১ টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। সেগুলো স্বচ্ছ টেপ দিয়ে মুড়িয়ে মলদ্বারে লুকিয়ে রাখা ছিল। পরে বিএসএফ তাদের আটক করে এবং স্বর্ণের বারগুলি জব্দ করে। 

চতুর্থ ঘটনায় বিকাল প্রায় ৩.৩০ এর দিকে যাত্রীদের রুটিন তল্লাশি করার সময়, সৈন্যরা লক্ষ্য করে যে জুবিদা খানম নামে এক যাত্রীর হাতে ৪ টি ব্রেসলেট অস্বাভাবিক আকারে ছিল। তল্লাশির সময় ওই নারীর কাছ থেকে বিকৃত আকারের ১ টি স্বর্ণের আংটিও পাওয়া যায়। ওই নারী যাত্রীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনও সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি এবং কোনও বৈধ নথি উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হন। পরবর্তীকালে ওই নারী যাত্রীকে আটক করা হয় এবং স্বর্ণের অলঙ্কার জব্দ করা হয়। 

বিএসএফ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত চোরাকারবারি ৪০ বছর বয়সী বেলাল হোসেনের বাসা কুমিল্লার চান্দিয়ান থানার বাতাগাশী গ্রামে, ৪৮ বছর বয়সী মোহাম্মদ কবিরের বাসা কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার নূরপুর এলাকায়, ৪৬ বছর বয়সী আজম খানের বাসা কুমিল্লার তিতাস থানার ইউসুতপুর গ্রামে অন্যদিকে ৩৩ বছর বয়সী জুবিদা খানম ঢাকার সূত্রাপুরের ভজহরি সাহা স্ট্রিট এলাকার বাসিন্দা। 

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বিলাল হোসেন কুমিল্লা এলাকায় চালকের কাজ করেন, আজম খান ও মোহাম্মদ কবির কৃষকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। জুবিদা খানম ঢাকায় তার নিজস্ব পার্লারের দোকানে বিউটিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন। 

বেলাল হোসেন গুলিস্তানে ইব্রাহিম নামে এক বাংলাদেশি ব্যক্তির কাছ থেকে ৬ টি স্বর্ণের বার সংগ্রহ করেছিলেন।  আজম খান গুলিস্তান মসজিদের কাছে ঢাকার বাসিন্দা হোনুর নামে একজন বাংলাদেশি নাগরিকের কাছ থেকে ৪ টি স্বর্ণের বার পেয়েছিলেন এবং মোহাম্মদ কবির ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকায় মোস্তফা নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১১ টি স্বর্ণের বার সংগ্রহ করেছিলেন। জুবিদা খানম ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে আমিনের কাছ থেকে ৪ পিস স্বর্ণের ব্রেসলেট এবং একটি আংটি সংগ্রহ করেন।  

চার চোরাচালানকারীকে সমস্ত স্বর্ণ পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকায় পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেখানে একজন অজানা ব্যক্তি তাদের কাছ থেকে স্বর্ণ সংগ্রহ করবে। এই স্বর্ণ পৌঁছে দেয়ার জন্য তিন পুরুষ চোরাকারবারির প্রত্যেকে ১০০০০ বাংলাদেশি টাকা এবং নারী পাচারকারী ৫০০০ বাংলাদেশি টাকা দেওয়ার কথা ছিল। 

কিন্তু ভিসা-পাসপোর্ট ধারী ওই চার বাংলাদেশি নাগরিক পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশের সময়ে মেটাল ডিটেক্টরে শরীরে অনুসন্ধান চালানোর সময়ই এই বিপুল পরিমাণ স্বর্ণের সন্ধান মেলে। আটক চোরাকারবারি ও জব্দকৃত স্বর্ণ পেট্রাপোলে শুল্ক বিভাগে হস্তান্তর করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সীমান্তে এই বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিএসএফ'এর সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি (জনসংযোগ) এ. কে আর্য। তিনি বলেন 'বড় স্তরের চোরাকারবারিরা গরিব ও নিরীহ মানুষকে অল্প অর্থের প্রলোভন দিয়ে ফাঁদে ফেলে। বড় স্তরের চোরাকারবারিরা চোরাচালানের সময় প্রত্যক্ষ রূপে জড়িত থাকে না, তারা এই কাজের জন্য গরিব মানুষকে টার্গেট করে।' 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর