শুক্রবার, ১৭ মে, ২০১৩ ০০:০০ টা

চার শহরে সরগরম রাজনীতি

চার শহরে সরগরম রাজনীতি
এক মাস সময়ও নেই চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের। প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। চলছে বাছাই। প্রার্থীদের ভোট প্রার্থনা। সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আমাদের থাকছে নিয়মিত আয়োজন। বরিশালে এককভাবে প্রার্থী দিতে পারছে না বিএনপি। দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার হস্তক্ষেপেও এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না বলে মনে করছে স্থানীয় বিএনপি। সিলেটে অনেক প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা স্কুলের মধ্যে সীমাবদ্ধ। খুলনায় কাউন্সিলর প্রার্থীদের বেশির ভাগ ব্যবসায়ী, রয়েছেন সাংবাদিকও। রাজশাহীতে গত দুই দিনে ১৬ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মানোনয়নপত্র বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদকদের পাঠানো খবর- বরিশালে বিএনপির দ্বন্দ্ব জিইয়ে রইল : বরিশাল সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে নির্বাচন করতে আগ্রহী বিএনপির তিন নেতা। গত পরশু এদের নিয়ে বৈঠক করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ওই রাতেই চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে তিন প্রার্থী আহসান হাবিব কামাল, এবায়েদুল হক চাঁন ও কামরুল আহসান শাহীনের সঙ্গে বৈঠক করেন বেগম জিয়ার প্রতিনিধি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা শেষে আহসান হাবিব কামালের পক্ষে সমর্থন দেন খন্দকার মোশাররফ। কিন্তু এতে অসন্তষ্ট হন চাঁন। ওই বৈঠকে বরিশালের এমপি মজিবর রহমান সরোয়ারও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত বেগম জিয়াকে জানানো হলে তিনি গভীর রাতে তার প্রতিনিধি ড. মোশাররফ, সরোয়ার, কামাল, চাঁন ও শাহীনকে ডেকে পাঠান। ওই সময় বেগম জিয়ার অফিস কক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন বরিশাল জেলা (দক্ষিণ) বিএনপি সাধারণ সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন। খালেদা জিয়া প্রার্থীদের কথা শোনেন এবং কামালকে সমর্থন দিয়ে তাকে সহায়তা করতে বলেন। এ সময় খালেদা জিয়া নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দেন এমপি সরোয়ারকে। বরিশাল বিএনপির একাধিক নেতা জানান, দলীয় এ সিদ্ধান্ত মানতে রাজি নন এবায়েদুল হক চাঁন। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে দাবি করেন, বিএনপি এ নির্বাচন বর্জন করেছে। তাই এ ব্যাপারে কেন্দ্রের কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁন বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের সমর্থন চাইতে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে কামালের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। মহানগর সভাপতি, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, একক প্রার্থী নির্বাচনে তিন প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিয়ে তিনি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। বৈঠকে কামাল ও চাঁন একে অপরকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন। চাঁনের মাঝে কিছুটা মান-অভিমান আছে। শাহীন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন বলে জানিয়েছেন। সিলেটে এক-তৃতীয়াংশ প্রার্থীর শিক্ষার দৌড় স্কুল পর্যন্ত! সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র জমাদানকারী এক-তৃতীয়াংশ প্রার্থী স্কুলের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। অনেকে আবার স্বশিক্ষিত ও অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন। নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীদের জমা দেওয়া হলফনামা থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। নিজেদের শিক্ষার দৌড় স্কুল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকলেও এসব প্রার্থী ডিজিটাল নগরী ও মডেল ওয়ার্ড গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, সিলেটে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমাদানকারী সাত প্রার্থীর মধ্যে বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক স্বশিক্ষিত আর সালাহ উদ্দিন লিমন তার হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন এসএসসি পরীক্ষার্থী। এ ছাড়া অন্য মেয়র প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের বদরউদ্দিন আহমদ কামরান এইচএসসি, বিএনপির সামসুজ্জামান জামান এলএলবি, নাসিম হোসাইন এমকম (প্রিলিমিনারি), আবদুল কাইয়ূম জালালী পংকী এসএসসি, জামায়াতের এহসানুল মাহবুব জুবায়ের এলএলবি পাস বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে চারজন অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন, ১৩ জন স্বশিক্ষিত, ৫৭ জন দশম শ্রেণীর মধ্যে, ২২ জন এসএসসি পাস, ২০ জন এইচএসসি পাস এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ২৯ জন। রাজশাহীতে কাউন্সিলর পদে আরও ১৬ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল : গতকাল সহকারী রিটার্নিং অফিসার জি এম মাহতাব জানান, গত দুই দিনে মোট ১৬ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে তিনজন এবং ১, ৩, ৫, ৬, ৮, ১১, ১২, ১৫, ১৯, ২১, ২৩ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে একজন করে প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া সংরক্ষিত কাউন্সিলর আসন ১ ও ৭ নম্বরে দুজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। তবে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র দাখিলকারী ছয়জনকেই বৈধ প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে প্যানেল মেয়র-১, ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবুর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। ঋণখেলাপি হওয়ায় তার ব্যাপারে এ সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। তবে ছয় মেয়র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। প্রসঙ্গত, কাউন্সিলর পদে ২৪৫ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এর মধ্যে সংরক্ষিত ৬৯ আর সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৭৬ জন রয়েছেন। খুলনায় কাউন্সিলর প্রার্থীদের বেশির ভাগ ব্যবসায়ী : খুলনায় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া কাউন্সিলর প্রার্থীদের অধিকাংশই ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার। আছেন সাংবাদিক, কৃষিজীবী, আইনজীবীও। প্রার্থীদের হলফনামা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জানা যায়, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এ পর্যন্ত বৈধ কাউন্সিলর প্রার্থী ১৮৭ জন। এর মধ্যে ৫৭ জনের পেশা ব্যবসা। ঠিকাদার আছেন ৪৪ জন। এ ছাড়া কৃষি ও মৎস্য ব্যবসায়ী আছেন ১৭ জন। দুজন বেসরকারি চাকরিজীবী। ১১ জন শিক্ষক এবং চারজন আইনজীবীও আছেন। সাংবাদিকতা পেশা দেখিয়েছেন একজন।

সর্বশেষ খবর