রবিবার, ২৩ জুন, ২০১৩ ০০:০০ টা

হেরোইন পাচারের নিরাপদ ট্রানজিট বাংলাদেশ!

গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সজাগ। মাঝেমধ্যে ধরাও পড়ছে। তার পরেও গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশের নজরদারি ফাঁকি দিয়ে নিত্যনতুন কৌশলে বাংলাদেশে হেরোইনের চালান আসছে আবার তার অনেকাংশ অন্য দেশেও চলে যাচ্ছে। বিশ্বের অন্যতম প্রধান হেরোইন উৎপাদনকারী দেশ আফগানিস্তান থেকে ভারত ও পাকিস্তান হয়ে কয়েকটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এ দেশে হেরোইন আসছে বলে গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানালেও পুরো চক্রটিকে কব্জা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ওইসব দেশ থেকে বছরে কয়েক মেট্রিক টন হেরোইন বাংলাদেশে ঢোকে। পরে তা কয়েকটি আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে পাঠানো হচ্ছে। এসব কুরিয়ারের মধ্যে ডিএইচএল, অ্যারামেঙ্, টিএনটি, ইউপিএস ও ফেডএঙ্ অন্যতম বলে জানিয়েছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। ফলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কঠোর নজরদারির পরও চোরাকারবারিরা হেরোইন পাচারের নিরাপদ ট্রানজিট হিসেবে বাংলাদেশকে ব্যবহার করছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্র জানায়, বছরে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যে পরিমাণ হেরোইন উদ্ধার করে তা বাজারে থাকা হেরোইন চালানের খুব সামান্যই। বাংলাদেশে বেশির ভাগ হেরোইনের বড় চালান ভারত ও পাকিস্তান থেকেই আসে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার উত্তরা থেকে নাইজেরিয়ার এক নাগরিকসহ চারজনকে গ্রেফতার করে র্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১ কেজি ৩০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়েছে, যার দাম প্রায় সোয়া কোটি টাকা। তারা হেরোইনগুলো বিশেষ উপায়ে ডিএইচএলের রামপুরা শাখার মাধ্যমে চীন ও নাইজেরিয়া পাঠানোর চেষ্টা করছিল। এর আগে গুলশান থানা পুলিশ পাকিস্তান থেকে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে আকাশপথে হেরোইন আনা চক্রের আকমল ও রিয়াজকে গ্রেফতার করে। রিয়াজ ও আকমল দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানি কাপড় শেরওয়ানি, লেহেঙ্গা ও বুটিকের ব্যবসার আড়ালে হেরোইনের চালান আনত। গুলশানের একটি চেকপোস্টে ৫ কোটি টাকার হেরোইনসহ তারা ধরা পড়ে। এ চক্রটি ডিএইচএলের মাধ্যমে বাংলাদেশে মাদকের চালান এনে পরে তা লন্ডনে পাঠাত বলে মাদকদ্রব্য অধিদফতর ও গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানিয়েছে।

গোয়েন্দা তথ্যমতে, ভারত ও মিয়ানমারের রুট ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আন্তর্জাতিক মাদক ব্যবসায়ী ও মাফিয়ারা বাংলাদেশ রুট বেছে নিয়েছে। ভারত ও পাকিস্তান থেকে আসা হেরোইনের চালান বাংলাদেশ হয়ে ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, জাপান, নাইজেরিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ কয়েকটি দেশে পাচার করা হয়। এ ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি সিন্ডিকেট যৌথভাবে পাচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। র্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউল আহসান জানান, প্রতি মাসে ডিএইচএলের মাধ্যমে কোটি টাকার হেরোইন, কোকেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার করা হচ্ছে। আর এ কাজে একেক সময় একেক কৌশল ব্যবহার করা হয়। ডিএইচএলে পণ্য পাঠানোর সময় পুরো প্যাকেট খুলে তা দেখে পুনরায় গ্রাহকের সামনে প্যাকেট করার নিয়ম থাকলেও মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্য থাকায় তা কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। আন্ডারওয়্যারের প্যাকেটের ভেতর বিশেষ কৌশলে মাদক বহনকারী নাইজেরিয়ার নাগরিক অনিকা গডসন বামালো র্যাবের হাতে আটক হওয়ার পর ডিএইচএলরে মাধ্যমে একাধিকবার হেরোইনের চালান করার কথা স্বীকার করেছে। আটকের পর র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে অনিকা গডসন বামালো জানায়, তৈরি পোশাক ব্যবসার আড়ালে তারা কয়েকজন ভারত ও আফগানিস্তান থেকে হেরোইন, কোকেন এনে বিভিন্ন কৌশলে প্যাকেটজাত করে ডিএইচএলের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে পাঠাত। তিনি বলেন, এসব মাদক পাচারের সঙ্গে ওইসব কুরিয়ার সার্ভিসের উচ্চপর্যায় থেকে তাদের বিভিন্ন শাখা অফিসের কর্মকর্তারাও জড়িত।

সর্বশেষ খবর