রবিবার, ২৩ জুন, ২০১৩ ০০:০০ টা

ফলাফলে প্রভাব ফেলবেন জাহাঙ্গীর

ফলাফলে প্রভাব ফেলবেন জাহাঙ্গীর
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর জয়-পরাজয় নির্ভর করছে বিদ্রোহী প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমকে ঘিরে। মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের নির্দেশে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে আজমত উল্লাহ খানের প্রচারণায় থাকবেন বলেছিলেন। কিন্তু আজমতের  প্রচারণায় তিনি নেই বরং অন্তর্ধানে। তার এ নীরবতায় রহস্যের দানা বেঁধে উঠছে। আওয়ামী লীগে চলছে হিসাব-নিকাশ। কোথায় আছেন জাহাঙ্গীর, জানেন না গাজীপুরবাসী। তার এ অন্তর্ধান ও নাটকীয়তা নির্ধারণ করতে পারে আজমতের জয়-পরাজয়।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ মুহূর্তে জাহাঙ্গীর ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি আন্তরিকভাবে প্রচারে না নামলে কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হবে আজমত উল্লাহ খানকে। তারা বলছেন, আজ থেকে আজমতের পক্ষে প্রচারকাজে অংশ নেবেন জাহাঙ্গীর। তবে জাহাঙ্গীরের কর্মী-সমর্থকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর সরে দাঁড়িয়েছেন কি না, নাকি তাকে বাধ্য করা হয়েছে, তা আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়।’ জাহাঙ্গীরের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সরে দাঁড়ানোর বিষয়টি জাহাঙ্গীর মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে তিনি সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন। তার কর্মী-সমর্থকরাও বিষয়টি ভালোভাবে নেননি। যে কারণে তিনি অন্তর্ধানে চলে গেছেন। তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন বললেও থেমে নেই তার প্রচারণা।’
গাজীপুর সিটি করপোরেশন হওয়ার সময় থেকেই জাহাঙ্গীর আলম ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রচারণা চালান এবং জনসমর্থন তৈরি করেন। প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর তিনি আনারস নিয়ে প্রচারণায় নেমে পড়েন। মঙ্গলবার টঙ্গীতে গিয়ে তিনি প্রচারণা চালানোর সময় ছাত্রলীগের সাবেক কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীরকে গাড়িতে তুলে সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করান। সেখান থেকে নেওয়া হয় তাকে গণভবনে। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু, সহসভাপতি শাহজাদা মহিউদ্দিন, বলরাম পোদ্দার, রফিকুল ইসলাম কোতোয়াল, বর্তমান সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম এ সময় উপস্থিত ছিলেন। তারা রাতে জাহাঙ্গীরকে নিয়ে সংসদ ভবনে সংসদ নেতার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে, জাহাঙ্গীর তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন বলে জানান। বৈঠকে শেষে বেরিয়ে তার ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে কথা বলেন জাহাঙ্গীর। এরপর মোবাইল ফোন বন্ধ করে গা-ঢাকা দেন তিনি। জাহাঙ্গীরের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তিনি এখন ঢাকায়ই আছেন।
এদিকে জাহাঙ্গীর আলম মাঠে না থাকলেও তার আনারস প্রতীকে চলছে প্রচারণা। টঙ্গীতে গতকালও প্রচারণা চলেছে। তার সমর্থক আবদুল আলীম, সালাউদ্দিন, রুহুল আমিন, কামাল, জজ মিয়া, আলামিন, মিজান, আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা আনারস প্রতীকের নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। ব্যাপক সাড়াও মিলছে ভোটারদের।’ টঙ্গীতে ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডে জাহাঙ্গীরের এক সমর্থক বলেন, ‘মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর সরে দাঁড়িয়েছেন কি না, নাকি বাধ্য করা হয়েছে, তা আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়।’
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা। তারা বলেছেন, তাকে (জাহাঙ্গীর) তুলে আনা হয়নি। তার সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বুঝিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা রফিকুল ইসলাম কোতোয়াল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জাহাঙ্গীরকে তুলে আনা হয়নি। তার সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সখ্য রয়েছে। তাকে বুঝিয়ে সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে সক্ষম হয়েছি। তিনি আওয়ামী লীগের আদর্শিক কর্মী হিসেবে দলের বৃহত্তর স্বার্থে সরে দাঁড়িয়ে ১৪ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাহ খানের পক্ষে কাজ করার জন্য তার নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন।’
সূত্রমতে, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ১৪ দলের প্রার্থী আজমত উল্লাহ খানের জয়-পরাজয় নির্ভর করছে জাহাঙ্গীর আলমের ওপর। জাহাঙ্গীর অন্তর্ধান থেকে বেরিয়ে আজমতের পক্ষে প্রচারণায় নামলে তার জয়ী হওয়া সহজ হবে। অন্যথায় কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে আজমতকে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, আজ থেকে ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লাহ খানের পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণায় নামবেন জাহাঙ্গীর।
এ প্রসঙ্গে গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হক গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগামীকালই জাহাঙ্গীরকে নিয়ে সব ধোঁয়াশা কেটে যাবে। আজ আমার সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি নিজ উদ্যোগে, স্বেচ্ছায় ১৪ দলের প্রার্থীর দোয়াত-কালি মার্কায় প্রচারণায় মাঠে নামবেন।’ এত দিন জাহাঙ্গীর কোথায় ছিলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তিনি অসুস্থ। তাই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। চিকিৎসা শেষে এখন বিশ্রামে আছেন। রবিবারই জাতি তার মুখ থেকে সব কথা শুনতে পারবে। আর আজমত উল্লাহ খানের পক্ষে প্রচারণায় নামবেন জাহাঙ্গীর।’
টঙ্গী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ওয়াজ উদ্দিন মিয়া গতকাল বলেন, ‘জাহাঙ্গীরের সঙ্গে আজ বেলা ১১টার দিকে কথা হয়েছে। তিনি আগামীকাল বা পরশু থেকে ১৪ দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় নামবেন। তার পক্ষের সব কর্মী-সমর্থকরা আজমত উল্লাহ খানের পক্ষে কাজ করছি। এটি আওয়ামী লীগের প্রেস্টিজ ইস্যু। শেখ হাসিনার প্রেস্টিজ। চার সিটির পরাজয়ের জবাব গাজীপুরে দেওয়া হবে। আমরা এখন ঐক্যবদ্ধ। প্রমাণ করতে চাই, আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা কমেনি।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপির ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটামের জবাব দিতে এক ঘণ্টা সময় লেগেছে। একইভাবে চারটির জবাব গাজীপুরে দেয়া হবে।’
ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার বলেন, ‘জাহাঙ্গীর এত দিন নির্বাচন করার জন্য প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তিনি ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লাহ খানকে সমর্থন দিয়ে সরে দাঁড়িয়েছেন। তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার কারণেই আÍগোপন করে আছেন। দু-এক দিনের মধ্যেই তিনি আজমত উল্লাহ খানের পক্ষে প্রচারণায় নামবেন।’ ‘জাহাঙ্গীরের সঙ্গে আপনার যোগাযোগ হয়েছে কি না’-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না। আমার যোগাযোগ অন্যদের সঙ্গে হচ্ছে।’ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বলেন, ‘জাহাঙ্গীর ভাই শিগগিরই ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় নামবেন।’

সর্বশেষ খবর