শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০১৩ ০০:০০ টা
বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং

অংশীদারিত্বের উদ্যোগের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবা পরিচালনায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করার উদ্যোগের প্রতিবাদে বিমান কর্মীরা গতকাল বিক্ষোভ করেছে। বিমান শ্রমিক লীগের সভাপতি ও সিবিএ নেতা মসিকুর রহমানের নেতৃত্বে বিমানের ৩ শতাধিক কর্মী সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বলাকা ভবন অবরুদ্ধ করে রাখে। আন্দোলনকারীদের নিবৃত্ত করতে গিয়ে দুর্ব্যবহারের শিকার হন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কেভিন স্টিল। বিমানের চেয়ারম্যান বিদেশে থাকায় দুপুরেই কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছে, বিমান প্রতিবছর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা পরিচালনা করে ৪০০ কোটি টাকা আয় করছে। কিন্তু এ খাত বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। তবে বিমান বলেছে, এটা বাস্তবায়ন হলে দেশি-বিদেশি বিমান সংস্থা ও তাদের যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। আন্তর্জাতিক, অভ্যন্তরীণ ও কার্গো সেক্টরেও সেবার মান বাড়বে। বিমানের রাজস্ব আয় বছরে ৫০০ থেকে ১ হাজার কোটি টাকা বাড়বে। জানা গেছে, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা পরিচালনায় বিশ্বের বিভিন্ন বিমান সংস্থার কাছে 'অংশীদারিত্বের' প্রস্তাব চেয়ে ২৩ জুন বিমানের ওয়েবসাইটে একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। এতে সাড়া পেলে আরএফপি (রিকোয়েস্ট ফর প্রোপোজাল) চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে। বিমান সূত্র জানায়, বিমান পরিচালনা পর্ষদ চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) জামাল উদ্দিন ও নতুন এমডি কেভিন জন স্টিল সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ে বিদেশি পার্টনার নেওয়ার অনুরোধ জানান। প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রস্তাবে সায় দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি পার্টনার নিয়োগ দেওয়ার জন্য আরএফপি আহ্বান করা হয়। আর এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সিবিএ আন্দোলন শুরু করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিমান কর্মীরা বলাকা ভবনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দেন। প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন সিবিএ নেতা মশিকুর রহমান। তিনি বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে কার্গো হ্যান্ডেলিং বিভাগকে বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার সব প্রক্রিয়া বন্ধ করা হবে। বিমানকে পঙ্গু করে দিতেই এ উদ্যোগ নিয়েছেন কেভিন। সমাবেশ স্থলে উপস্থিত হয়ে কেভিন স্টিল হ্যান্ড মাইক নিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করলে কর্মীরা এমডির বিরুদ্ধে স্লোগান দেন ও চলে যেতে বলেন। এ সময় পুলিশ আসলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন আন্দোলনকারীরা। বিমানের কয়েকজন ঊধর্্বতন কর্মকর্তা কেভিনকে নিয়ে যান। সমাবেশ শেষে নেতারা কেভিনের সঙ্গে বৈঠক করে চেয়ারম্যান দেশে না আসা পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন।

বিমান সূত্র জানায়, হযরত শাহজালালসহ দেশের সবগুলো বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং বিমান নিজেরাই করছে। কিন্তু হ্যান্ডেলিং নিয়ে দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলো বিমানের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। এ ছাড়া সিবিএ নেতারা দাবি-দাওয়া আদায়ে কথায় কথায় হ্যান্ডেলিং বন্ধ করে বিমানবন্দর অচল করে দিত। তাছাড়া ফ্লাইট উড্ডয়ন ও অবতরণের পর মালামাল লোড-আনলোড, বোডিং কার্ড ইস্যু, এয়ারক্রাফট ল্যান্ড করানো, উড়োজাহাজে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও এসি সরবরাহ, হাই লিফটার, লেডার, টো ট্রাক্টর সরবরাহ, কার্গো সার্ভিস, খাবার পরিবেশন ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে প্রায় যাত্রী ও এয়ারলাইন্সগুলোকে নানা ভোগান্তির মুখে পড়তে হতো। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও যাত্রীরা লাগেজ পেতেন না। পেলেও মালামাল লুটপাটের ঘটনা ঘটত হরহামেশা। সূত্র জানায়, গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং কাজের জন্য বিমানের কাছে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি, গাড়ি ও দক্ষ জনবল নেই। যে কারণে ২ মিনিটের কাজ করতে হতো ২ ঘণ্টায়। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মান অনুযায়ী যাত্রীরা লাগেজ এরিয়ায় আসার আগেই মালামাল বেল্টে উঠে যাওয়ার কথা থাকলেও ঘটছে বিপরীত।

সর্বশেষ খবর