শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৩ ০০:০০ টা
সোমালিয়ায় জাহাজডুবি

আতঙ্কিত স্বজনরা দুষছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে

ফোন করলেও সাড়া দিচ্ছে না জলদস্যুরা

সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে বন্দী বাংলাদেশি সাত নাবিকসহ জাহাজডুবির ঘটনায় এখনো কোনো খবর জানেন না স্বজনরা। জলদস্যুদের কাছে ফোন করলেও কোনো সাড়া মিলছে না। এখন দুঃসংবাদ শোনার 'আতঙ্কে' আছেন। কেউ কেউ আশায় বুক বেঁধে আছেন, জীবিত উদ্ধার হবে তাদের স্বজন। তাদের প্রত্যেকেই কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দোষারোপ করছেন। বলছেন, এমভি জাহান মনি উদ্ধারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উদ্যোগী হওয়াতেই মালিক পক্ষ তৎপর হয়েছিল। কিন্তু এমভি আলবেদোর মালয়েশিয়ার মালিকানাধীন জাহাজ বলে নাবিকদের উদ্ধারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। কিন্তু অন্য দেশগুলো ঠিকই তাদের নাগরিকদের উদ্ধারে ব্যবস্থা নিয়েছে।

সোমালিয়ার উপকূলে গত রবিবার ডুবে যাওয়া এমভি আলবেদোতে আটকাবস্থায় বাংলাদেশি ছিলেন গোলাম মোস্তফা (সাতক্ষীরা), আমিনুল ইসলাম (কুমিল্লা), হাবিবুর রহমান (সাতক্ষীরা), জাকির হোসাইন (চাঁদপুর), লিমন সরকার (চাঁদপুর), আবুল কাশেম সরকার (সাতক্ষীরা) ও নুরুল হক (সাতক্ষীরা)।

আমিনুল ইসলামের পিতা নুরুল ইসলাম বলেন, ইন্টারনেট থেকে জেনেছি জাহাজ ডুবে গেছে। কিন্তু এখন আমরা কোথায় কার কাছে যাব। আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তেমন কিছু জানা যায়নি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নাবিকদের উদ্ধারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা না নেওয়াতেই আমাদের এ অবস্থায় পড়তে হয়েছে। আমরা বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়নি মন্ত্রণালয়। পাকিস্তান ও মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে আমাদের দূতাবাস ও হাইকমিশনে নাবিকদের উদ্ধারে ব্যবস্থা নিতে বলেছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি মালয়েশিয়ার জাহাজ, তাদের কিছু করার নেই। তিনি প্রশ্ন রাখেন, যদি করারই কিছু না থাকে তাহলে পাকিস্তান কীভাবে তাদের নাবিককে উদ্ধার করল। চাঁদপুরের লিমনের বাবা ওয়ালিউল্লাহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুরোধ রেখে বলেন, নাবিকদের উদ্ধারে আগে কোনো ব্যবস্থা না নিলেও এখন অন্তত তাদের খোঁজখবর করুন। তাদের জীবিত হোক বা না হোক, অন্তত খোঁজখবর করুন। রাষ্ট্রের কাছে এতটুকু অধিকার তো আমাদের আছে।

স্বজনরা জানান, জাহাজডুবির খবর পাওয়ার পর জলদস্যুদের ফোনে বেশ কয়েক দফায় চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কেউ ফোন ধরেননি। বিভিন্ন সময়ে জানা গিয়েছিল, জাহাজের নাবিকরা একসঙ্গে ছিল না। দুই গ্রুপে আলাদা আলাদা ছিল। সেটিই যদি হয় তাহলে জাহাজডুবিতে সবার একসঙ্গে থাকার কথা নয়। তাদের দাবি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদি উদ্যোগী হয়ে খবর নেয়, যদি জলদস্যুদের সঙ্গে কোনো না কোনো মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাহলে নাবিকদের সর্বশেষ অবস্থা জানা সম্ভব হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে বার্তা পেয়ে ইসলামাবাদের বাংলাদেশ দূতাবাস ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছিল। দুই দফায় চিঠি দেওয়ার পরও মন্ত্রণালয় থেকে কোনো জবাব না পাওয়ায় পাকিস্তান সরকারের উদ্যোগে সাড়া দেওয়া সম্ভব হয়নি ইসলামাবাদের দূতাবাসের পক্ষ থেকে। অবশ্য পরে আটক নাবিকদের স্বজন ও গণমাধ্যমে প্রতিবেদনের পর মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার সেকশনের মহাপরিচালক লায়লা হোসেন ও অপর এক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তারা এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি সাধন করতে পারেননি।

সর্বশেষ খবর