শুক্রবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৩ ০০:০০ টা
প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা প্রস্তুতি সভা

নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগের মারপিট

নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগের মারপিট

তুমুল হট্টগোল, মারধর এবং ধ্বস্তাধ্বস্তির কবলে পড়েছিল নিউইয়র্কে শেখ হাসিনাকে সর্বজনীন সংবর্ধনা প্রদানের প্রস্তুতি সমাবেশ। ফলে তা সিদ্ধান্তহীনভাবে শেষ হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ডাকে নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে পালকি পার্টি সেন্টারে ২৮ আগস্ট সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার সকাল) মহাজোটের শরিক দল জাসদ, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদ, ইউএস কমিটি ফর সেক্যুলার ডেমোক্রেটিক বাংলাদেশ, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের যৌথ সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান এবং সঞ্চালন করেন সেক্রেটারি সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ। ড. সিদ্দিক সভাকে অবহিত করেন, 'জাতিসংঘের চলতি সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৩ সেপ্টেম্বর সকালে নিউইয়র্কে আসবেন। সে সময় জেএফকে এয়ারপোর্টে তাকে ব্যাপকভাবে অভ্যর্থনা জ্ঞাপন এবং ২৭ সেপ্টেম্বর অপরাহ্নে জাতিসংঘে ভাষণ উপস্থাপনের সময় বাইরে শান্তি সমাবেশ, ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ম্যানহাটানের হিলটন হোটেলের বলরুমে শেখ হাসিনাকে সর্বজনীন সংবর্ধনা প্রদানের কর্মসূচিকে সর্বাত্দক সফল করতে হবে।' খবর এনার।

বিভিন্ন সংগঠনের ১৮ জনের মতামত প্রকাশের পর মাইক হাতে নেন জসীমউদ্দিন মিঠু। এর পরই বিপত্তি বাধে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদিকা আইরিন পারভিন, নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এ কে এম আলমগীর এবং যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ালি হোসেন বক্তব্যরত মিঠুর প্রতি তেড়ে যান। তারা চিৎকার করে বলতে থাকেন, 'সাংগঠনিক শৃঙ্খলা লংঘনের দায়ে সম্প্রতি এই মিঠুকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সংগঠনের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বেয়াদপি করেছে। তাই তার বক্তব্য রাখার কোনো অধিকার নেই।' এ নিয়ে পুরো মিলনায়তনে তুমুল হট্টগোল ও মারধর শুরু হয়। শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হওয়া সমবেশটি মুহূর্তে জঙ্গি রূপ ধারণ করে। মহিলা এবং বয়স্করা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করেন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নজমুল ইসলামসহ কয়েকজন মিঠুকে বক্তব্য প্রদানে ক্ষুব্ধ হয়ে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগের হুমকি দেন। এক পর্যায়ে আইরিন পারভিন মিঠুর কাছ থেকে মাইক কেড়ে নেন। মারধর, ধস্তাধস্তির এ পরিস্থিতি মিনিট কয়েক স্থায়ী ছিল। পালকি পার্টি সেন্টারের মালিক হারুন ভুঁইয়া পুলিশ ডাকার হুমকি দিলে সবাই শান্ত হন। এর পর মাইক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার অভিপ্রায়ে সবাইকে জানান, দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চলতি টার্মের এটি শেষ জাতিসংঘ সফর। তাই এ সফরকে যে কোনো ত্যাগের বিনিময়ে সাফল্যমণ্ডিত করতে হবে সম্মিলিত উদ্যোগে। নিজেদের মধ্যকার ভেদাভেদ পরিহার করতে হবে। অন্যথায় জামায়াত-শিবির লাভবান হবে। এ ধরনের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ড. সিদ্দিক আরও বলেন, 'আগের মতোই সর্বজনীন সংবর্ধনা কমিটি হবে। আহ্বায়ক, সদস্য সচিব এবং প্রধান সমন্বয়কারী নিয়োগ করা হবে। সব দলের প্রতিনিধিত্ব থাকবে এ কমিটিতে।' এভাবেই উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে সভাটি শেষ হয়ে যায় সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই।

এর আগে বক্তৃতাকালে যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের সভাপতি মিসবাহ আহমেদ উল্লেখ করেন, 'বিএনপি-জামায়াত-হেফাজতের প্রবাসী সমর্থকরা ইতোমধ্যেই হুমকি দিয়েছে, তারা জেএফকে এয়ারপোর্ট, জাতিসংঘের সামনে এবং সর্বজনীন সংবর্ধনাস্থলের বাইরে তুমুল বিক্ষোভ করবেন। এ অবস্থায় যুবলীগের নেতা-কর্মীরা আগের মতোই সুশৃঙ্খলভাবে বিএনপি-জামায়াত-হেফাজতকে প্রতিহত করতে বদ্ধপরিকর।

দলীয় সভানেত্রী ও মহাজোট নেত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা প্রদানের প্রস্তুতি সমাবেশে এ ধরনের মারদাঙ্গা পরিস্থিতির সংবাদে কমিউনিটিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি, তারেক পরিষদ এবং জামায়াতের সমর্থকরা 'যেখানে হাসিনা-সেখানেই প্রতিরোধ কর্মসূচি' ঘোষণা দিয়েছে। এ অবস্থায় আওয়ামী পরিবারের ঐক্য জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার নূরনবী, যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ড. নূরন্নবী এবং যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা যুবকমান্ডের সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী। উদ্ভূত পরিস্থিতি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বার্তা সংস্থা এনাকে বলেন, জসীমউদ্দিন মিঠুর প্রাথমিক সদস্যপদ কেড়ে নেওয়া হয়নি। তাই সবার মতো তারও মতামত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। আমি সবাইকে নিয়েই সভানেত্রীর সংবর্ধনা সাফল্যমণ্ডিত করতে আগ্রহী।

 

 

 

সর্বশেষ খবর