শুক্রবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৩ ০০:০০ টা

নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করুন

খালেদা জিয়া

আসছে অধিবেশনেই সংবিধান পরিবর্তন করে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকারি দলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গতকাল রাতে গুলশান কার্যালয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, নিজেরা বাঁচতে আজীবন ক্ষমতায় টিকে থাকতেই সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। এই সংবিধানের মাধ্যমে আবারও বাকশালের রাজনীতি কায়েম করতে চায় সরকার। তাই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আগামীতে নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে না। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কঠোর ভাষায় সমালোচনা করে খালেদা জিয়া আরও বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার সম্পূর্ণ অপদার্থ। কথায় কথায় যার 'হ্যা' বলার অভ্যাস, তিনি কীভাবে নিরপেক্ষভাবে কাজ করবেন। শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েক শতাধিক ব্যক্তিবর্গ বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে আসেন। এতে সভাপতিত্ব করেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্যফ্রন্টের সভাপতি গৌতম চক্রবর্তী। 
অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গনি, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক, সাবেক মন্ত্রী নিতাই রায় চৌধুরী, সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, অর্পণা রায় ছাড়াও হিন্দু সম্প্রদায়ের আগত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
বিদেশি কূটনীতিকদের কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, বিদেশিরাও সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ নির্বাচন দেখতে চায়। আমরাও মনে করি, সমান সমান মাঠে খেলা উচিত। কারও জন্য উঁচু-নিচু, কারও জন্য সমান মাঠ থাকতে পারে না। তাই আমরা দাবি করব, যদি দেশকে ভালোবাসেন, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে চান তাহলে আসছে অধিবেশনে সংবিধান সংশোধন করে সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। জনগণ আপনাদের আবার ক্ষমতায় বসালে আমরা মেনে নেব। অন্যথায় যারা জিতবে তাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
বর্তমান সংবিধানের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। এমপিরা এমপি থাকবেন। তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন করতে হবে। এমনকি নির্বাচনে জয়ী হলেও সরকার না চাইলে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে না। আর এ সবকিছুই করা হয়েছে আজীবন ক্ষমতায় টিকে থাকতে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ তা মানবে না। তিনি বলেন, আমরা জ্বালাও-পোড়াও বিশ্বাস করি না। শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্দোলন করছি। সামনের দিনগুলোতেও আন্দোলন হবে। 
সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, ভোটার লিস্টে এক কোটি ভুয়া ভোটার থাকার অভিযোগও করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, যেভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে, সব জায়গায় আওয়ামী লীগের লোক। তাদের দলীয় নেতা-কর্মীদের হাতে অস্ত্র। সেখানে কীভাবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া নির্বাচন সম্ভব।
সাড়ে চার বছরে সরকারের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ব্যর্থতার কথাও তুলে ধরেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, এখন সর্বত্র অত্যাচার, অবিচার, জুলুম-নির্যাতন চলছে। দেশের মানুষ আজ চরম নিরাপত্তাহীনতায় জীবনযাপন করছে। কোনো ধর্মের মানুষই এই সরকারের হাতে নিরাপদ নয়। এরা হেফাজতকে ছাড়ে না। খ্রিস্টানদের ছাড়ে না। বৌদ্ধদেরও ছাড়ে না। একটা অন্যায় করার পর তা ঢাকতে আরেকটা অন্যায় করছে।
হিন্দু সম্প্রদায়কে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন ধর্মের হতে পারি। কিন্তু সবাই আমরা সংখ্যালঘু-সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে কিছু নেই। আমরা সবাই বাংলাদেশি। বিএনপি কোনো দিন কারও বাড়িঘর দখল, কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ায় বিশ্বাস করে না। 
অর্পিত সম্পত্তি আইনের কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, হিন্দুদের জমিজমা সব আওয়ামী লীগের লোকজনের দখলে। দোষ চাপাতে আওয়ামী লীগ ওস্তাদ। অন্যায় করে বিএনপির ওপর না হয়, অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়। আওয়ামী লীগের আমলে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছে বলেও দাবি করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

সর্বশেষ খবর