শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা
নির্যাতনে জ্ঞান হারাতেন বারবার

দুবাই ইরানে তিন দফা বিক্রি হন ইউনুস

দুবাই ইরানে তিন দফা বিক্রি হন ইউনুস

দুবাই ও ইরানে তিন দফা বিক্রি হয়েছিল যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার বড়খুদরা গ্রামের ইউনুস আলী (২৬)। এ চক্রগুলোর হাতে সাত মাস তিনি বন্দী ছিলেন। অমানুষিক নির্যাতন চালাত তারা। সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলতেন বার বার। নির্যাতনের সময় চিৎকারের শব্দ মোবাইল ফোনে বাড়িতে বাবা-মাকে শোনাত তারা। মুক্ত করার জন্য টাকা চাইত। নিজের কাছে থাকা সব কিছুই দিয়ে দিয়েছিলেন। মুক্ত করতে বাড়ি থেকেও কয়েক দফায় টাকা পাঠানো হয়। সব মিলিয়ে ৩ লাখ টাকারও বেশি ওই চক্রটির হাতে দেওয়া হলেও মুক্তি মিলছিল না।

গতকাল সকালে যশোর প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এভাবেই নিজের করুণ কাহিনীর বর্ণনা দিচ্ছিলেন ইউনুস। পরিবারের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোর পুলিশ ও তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতায় দুই মাস চেষ্টার পর ইউনুসকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সমর্থ হয়েছে। বুধবার দুপুরে ঢাকায় পেঁৗছার পর গতকাল তিনি সাংবাদিকদের সামনে হাজির হন। সংবাদ সম্মেলনে রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মলি্লক ও যশোরের পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র উপস্থিত ছিলেন। রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মলি্লক বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের একটি শক্তিশালী চক্র দুবাই ও ইরানে কর্মরত বাংলাদেশি সহজ-সরল শ্রমিকদের নিজেদের কব্জায় নিয়ে নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায় করছে। বাংলাদেশেও রয়েছে ওই চক্রগুলোর সদস্য। ইউনুসের পরিবারের কাছ থেকে এমন খবর পেয়ে তাকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। পুলিশ ও তেহরানে বাংলাদেশি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। একপর্যায়ে পুলিশ কুমিল্লা ও যশোর থেকে ওই চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে ইরানে ইউনুসের অবস্থান জেনে তেহরান দূতাবাসের মাধ্যমে তাকে উদ্ধারের পর দেশে আনা হয়।

ইউনুস আলীর সারা শরীরে অমানুষিক নির্যাতনের চিহ্ন। দুবাইয়ে চাকরি নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। গত বছর নভেম্বরে একটি দালাল চক্র সৌদি আরবে বেশি বেতনের লোভ দেখিয়ে তাকে পূর্ববর্তী চাকরিদাতার কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেয়। এরপর একের পর এক বিক্রি হতে থাকেন তিনি। চলতে থাকে নির্যাতন। সব চক্রেই রয়েছে বাংলাদেশি আর পাকিস্তানিরা। ইউনুস বলেন, তার মতো আরও বহু হতভাগ্য বাংলাদেশি ওদের কব্জায় রয়েছেন। চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে না পারায় অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তারা।

পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র বলেন, দুবাই ও ইরানের ওই চক্রের এ দেশীয় দুই সদস্য আটক হওয়ার পরই ইউনুসের অবস্থান জানতে পারা যায়। ইউনুসের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে ওই চক্রের আরও সদস্যকে আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে।

 

 

সর্বশেষ খবর