শিরোনাম
শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা
শুক্রবারের বিশেষ প্রতিবেদন

রোগী খুঁজছে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল

রোগী খুঁজছে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল

হাসপাতালটিতে প্রবেশের মুখেই প্রধান ফটকে টাঙানো রোগীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়সূচি। ফটক পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই সারিবদ্ধ নারিকেল গাছ, আধুনিক সাজ-সজ্জা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে চোখ জুড়ায়। রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকার হোটেল র্যাডিসনের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে অবাকই হতে হয়। কারণ রাজধানীর অন্য সাধারণ হাসপাতালগুলোর সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। এখানে নেই কোনো বিশৃঙ্খলা বা দালালচক্র। কিন্তু এত কিছুর পরও শুরুর দেড় বছরেও সাফল্যের মুখ দেখতে পায়নি হাসপাতালটি। অর্থাৎ রোগী সেবার উদ্দেশ্যে নির্মিত হাসপাতালটিতে কাঙ্ক্ষিত রোগীর দেখা মিলছে না। আর এ নিয়ে নিরাশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্টরা জানান যে, হাসপাতালে যাওয়ার ক্ষেত্রে যানবাহন সমস্যা, সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য নির্মিত হাসপাতাল হিসেবে সাধারণের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণাই রোগীদের এ হাসপাতালে না যাওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ।

ঢাকার মহাখালী, খিলক্ষেত, নিকুঞ্জ, উত্তরা, সাভার, টঙ্গী, গাজীপুর এলাকার সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ২০১২ সালের ১৩ মে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করেন। জানা যায়, রোগীরা এ হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে ওষুধ পান। ইনডোরে ভর্তি হওয়া রোগীদের বিনামূল্যে খাবারও সরবরাহ করা হয়। রোগীদের বসার জন্য আছে থরে থরে সাজানো আধুনিক চেয়ার। এসব সুযোগ-সুবিধা পেতে নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত উভয় শ্রেণীর রোগীদের এখানে এসে সেবা নেওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। হাসপাতালে রোগীর ভিড় খুব কম। গতকাল হাসপাতালে গিয়ে খুব কম সংখ্যক রোগীর উপস্থিতি দেখা যায়। হাসপাতাল এলাকা বলা যায় সুনসান। এ কারণেই ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকার কথা থাকলেও দুপুর ২টার পরই জরুরি ছাড়া অন্য রোগীদের এখানে আর দেখা যায় না। জানা যায়, পর্যাপ্ত রোগীর অভাবে হাসপাতালের কোনো কোনো যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন হাসপাতালের অবস্থানের কারণে রোগীরা এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন না। কারণ এটি সেনানিবাস ঘেঁষে অবস্থিত। অনেকের ভ্রান্ত ধারণা এটি সামরিক বাহিনীর জন্য নির্মিত। এ ছাড়া ভিআইপি রোডে স্থাপিত হওয়ায় সাধারণ পরিবহন যেমন রিকশা নিয়ে এখানে রোগীদের পক্ষে আসা সম্ভব নয়। অন্যদিকে হাসপাতালের কাছাকাছি নেই কোনো বাসস্ট্যান্ড। আর সিএনজি বা ট্যাাঙ্কি্যাব যোগে সব রোগীর পক্ষে এখানে আসা সম্ভব নয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, অন্য সরকারি হাসপাতালের মতো এখানে মাত্র ১০ টাকা মূল্যের টিকিট কেটে (বহির্বিভাগে) ব্যবস্থাপত্রসহ বিনামূল্যে ওষুধ প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। আর অন্তঃবিভাগে টিকিটের মূল্য ১৫ টাকা। ১২ তলা বিশিষ্ট হাসপাতালটির শয্যা সংখ্যা ৫০০টি। কিন্তু বর্তমানে বহির্বিভাগে মাত্র ৯৫টি শয্যা চালু আছে। শীঘ্রই এটি ২০০ শয্যায় উন্নত করার কাজ চলছে। এখানে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য মোট ৮টি ওয়ার্ড চালু আছে। এ ছাড়া বহির্বিভাগ ও অন্তঃবিভাগে মেডিসিন, সার্জারি, অর্থোপেডিক সার্জারি, শিশু, গাইনি, চক্ষু, নাক-কান-গলা, চর্ম ও যৌনরোগ, মানসিক রোগ, ডেন্টাল, ইউরোলজি, নেফ্রোলজি মিলিয়ে মোট ১১টি বিভাগ চালু আছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, এখন পর্যন্ত মোট ২৮০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যার ৮০ জন চিকিৎসক। ৭০ জন নার্স। অন্যরা বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারী। এ ছাড়া সংযুক্তিতে হাসপাতালে ৫০ জন সেনাবাহিনীর লোকজন দায়িত্ব পালন করছেন। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিরউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, রোগীর সংখ্যা বাড়াতে আমরা প্রচার চালিয়েছি। কিন্তু তারপরও কাঙ্ক্ষিত রোগী পাচ্ছি না। সাধারণত দরিদ্রদের কথা ভেবে এ হাসপাতালটি তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু যানবাহন সহজলভ্য না হওয়ায় অনেকেই এখানে আসতে পারছেন না। তাছাড়া সেনানিবাসের অভ্যন্তরে অবস্থানের কারণে অনেকেরই ধারণা এটি আর্মিদের হাসপাতাল। এতে ভয়ে অনেকে এখানে আসতে চান না। শীঘ্রই হাসপাতালের প্রধান ফটকের পাশে একটি বাস স্ট্যান্ড নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া সরকারের স্বাস্থ্যবিভাগকে এ ব্যাপারে প্রচারণা চালানোর জন্যেও বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পর্যাপ্ত জনবল পেলেই হাসপাতালের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করা যাবে। জানা যায় এখানে আছে অগি্নদগ্ধ রোগীদের জন্য বার্ন ইউনিট। শীঘ্রই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট থেকে এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে বার্ন ইউনিটের কার্যক্রম শুরু করা হবে।

 

 

সর্বশেষ খবর