শিরোনাম
শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা

সংসদ নির্বাচনে নিরাপত্তার ছক কষছে ইসি

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চোরাগোপ্তা হামলা, পলিটিক্যাল কিলিং ও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা মাথায় রেখে সংসদ নির্বাচনে নিরাপত্তার ছক তৈরি করছে নির্বাচন কমিশন। এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাসী গ্রেফতার জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এরই মধ্যে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসী গ্রেফতার শুরু হয়েছে। সামনে সাঁড়াশি অভিযান চলবে।

বৈঠক সূত্র জানায়, বিরোধী দলের 'সহিংস' আন্দোলন নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে। তবে ভোটারদের মনে স্বস্তি আনতে নির্বাচন কমিশন অন্তত ১৫ দিন মাঠে সেনাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করে দৃশ্যমান করতে চায়। ইসি কর্মকর্তারা জানান, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর তৃতীয় সপ্তাহ থেকেই তাদের মাঠে রাখার পরিকল্পনা করছে। সশস্ত্র বাহিনীর শীতকালীন মহড়াকে বিবেচনায় এনে ছক থাকবে মোতায়েনের। এ সময় রিটার্নিং কর্মকর্তার নির্দেশনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য সদস্যরাও থাকবে টহলে। এরই মধ্যে হাজারখানেক নির্বাহী হাকিম ও বিচারিক হাকিম নিয়োজিত হবেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধান ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিয়ে আরেক দফা বৈঠক করে 'টাইমফ্রেম' নির্ধারণ করা হবে বলে জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে বিরোধী দলের অবরোধ, হরতালের মুখে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেন সিইসি। এ সভায় চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি, কোস্টগার্ড, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই), স্পেশাল ব্রাঞ্চ, ডিজিএফআই, র্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। ইসির পরিকল্পনার বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, এবার নির্বাচনী এলাকায় ১৫ দিন সেনা মোতায়েন রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ভোটের পর দিন পর্যন্ত তাদের নিয়োজিত রাখতে চাই আমরা। তবে প্রার্থীদের অভয় দিতে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ হওয়ার পর তথা ২ ডিসেম্বরের পর সেনা মোতায়েন করা গেলে ভালো হবে বলে মত দিয়েছেন একজন নির্বাচন কমিশনার।

উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, সভায় সিইসি সব দলের অংশগ্রহণের বিষয়ে এখনো আশাবাদ ব্যক্ত করেন। নির্বাচন করার বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কথাও তুলে ধরেন তিনি। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান সিইসি। বৈঠক সূত্র জানায়, সিইসি বলেছেন, অন্য সময়ের তুলনায় দৃশ্যপট ভিন্ন, ঝুঁকি বেশি। ভোটাররা আতঙ্কিত হলে কেন্দ্রে আসবে না। এবার আগের তুলনায় আরও আগে থেকে আর্মি থাকা দরকার হবে। নির্বাচনী পরিবেশ তৈরিতে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করার বিষয়ে তাগিদ দেন কাজী রকিব। নাশকতা ও চোরাগোপ্তা হামলা দমনে বিষয়টিও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসী ও অবৈধ অস্ত্র কন্ট্রোলে না রাখতে পারলে সমস্যা হবে। এ ক্ষেত্রে সমন্বয় করে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত শীতকালীন মহড়ার তথ্য তুলে ধরে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ সভায় জানায়, নির্বাচন একটি উৎসবমুখর বিষয়। নির্বাচনে সব রকমের সহযোগিতা করা হবে। সশস্ত্র বাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। ভোটাররা নির্ভয়ে ভোট দিয়ে বাড়ি চলে যাবে। সেনা মোতায়েনের ধরন তুলে ধরে বলা হয়, প্রাথমিকভাবে জেলা পর্যায়ে, পরবর্তীতে প্রোপোজাল অনুযায়ী হবে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা পাব এ বিষয়ে। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কো-অর্ডিনেশন করে কাজ করতে হবে।

পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রিটার্নিং কর্মকর্তার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হবে। অস্ত্র উদ্ধার শুরু হয়েছে, যা আরও জোরদার করা হবে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার শঙ্কা তুলে ধরে র্যাব জানায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা শুধু রাস্তায় নয়, পাড়া-মহল্লায় টহল দেবে। আট-দশটি সেন্টারের জন্য একটি করে মোবাইল টিম রাখতে হবে। নির্বাচন কমিশনের মাঠপর্যায়ের কার্যালয় ও নির্বাচন সামগ্রীর নিরাপত্তা জোরদারের বিষয় তুলে ধরে নির্বাচন কমিশন সচিব সভায় জানান, কর্মকর্তারা যাতে ফ্রাস্টেটেড না হয় সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুমতি ও পোস্টার অপসারণ : এদিকে বিদেশি পর্যবেক্ষক, সাংবাদিক ও দোভাষীদের ভিসাসংক্রান্ত কাজ দ্রুত শেষ করতে তথ্য, স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন সিইসি। খুব শীঘ্রই বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।

পরে সাংবাদিকদের সিইসি জানান, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে [বৃহস্পতিবার মধ্যরাত] আগাম প্রচারণামূলক পোস্টার-বিলবোর্ড সরিয়ে না ফেললে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার সহায়তায় তা সরিয়ে নেওয়া হবে। তবে এ ব্যয়ভার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির, যাদের নামে প্রচারণা করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর