শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা
সফল মানুষ

প্রতিবন্ধী চুমকির সফলতার গল্প

প্রতিবন্ধী চুমকি রানী হালদার অভাবকে পদদলিত করে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছেন। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার দীঘি গ্রামে হতদরিদ্র এক জেলে পরিবারে তার জন্ম। পিতা মৃত চাঁনমোহন হালদার। ৬ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও এখন তিনি কারও ওপর নির্ভরশীল নন। বরং তার আয়ের ওপর পরিবারের অনেকে ভরসা করছেন। জন্মের মাত্র তিন বছর বয়সে চুমকি টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হলে সঠিক চিকিৎসার অভাবে চিরতরে পঙ্গু হয়ে যান। তার শারীরিক গঠন ঠিক থাকলেও দুটি পা সম্পূর্ণ বিকল হয়ে পড়ে। চুমকি পরিবারের বোঝা হয়ে প্রকৃতির নিয়মে বড় হতে থাকেন। এর মধ্যে বড় বোন ও ছোট বোনের বিয়ে হয়ে যায়। তিনি নিজেকে বড়ই অসহায় মনে করতে থাকেন। পৃথিবীটা তার কাছে দুঃসহ হয়ে ওঠে। মন বেশি খারাপ হলে বাড়ির পাশে রাস্তায় বসে নিজের করুণ অবস্থার কথা ভাবতে থাকেন। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করেন একটি এনজিওর পরিচালক এন্তাজ আলী মাঝে মধ্যে তাকে রাস্তার পাশে বসে থাকতে দেখেন। একদিন তিনি চুমকিকে হাতের কাজ শিখে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখান। তার কথা শুনে চুমকির মনে স্বপ্ন জাগে, বেঁচে থাকার জন্য তিনি মনোবল ফিরে পান।

মনোযোগ দিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই তিনি টেইলারিং কাজ শিখে ফেলেন। বাড়িতে বসে তৈরি করছেন সেলোয়ার কামিজ, ব্লাউজ, পেটিকোর্টসহ মহিলাদের বিভিন্ন রকম পোশাক। এলাকায় সুস্থ-সবল আরও অনেক লোক এই পেশার সঙ্গে জড়িত থাকলেও চুমকির কাজের মান ভালো হওয়ায় তার কাছে লোকজন বেশি কাজ দেয়। অল্প সময়ের মধ্যেই তার কাজের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

সরেজমিন দেখা যায়, তিনি কাজে খুব মনোযোগী। কাজের ফাঁকে তিনি কথা বলেন, হাতের কাজ বন্ধ করেন না। চুমকি সাহসিকতার সঙ্গে বলেন, আমি প্রতিবন্ধী নই, প্রতিবন্ধী তারাই যারা সুস্থ থাকার পরও কাজ করে না, তারা মানসিক প্রতিবন্ধী। আমার মনের শক্তি ও কাজ করে খাওয়ার মনোবল দেখে ২০১১ সালে সুস্থ-সবল কর্মঠ পরিতোষ হালদার আমাকে বিয়ে করেন। এখন আমি স্বামী-সংসার নিয়ে ভালো আছি। আমার স্বপ্ন এলাকায় অনেক প্রতিবন্ধী রয়েছে যারা পরিবারের বোঝা। আমি তাদের জন্য একটি ছোট আকারের গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠা করব যাতে প্রতিবন্ধীরা সেখানে কাজ করে অন্তত বেঁচে থাকতে পারবে।

সর্বশেষ খবর