সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা
বিপাকে ইংলাক

থাইল্যান্ডেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন

থাইল্যান্ডেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন

থাইল্যান্ডে এখন চলছে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন। মেয়াদের অর্ধেক সময়ে এসে বেশ বিপাকেই পড়েছেন এদেশের সুন্দরী প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা। গত কয়েক দিনে থাইল্যান্ডের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে অবশ্য কোথাও আন্দোলনের উত্তাপ পাওয়া গেল না। আন্দোলন হচ্ছে নগরকেন্দ্রের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায়। আন্দোলনের নামে কোথাও রাস্তা বন্ধ নেই। জ্বালাও-পোড়াও নেই, সহিংসতা নেই। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে শুরু হওয়া চলতি আন্দোলনের শুরুতে অবশ্য প্রধানমন্ত্রী ইংলাক বলেছিলেন তিনি কোনো অন্যায় দাবি মেনে আগাম নির্বাচন দেবেন না। অবশ্য গত দুই সপ্তাহে সরকারের মনোভাবে পরিবর্তন এসেছে। গত ৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে ২ ফেব্রুয়ারি আগাম নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন। কিন্তু স্থানীয়রা বলেছেন, সরকারবিরোধী প্রতিবাদ থামাতে পদক্ষেপ নেওয়ায় অনেক দেরি হয়ে গেছে। এই দেরি হওয়ার মাঝেই সরকারবিরোধীদের আন্দোলনের তীব্রতা বেড়েছে। এখন তারা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে একটি নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দাবি করছে। প্রতিবাদকারীদের প্রধান নেতা সুথেপ থাউগসুবান বলেছেন, শুধু সংসদ বিলুপ্ত করাই যথেষ্ট নয়। এবারের আন্দোলনের মূলে হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী ইংলাকের একটি বিতর্কিত পদক্ষেপ। অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী ইংলাকের নির্বাসিত ভাই ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিনকে সাধারণ ক্ষমা দেওয়ার জন্য পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে একটি বিল পাসের পর থেকেই সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে বিরোধিতার মুখে উচ্চকক্ষে বিলটি প্রত্যাখ্যাত হলেও আন্দোলন থেমে থাকেনি। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, ইংলাক সিনাওয়াত্রার ওপর তার ভাই সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

চলতি সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাইল্যান্ডের সশস্ত্র বাহিনী প্রধানমন্ত্রী ইংলাকের পক্ষে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তারা বলেছেন, সরকার ও বিরোধী দলের এই পরস্পরবিরোধী অবস্থানে এবার তারা ক্ষমতা নেবেন না। অবশ্য থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা ও প্রভাব দীর্ঘদিনের। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্য মিলিয়ে থাই সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এখন ৮ লাখ। তাদের সংবিধান অনুযায়ী সশস্ত্র বাহিনীকে সহায়তা দেওয়া প্রতিটি থাই নাগরিকের কর্তব্য। ২১ ঊধর্্ব পুরুষ নাগরিকদের আর্মি রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে ছয় মাসের ফুলটাইম প্রশিক্ষণ নেওয়া বাধ্যতামূলক। কর্মঠ থাই নারী পুরুষের সবাই বাইরে কাজ করে। আন্দামান সাগরসংলগ্ন থাইল্যান্ড সমুদ্র সম্পদ আহরণের এক বিস্তৃত চারণভূমি। থাইল্যান্ডের প্রায় সর্বত্র শত শত পর্যটন স্পট বানিয়েছে তারা সমুদ্রের তীর ঘেঁষে। সমুদ্র থেকে তারা প্রচুর পরিমাণ মাছ সংগ্রহ করে। থাইল্যান্ডের জেলেরা বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় গিয়েও প্রচুর পরিমাণ মাছ ধরে নিয়ে আসে। প্রায় ৬ কোটি ৭০ লাখ মানুষের এই দেশটির মূল আয়তন বাংলাদেশের প্রায় চারগুণ, এক লাখ ৯৪ হাজার ১১৫ বর্গমাইল। মানুষের ঘনত্ব প্রতি মাইলে ৩৪২ জন। হালকা বসতির এই দেশটিতে পর্যটন জাতীয় আয়ের গুরুত্বপূর্ণ খাত হলেও রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে চাল, টেঙ্টাইল, ফুটওয়্যার, ফিশারি প্রোডাক্টস, রাবার, জুয়েলারি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানুষের পকেট থেকে ডলার কীভাবে হাতিয়ে নিতে হয় সেটা ভালো করেই জানে থাই নারীরা। রাস্তার পাশে হাজার হাজার দোকান সাজিয়ে বসে থাকে তারা। জায়গায় জায়গায় সাদা ইউরোপিয়ানদের দেখলাম থাই নারীদের দিয়ে পা পরিষ্কার করাচ্ছে। গা ম্যাসেজ করাচ্ছে। চুল ডেকোরেশন করছে, দাঁতের উজ্জ্বল্য বাড়াচ্ছে। কোনো কিছুতেই যেন না নেই তাদের।

 

 

সর্বশেষ খবর