বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৪ ০০:০০ টা
রাজনৈতিক সহিংসতা

নৃশংসতার শিকার হচ্ছে নারী ও শিশু

দেশে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার বলি হচ্ছে অবুঝ শিশুরা। এ থেকে বাদ যাচ্ছেন না পেশাজীবী ও সাধারণ নারীরাও। দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রলবোমায় একদিকে মারাত্দক আহত হচ্ছেন নারীরা, অন্যদিকে বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখা ককটেল ও বোমায় ঝলসে যাচ্ছে বহু শিশু। সহিংসতায় ঝরে যাচ্ছে মনির, মোস্তাফিজসহ বহু শিশুর প্রাণ। রাজনৈতিক সহিংসতার বলি হয়ে গত কয়েক দিনে ঢাকা মেডিকেল ও দেশের বিভিন্ন জেলার বার্ন ইউনিটে আগুনে পুড়ে ভর্তি হয়েছে অর্ধশতাধিক নারী ও শিশু। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় পোশাক কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাজ হারাচ্ছেন নারী শ্রমিক। অন্যদিকে বারবার পাবলিক পরীক্ষাগুলো পিছিয়ে যাওয়ায় এবং দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অগি্নসংযোগ হওয়ায় বছরের শুরুতেই বিপাকে পড়েছে কোমলমতি শিশু ও তাদের অভিভাবকরা। গত ১০ নভেম্বর সন্ধ্যায় শ্যামলীতে দুর্বৃত্তদের ছুড়ে দেওয়া পেট্রলবোমায় গুরুতর আহত হয় লেগুনা পরিবহনের হেলপার মিলন (১৩)। ২০ নভেম্বর ঢাকার শাহীনবাগে অবস্থিত সিভিল এভিয়েশন স্টাফ কোয়ার্টারে কুড়িয়ে পাওয়া হাতবোমায় লোকমান ও তোফাজ্জল নামের দুই শিশু গুরুতর আহত হয়। ৫ নভেম্বর চট্টগ্রামের আমবাগান ঝাউতলা এলাকায় ৯ বছরের শিশু সুরমা ও লাল মিয়া হাতবোমার বিস্ফোরণে আহত হয়। একইভাবে কুড়িয়ে পাওয়া বোমা ও গাড়িতে দেওয়া পেট্রলবোমায় গত কয়েক মাসে প্রায় ৫০ শিশু মারাত্দক দগ্ধ হয়। এ ব্যাপারে বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক পরিচালক সামন্ত লাল সেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে সহিংসতার শিকার ভর্তিকৃত রোগীর ৯০ জনের মধ্যে ৩০ জনই নারী ও শিশু। এ পর্যন্ত ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার বার্ন ইউনিটে সহিংসতার শিকার অর্ধশতাধিকের বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে। আমার ৪০ বছরের পেশাগত জীবনে এমন আর দেখিনি। তিনি আরও বলেন, পেট্রলবোমা ও ককটেলে ঝলসে যাওয়া নারী-শিশুদের ক্ষত ভয়াবহ। বিশেষ করে শিশুদের শারীরিক ক্ষতি শুকিয়ে যাওয়ার পরও মানসিক ক্ষতি সেরে উঠতে দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চিকিৎসা প্রয়োজন। তাছাড়া এ শিশুরা জীবনে আর স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারে না। অন্যদিকে পুরুষরা আগুনে পোড়ার ক্ষতি দ্রুত সারিয়ে উঠতে পারলেও নারীরা তা পারে না। আর আগুনে দগ্ধদের অধিকাংশ নিম্নবিত্তের হওয়ায় তাদের সবার পক্ষে চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয়। এ কারণে তিনি এ রোগীদের জন্য সরকারি-বেসরকারিভাবে পুনর্বাসনের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে বলেন। অন্যদিকে হরতাল-অবরোধে দেশের গৃহিণী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশাজীবী নারীরা বিপদে পড়েছেন। কথা হলে এক আইনজীবী নারী জানান, গত দুই-তিন মাসে রাজনৈতিক কারণে তার ক্লায়েন্ট একেবারেই কমে গেছে। এ নারীর সঙ্গে সুর মেলান মিরপুর এলাকার এক বিউটিশিয়ান মিতা। তিনি বলেন, 'হরতাল-অবরোধে কিছু দিন ধরে আমার বিউটি পার্লারে গ্রাহক সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। এখন কর্মীদের বেতন, দোকান ভাড়া কীভাবে জোগাড় করব তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি।' এদিকে চলমান অবস্থায় পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত ৩৫ লাখ শ্রমিকের ৮০ ভাগ নারী শ্রমিক বিপদে পড়েছেন। তারা প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজে যাচ্ছেন। তাছাড়া ক্রেতারা চলমান পরিস্থিতিতে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় বিভিন্ন কারখানায় চলছে কর্মী ছাঁটাই। বন্ধ হয়ে পড়ছে কারখানা। আর এর শিকার হচ্ছেন নারী শ্রমিকরা। বাংলাদেশ মানবাধিকার সংস্থার নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে নারীরা বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ জন্য এলিনা খান দেশের সব রাজনৈতিক দলকে অনতিবিলম্বে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সহিংসতা বন্ধ করে সংলাপে বসার জন্য আহ্বান জানান। এদিকে রাজনৈতিক কারণে গত কয়েক মাসে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অনাগত দিনগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। গত কয়েক মাসে একে একে পাবলিক পরীক্ষা পিছিয়ে পড়া ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অগি্নসংযোগ করার ঘটনায় কোমলমতি শিশু ও তাদের অভিভাবকরা বেশ উদ্বিগ্ন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানান, হরতালের সহিংসতায় সারা দেশের ৫৩১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়। পোড়ানো হয় শিক্ষার্থীদের বই-পুস্তক, টেবিল ও আসবাবপত্র। দিনের পর দিন জেএসসি, পিএসসি ও এসএসসিসহ অন্য পাবলিক পরীক্ষা পেছানো হয়। তিনি চলমান ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, এর সঙ্গে জড়িত সবার শাস্তি দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর