রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৪ ০০:০০ টা

ক্লাস হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে

পাঁচ শতাধিক প্রতিষ্ঠানে নির্বাচনী সহিংসতা

ক্লাস হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচন বিরোধীরা প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর দরজা, জানালা, বেঞ্চ, চেয়ার, টেবিলসহ নানা রকমের শিক্ষা উপকরণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এখনো অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মেরামত বা নতুন করে তৈরি করা সম্ভব হয়নি। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। অনেক বিদ্যালয়ে এখনো ঠিকভাবে পাঠদান করাতে পারছেন না শিক্ষকরা। ক্ষতির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষাকার্যক্রম চালাতে অসুবিধা হলেও জোড়াতালি দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে হচ্ছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
গাইবান্ধা : সংসদ নির্বাচনের আগের দিন ৪ জানুয়ারি এবং নির্বাচনের দিন ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বিরোধীরা জেলায় ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত ১১১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটায়। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর দরজা, জানালা, বেঞ্চ, চেয়ার টেবিলসহ নানা রকমের শিক্ষা উপকরণ পুড়ে যায়। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ কোটি টাকা। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এবং শিক্ষা অফিস জানায়, জেলার ৮৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২১টি উচ্চ বিদ্যালয়, ২টি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ১টি মহিলা কলেজ এবং ৪টি মাদ্রাসায় নির্বাচন বিরোধীরা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও আগুন দেয়। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর দরজা, জানালা, বেঞ্চ, চেয়ার টেবিলসহ নানা রকমের শিক্ষা উপকরণ পুড়ে যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সদরে ৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৫টি উচ্চবিদ্যালয়, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ২৫টি প্রাথমিক ও ৬টি উচ্চবিদ্যালয়, ৩টি মাদ্রাসা এবং ১টি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, পলাশবাড়ী উপজেলায় ১৯টি প্রাথমিক ও ২টি উচ্চবিদ্যালয় এবং ১টি মহিলা কলেজ, সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ১৭টি প্রাথমিক, ৫টি উচ্চবিদ্যালয়, সাদুল্যাপুর উপজেলায় ১৬টি প্রাথমিক, ৩টি উচ্চবিদ্যালয়, ১টি মাদ্রাসা ও ১টি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর আর্থিক ক্ষতি ৮৪ লাখ ২৮ হাজার ১০০ টাকা এবং জেলা শিক্ষা অফিস, উচ্চবিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসার ক্ষতি ২৫ লাখ ৮৭ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে।
পলাশবাড়ী উপজেলার বিশ্রামগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাঠের বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ছোট শিমুলতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তিনটিতে নির্বাচনের আগের দিন রাতে নির্বাচন বিরোধীরা ভাঙচুরসহ পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে বিদ্যালয় ভবনসহ চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চ ও আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ফলে প্রতিটি বিদ্যালয়ের দুই থেকে আড়াইশ শিক্ষার্থীকে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে হচ্ছে। উপস্থিতির হারও কমে গেছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এ কে এম আমিরুল ইসলাম ও জেলা শিক্ষা অফিসার মো. আজাহার আলী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষতির পরিমাণসহ ভবন ও ক্লাসরুম তৈরির বিষয় উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ক্ষতির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষাকার্যক্রম চালাতে অসুবিধা হলেও জোড়াতালি দিয়ে চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। দিনাজপুর : নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের দিন ৮ উপজেলার ৯৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিএনপি-জামায়াতের দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগ করেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় কোটি টাকা। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর মতো পরিবেশ ও সুযোগ না থাকায় হাজার হাজার শিক্ষার্থী চরম সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৯৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করায় প্রায় ৮২ লাখ টাকার আসবাবপত্র, শিক্ষা উপকরণ ও অন্যান্য সামগ্রীর ক্ষতিসাধন হয়েছে। চিরিরবন্দর উপজেলায় ২৩ বিদ্যালয়ের ১৪ লাখ ২৬ হাজার টাকা, বীরগঞ্জের ২২টি বিদ্যালয়ের ২০ লাখ ৩৩ হাজার, খানসামার ২১টি বিদ্যালয়ের ১৩ লাখ ৬৪ হাজার, পার্বতীপুরের ১৫টি বিদ্যালয়ের ৯ লাখ ৭২ হাজার, সদরের ৭টি বিদ্যালয়ের ৯ লাখ ৩৯ হাজার, ঘোড়াঘাটের ৭টি বিদ্যালয়ের ১০ লাখ, নবাবগঞ্জের ২টি বিদ্যালয়ের সাড়ে ৩ লাখ এবং কাহারোল উপজেলার ২টি বিদ্যালয়ের ১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। জেলা শিক্ষা প্রাথমিক অফিসার মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগের ফলে এসব বিদ্যালয়ে আগামী ১ মাসেও পুরোদমে পাঠদান শুরু করা সম্ভব হবে না। তবে বিকল্প উপায়ে আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। লক্ষ্মীপুর : বিএনপি-জামায়াতের সহিংস ঘটনায় রামগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। ফলে একদিকে যেমন ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম অন্যদিকে নতুন বই পেয়েও পড়ালেখা শুরু করতে না পারায় উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় রয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। উপজেলা অফিস সূত্রে জানা যায়, রামগঞ্জে ভোটের আগের দিন রাতে ও ভোটের দিন কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অগি্নসংযোগ, ভাঙচুর ও আশপাশের কয়েকটি দোকানপাট লুট করে তাণ্ডব চালিয়েছে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা। রামগঞ্জ উপজেলার শ্রীরামপুর উচ্চবিদ্যালয়ে হামলা চালিয়ে অগি্নসংযোগ করে অফিসের আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়, এ সময় শতাধিক সেট নতুন বই পুড়ে যায়। কালিকাপুর রসূলপুর, দরবেশপুর, জয়পুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে দরজা জানালা ভাঙচুর করা হয়। কোমরতলা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগুন দিলে কনস্টেবল ইমাম উদ্দীন মারাত্মক দগ্ধ হয়। ইছাপুর ইউনিয়নের নুনিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে একটি মাইক্রোবাস পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। মাছিমপুর উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে পুলিশ ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালিয়ে ভাঙচুর চালায় জামায়াত-শিবির। সোন্দড়া, উত্তর হরিশ্চর, পানিয়ালা, হোসনাবাদ, রাঘবপুর, কাওয়ালীডাঙ্গা, নিচহরা, নোয়াগাঁও-১, নোয়াগাঁও-২, নারায়ণপুর ভোটকেন্দ্রে অগি্নসংযোগ ও ভাঙচুরের চেষ্টা চালানো হয়। এতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান শিক্ষকরা। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে উপস্থিত হচ্ছে না বলে কয়েকজন অভিভাবক উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় রয়েছেন জানিয়ে বলেন, যেখানে বছরের শুরুতে নতুন বই হাতে আনন্দে পড়া লেখায় ব্যস্ত থাকতেন কোমলমতি শিশুরা, তারা এখন স্কুলে যেতে ভয় পায়। শ্রীরামপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলীপ কুমার পাল জানান, অগি্নসংযোগ, অফিসের আসবাবপত্র, দরজা-জানালা ও বেঞ্চ ভাঙচুরের ঘটনায় প্রায় ৩ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দফতরে জানানো হলেও সহযোগিতা পাননি বলে জানান। নাশকতার কারণে পাঠদান অব্যাহত থাকলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম। কুমিল্লা : কুমিল্লায় নাশকতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভোট গ্রহণের আগের দিন রাতে দুর্বৃত্তদের হামলায় ওই বিদ্যালয়গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিভিন্ন স্কুলে ঘুরে দেখা গেছে, বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখনো ঠিকভাবে পাঠদান করতে পারছেন না শিক্ষকরা। মনোহরগঞ্জ উপজেলার বাদুয়াড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিনয়ঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভোগই (উত্তর) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভোগই (দক্ষিণ) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাটরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাউপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড় চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নিশ্চিন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফেনুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লাকসাম উপজেলার ধামৈচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাতাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আতাকরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শালিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চিকোনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাশাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কোমার ডোগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাদুয়াড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রতন চন্দ্র মজুমদার জানান, আগুনে ৮ জোড়া বেঞ্চ ও একটি বৈদ্যুতিক পাখা পুড়ে যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর