সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগ নেতাদের গ্যাস বাণিজ্য

আওয়ামী লীগ নেতাদের গ্যাস বাণিজ্য

এবার মাটির নিচ দিয়ে নয়, গাছের উপর দিয়ে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে! নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় শত শত বাসা-বাড়িতে ঝুঁকিপূর্ণ এ গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়। তাও আবার অবৈধ। এ অবৈধ সংযোগ পাইয়ে দিতে কাজ করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও গ্যাস অফিসের লোকজন। প্রথমে সোনারগাঁ উপজেলার বৈদ্যের বাজার থেকে এ গ্যাস লাইন দেওয়া শুরু হয়। এখন সংযোগ দেওয়ার কাজ চলছে উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়ন ও সম্ভুপুরায়। জানা যায়, গত ১০ মে সোনারগাঁ পৌরসভায় একটি রেস্তোরাঁয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা একত্রিত হয়ে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য একটি শক্তিশালী চক্র গঠন করেন। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ১০-১২ হাজার বাসা-বাড়িতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আর এ জন্য প্রতি গ্রাহকের কাছ থেকে গড়ে ৫০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। এদিকে, অবৈধ গ্যাস সংযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন ১০ হাজার গ্রাহক। তাদের কাছ থেকেও সমপরিমাণ টাকা নেওয়া হয়েছে। সংযোগপ্রাপ্ত গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতিমাসে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। সরেজমিন দেখা গেছে, কোনো প্রকার অনুমোদন ছাড়াই কাটা হচ্ছে রাস্তা। বসানো হচ্ছে গ্যাসের পাইপ। কোথাও কোথাও আবার গাছের উপর দিয়ে গ্যাসের পাইপ নেওয়া হচ্ছে। বিদ্যুতের তারের মতো গাছপালার ওপর দিয়েও নিম্নমানের পাইপ দিয়ে গ্যাস সরবরাহ ও সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ গ্যাসলাইন নিয়ে অনেকে আতঙ্কে রয়েছেন। এর তদারকি করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী। গ্যাস সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে আবার কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এক একটি কমিটিকে এলাকা ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। আর এ অবৈধ কাজের নেপথ্য নেতৃত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আবদুল্লাহ আল কায়সার। এ বিষয়ে তিনি বলেন, তিতাসের অনুমতি নিয়ে নেতা-কর্মীরা গ্যাস সংযোগ দিচ্ছেন। জানা গেছে, ২০১২ সালের শেষ দিকে জাহাঙ্গীর হোসেন তিতাসের ঠিকাদার দাবি করে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়া শুরু করেন। এ ব্যাপারে গ্রাহকরা কোনো কথা বলতে চাননি। ইতোমধ্যে, সোনারগাঁ উপজেলার বারদী ও শম্ভুপুরা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম বাদে উপজেলার প্রায় সব গ্রামে অবৈধ গ্যাসের পাইপ চলে গেছে এবং পাইপ বসানোর কাজ চলছে। প্রায় তিন হাজার সংযোগ দেওয়া হয়েছে সাদীপুর ইউনিয়নে। সনমান্দী ও পিরোজপুরে প্রায় দুই হাজার, জামপুরে এক হাজার, বৈদ্যের বাজারে ৯০০, কাঁচপুরে ৮০০, নোয়াগাঁওয়ে ৭০০, শম্ভুপুরায় ৬০০ ও মোগড়াপাড়া ইউনিয়নের প্রায় ৫০০ বাড়িতে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সোনারগাঁ পৌরসভায় ৬০০-৭০০ বাড়িতে অবৈধ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে প্রায় ১২ হাজার গ্রাহককে গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে। দলীয় নেতা-কর্মীদের সমন্বয়ে কাজটি করা হয়েছে। সংযোগ দেওয়া সব গ্রাহককে তিতাস বৈধ করে নেবে বলে তিতাস কর্মকর্তারা কথা দিয়েছেন। তিতাসের স্থানীয় ব্যবস্থাপক আবু জাফর সুলতান আহম্মেদ বলেন, তিতাস গ্যাস সংযোগের কোনো অনুমতি নেই। যুবলীগ কর্মী আলী হোসেন বলেন, তিতাসের কর্মকর্তাদের গ্রাহক প্রতি ১৬ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, সনমান্দি ইউনিয়নসহ সোনারগাঁ পৌরসভার কিছু অংশে অবৈধ সংযোগ দেয় আওয়ামী লীগ নেতা বাড়িমজলিশ গ্রামের করিম আহাম্মেদ, সোনারগাঁ মোগড়াপাড়া ও শম্ভুপুরা ইউনিয়নে জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সোহাগ রনি, পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোশাররফ হোসেন, মঙ্গলেরগাঁও গ্রামের ইউপি সদস্য মজিবুর রহমান, ভাটিবন্দরের করিম, আফজল ভবনাথপুর, রতনপুর ও ভাটিবন্দর গ্রামে এলজিইডির সড়ক কেটে লাইন নিয়ে দুই হাজার ২০০ বাড়িতে সংযোগ দেন। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ওই রাস্তা কাটার পর তার বিরুদ্ধে সোনারগাঁ থানায় জিডি করে এলজিইডি। এখন ওই সব গ্রাহকের কাছ থেকে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে বিল আদায় করছেন মোশাররফ। কাঁচপুর ইউনিয়নের বেহাকৈর, নয়াপাড়া, কলিয়া ভিটা, ভূঁইয়াপাড়া গ্রামে সংযোগ দেয় আওয়ামী লীগ কর্মী বাবু ওমর। সাবেক এমপি আবদুল্লাহ আল কায়সারের নির্দেশে ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় অবৈধ সংযোগের ব্যবসা শুরু হয়। সাদীপুর, জামপুর, নোয়াগাঁও ও বারদী ইউনিয়নে এ কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আজিমুদ্দিন, সাদীপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ও জামপুর ইউপির সদস্য হুমায়ুন কবির, সনমান্দী ইউনিয়নে উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি আমিনুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা নুরু মিয়া, জিলানী, মাসুদসহ ১০ জন।

 

 

সর্বশেষ খবর