সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ০০:০০ টা

বাবুলকে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ডিসি অফিস ঘেরাও

বাবুলকে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ডিসি অফিস ঘেরাও

তিন যুগ ধরে নারদ নদে বিষাক্ত ও দূষিত বর্জ্য ফেলা এবং অসংখ্য অলি-আউলিয়া, ফকির, দরবেশ, গাউছ, কুতুবের পুণ্যভূমি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের বাংলাদেশে যমুনা গ্রুপের মদ, বিয়ার তথা হারাম পানীয় উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও অবৈধভাবে রেক্টিফাইড স্পিরিট বিক্রয়ের প্রতিবাদে এবং দেশের ১০টি জেলায় মাদক ট্র্যাজেডির ঘটনায় ৬০০ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এসব ঘটনায় জড়িত বিতর্কিত শিল্পপতি মদ ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বাবুলের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে নারদ বাঁচাও আন্দোলনের ব্যানারে গতকাল দুপুরে শহরের মাদ্রাসা মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নাটোরের জেলা প্রশাসক অফিস ঘেরাও, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করা হয়। গতকাল দুপুরে শহরের মাদ্রাসা মোড় থেকে নারদ নদের দুই পাশের শহরের শত শত নারী ও পুরুষ সমবেত হয়ে ব্যানারসহকারে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নাটোরের জেলা প্রশাসক অফিস ঘেরাও করে মানববন্ধন কর্মসূচি শুরু করে। মানববন্ধন চলাকালে নারদ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি ও বিশিষ্ট সমাজসেবী মঞ্জুরুল মোর্শেদ লুলুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন আবদুল কাইয়ুম, জাকির হোসেন জাক্কু, আলহাজ আবু হানিফ মামুন, সাইফুল ইসলাম, মাসুদ রানা মাসুম, শহিদুল ইসলাম বাচ্চু, আবুল হোসেন, মোশারফ হোসেন মুসা, রফিকুল ইসলাম খোকন, জানে আলম শাহীন ও মাসুদ রানা মাসুম। প্রতিবাদ সভা শেষে তিন যুগের বেশি সময় ধরে নাটোরের ঐতিহ্যবাহী নারদ নদ দূষণের কারণে শহরবাসী আজ বুকভরে নিঃশ্বাসও নিতে পারে না। দূষিত বর্জ্যের উৎকট গন্ধে মানুষের জীবন আজ ওষ্ঠাগত। দিনে মশা রাতে মাছি, এ নিয়ে আছি নাটোরবাসী। নারদ নদের পানিতে যুমনা ডিস্টিলারিজের দূষিত ও বিষাক্ত বর্জ্য ফেলার কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছ ও জীববৈচিত্র্য অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। নাটোরে অবস্থিত নাটোর চিনিকল আখের উচ্ছিষ্ট অংশ ও চিটাগুড় পানিতে ফেলে এবং প্রাণ কোম্পানি ট্রিটফেট প্ল্যান্ট স্থাপনের মাধ্যমে বর্জ্য শোধন করে নদীতে ফেলে, যা মানুষ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়। কিন্তু যমুনা ডিস্টিলারিজ কোম্পানির অতিমাত্রায় ক্ষতিকর বর্জ্য ফেলার ফলে প্রতিবছর শুধু টিন বা গ্রিল পাল্টাতে হচ্ছে না, মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে দুরারোগ্য ব্যাধি। এই দূষণের প্রতিবাদে এর আগে অনেকবার আন্দোলন গড়ে উঠলেও টাকার কাছে অনেকেই বিক্রি হয়ে গেছে। তাই আর কোনো আপস নয়, জীবন বাঁচাতে যমুনা ডিস্টিলারির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বিষাক্ত স্পিরিট সরবরাহের মাধ্যমে দেশে ৬০০ মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত বাবুলের জিম্মিদশা থেকে নারদ নদের ৪০ কি.মি. এলাকায় বসবাসরত লাখ লাখ মানুষকে বাঁচাতে আন্দোলন চলছে এবং চলবে। রক্তারা আরও বলেন, যমুনা ডিস্টিলারিজ কোম্পানি অতিমাত্রায় ক্ষতিকর বর্জ্য ফেলায় বছরের পর বছর আমাদের শুধু টিন বা গ্রিল পাল্টাতে হচ্ছে না, চুলকানি, ঘা, পাচড়া, ডায়রিয়া, আমাশয়সহ মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে দুরারোগ্য ব্যাধি। যমুনা ডিস্টিলারিজ লিমিটেড কারখানার দূষণ সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। নারদ নদের দুই পাড়ে ৪০ কিলোমিটারে বসবাসরত কয়েক লাখ মানুষ কার্যত জিম্মি হয়ে পড়েছে এই কোম্পানির কাছে। বছরের পর বছর মুখ বুজেই সইতে হচ্ছে মারাত্দক ক্ষতির ও তেজস্ক্রিয় পদার্থের প্রভাব। সরকার যায় সরকার আসে কিন্তু এই নাটোরবাসী যমুনার দূষণ থেকে রক্ষা পায় না। প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা মুনাফা করার পরও বর্জ্য শোধনের কোনো ব্যবস্থা করে না বিতর্কিত শিল্পপতি নুরুল ইসলাম বাবুলের মালিকানাধীন কোম্পানিটি। নাটোরবাসীর প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। নিজেদের লাভ ছাড়া তারা নাটোরবাসীর মানবিক বিপর্যয় বা ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে চিন্তিত নয়। দূষণের প্রতিবাদে এর আগে অনেকবার আন্দোলন গড়ে উঠলেও টাকার কাছে অনেকেই বিক্রি হয়ে গেছে। অনেকে আবার প্রভাবশালী মহলের ভয়ে আন্দোলনের শুরুতে এসে থমকে গেছে। তাই আর কোনো আপস নয়, জীবন বাঁচাতে আমাদের নারদ নদকে বাঁচাতে হবে। দেশে সংঘটিত ১০ টি মাদক ট্র্যাজেডির ঘটনায় যমুনার স্পিরিট খেয়ে ছয় শতাধিক মানুষ বেঘোরে প্রাণ হারিয়েছেন। যমুনা গ্রুপের এই স্পিরিট সেবন করে গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, গাজীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঢাকাসহ ১০টি জেলায় এত মানুষের মৃত্যুকে গণহত্যা বললে ভুল হবে না। ট্র্যাজেডির শিকার পরিবারগুলো ক্ষতিপূরণ না পেলেও যমুনা গ্রুপ হাজার হাজার টাকা লেনদেনের মাধ্যমে মাদক ট্র্যাজেডির ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়েছে। আমরা গণহত্যাকারী গডফাদার বাবুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।

 

 

সর্বশেষ খবর